নিউজ ডেস্ক

২৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০২:৪১

দৃশ্যপটে আছেন ফালু

গত ছয় বছরে বিএনপির কোনো সভা-সমাবেশে দেখা মেলেনি তার। বিএনপি চেয়ারপারসনের আশেপাশেও দেখা যায়নি দীর্ঘদিন। বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়লেও একটি দিন দেখতে যাননি তিনি। কিন্তু প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর দৃশ্যপটে এলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু।
 
মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে কোকোর মরদেহ আনা হলে এক বেদনাবিধুর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন বেগম জিয়াসহ স্বজনরা। নেতাকর্মীরাও আটকে রাখতে পারেননি চোখের পানি। তখন কফিনের পাশে বসে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফালুকেও কাঁদতে দেখা যায়।
 
হঠাৎ ফালুর প্রকাশ্যে আসা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘এতদিন যারা গ্রেপ্তার, হয়রানির ভয়ে বিএনপি নেত্রীর খোঁজটুকু রাখেননি তাদের অনেকেই কোকোর মৃত্যুতে মায়া কান্না করছেন। তাদের আবেগের চেয়ে স্বার্থই বড়। যখন বুঝতে পেরেছেন এই পরিস্থিতিতে পুলিশ হয়তো কিছুটা নমনীয় তাই সুযোগ বুঝে সামনে চলে এসেছেন। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মী তো দেখেছে কারা দুর্দিনে বেগম জিয়ার পাশে ছিলেন, আর কারা ছিলেন না।’
 
তবে দলে ফালুর অনুগামী-অনুসারীদের দাবি, প্রকাশ্যে আসতে না পারলেও বিভিন্নভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের পাশেই ছিলেন তিনি। সরকার ‘অহেতুক’ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে যে হয়রানি করেছে এবং এখনও করছে সেটা এড়াতে কিছুটা কৌশলে পথ চলেছেন। কিন্তু তাই বলে বেগম জিয়ার দুঃসময়ে তিনি খবর নেননি এটা ঠিক নয়।
 
খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাকে ছায়ার মতো ঘিরে থাকতেন মোসাদ্দেক আলী ফালু।  স্রেফ এই সুবাদেই কোনোরকম রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকা সত্ত্বেও সরকার ও দলে ব্যাপক ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন ফালু। রাতারাতি বিপুল বিত্তের মালিক বনে যান। টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্রের মালিক তো বটেই রিয়েল  এস্টেট, শেয়ারবাজার, বিমা, সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে পাঁচ তারকা হোটেলসহ বিভিন্ন খাতেও অঢেল বিনিয়োগ করেন। অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে।
 
গুলশান, বারিধারাসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় গড়ে তোলেন একাধিক অট্টালিকা। সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা জমির মালিক বনে যান রাতারাতি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব, পরে রমনা-তেজগাঁও থেকে উপ-নির্বাচনে সাংসদও নির্বাচিত হন। ১/১১’র পর মোসাদ্দেক আলী ফালুকে করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। বিস্ময়কর হলো, গত ছয় বছরে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি তাকে। অথচ বেসরকারি টেলিভিশন মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যথারীতি উপস্থিত থেকেছেন। নিজের টিভি চ্যানেল দেশের বাইরে অনুষ্ঠান করলে সেখানেও সগৌরবে ফালুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অথচ টানা প্রায় ১৫ দিন বেগম জিয়া গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়ে পড়লেও দেখা মেলেনি তার।   
 
 
 
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত