নিউজ ডেস্ক

১৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ০২:২১

হবিগঞ্জে পইলের ২’শ বছরের পুরোনো মাছ মেলা

হবিগঞ্জের হাওর এলাকার দেশীয় মাছ দেখতে হলে পইলের মাছ মেলায় যেতে হয়। এখানে বিক্রেতারা বোয়াল, আইড়, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, বাউস, টাকি, পুটি, মাগুড়সহ শতাধিক প্রজাতির মাছ উঠেছে।

ছবিঃ দৈনিক উত্তরপূর্ব

 হবিগঞ্জের হাওর এলাকার দেশীয় মাছ দেখতে হলে পইলের মাছ মেলায় যেতে হয়। এখানে বিক্রেতারা বোয়াল, আইড়, পাবদা, রুই, কাতল, চিতল, বাউস, টাকি, পুটি, মাগুড়সহ শতাধিক প্রজাতির মাছ উঠেছে। এসব অবলোকলন করলে যে কারো মনে আনন্দ জাগবে। তাই দলে দলে লোক জন অবরোধ-হরতাল উপেক্ষা করে মেলা সমবেত হতে দেখা যায়।  যদিও হবিগঞ্জে হাওর,পাহাড় ও শহর এলাকায় হিন্দুধর্মালম্বী ও আদিবাসীরা নিচ্ছে পৌষ সংক্রান্তি পালন করছে।

এদিকে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল এলাকার তিন দিনব্যাপী বসেছে দেশীয় মাছ মেলা। এ মাছ হবিগঞ্জের হাওর থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি’র জন্য নিয়ে আসা হয়। মুলত মেলা প্রতি বছরের পৌষ সংক্রান্তির দিন। তারপরও মেলা’র পূর্ব ও পরের দিনসহ তিনদিনব্যাপী এ মাছ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে প্রায় দুইশত বছরেরও বেশী সময়কাল হতে। জানা যায়, এ বছরের পৌষ সংক্রান্তি ১৫ জানুয়ারি। এদিনই পুরো মেলা জমে উঠে। এর পূর্ব ও পরে আরো দুইদিন মেলা চলে। তবে এ মেলায় হাজার লোক সমাগম হয় পৌষ সংক্রান্তির দিন।

এতে মিলনমেলায় পরিনত হয়। এ যেন এক প্রাণের উৎসব। ২’শ বছরের অধিক পুরোনো এ মেলায় বিশেষত্ব হলো মাছের মেলা।  এ মেলায়  হবিগঞ্জ ছাড়াও মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এমনকি ঢাকা থেকেও হাজার হাজার হতে এক সময় লাখো মানুষের সমাগম ঘটে।  মেলায় আলাপকালে বিক্রেতা মোঃ ফজলু মিয়া বলেন- এবার বড় আকারের দুইটি বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছি। এগুলোর মূল্য হাঁকছি ৪০ হাজার টাকা। আব্দুস শহিদ জানান- হাওর থেকে জীবিত বোয়াল ও আইড় মাছ এনেছি।

বিক্রির জন্য বসে আছি। ক্রেতারা এসে দাম জেনে নিচ্ছেন। সম্রাট মিয়া বলেন- রুই মাছ নিয়ে এসে ৩০ হাজার টাকা মূল্য চাচ্ছি। জাকির হোসেন বললেন- জীবিত আইড় মাছ নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। এমনভাবে শত শত বিক্রেতা মাছ নিয়ে এসেছেন এ মেলায়।   মাছের মেলা উপলক্ষ্যে কৃষিজাত পণ্য, শিশু-কিশোরদের খেলনা, দেশীয় ফার্নিচার, তৈজসপত্র, সব্জি ও ফল, শীতকালীন পোষাক, মিষ্টান্নসহ কমপক্ষে সহস্রাধিক স্টল নিয়ে জমে উঠে। মেলার কয়েকদিন পূর্ব থেকেই দোকানীরা বসার জন্য জায়গা প্রস্তুত করেন। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও বাগ্মীনেতা বিপীন পালের জন্ম। আর তার সময়কাল অর্থাৎ ২শ বছরের অধিক সময়ের পূর্বে পইল গ্রামে পৌষ সংক্রান্তিতে দেশীয় মাছের মেলার প্রচলন শুরু হয়। পৌষ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় পইল ইউনিয়ন পরিষদ। প্রতি বছরের মতো এবারও পইল গ্রামের ঈদগাহের পাশে বসেছে মাছের মেলা।

মেলায় হবিগঞ্জের হাওর এলাকার দেশীয় নানা প্রজাতির কেমিকেলমুক্ত মাছ উঠেছে। এছাড়াও  মেলায় বি-বাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট ও কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকে জেলেরা বড় বড় মাছ বিক্রি করতে আসেন। মেলায় এবার বাঘাইর, রুই, কাতলা, ঘাগট, বোয়াল, চিতল, কারফু, কালবাউস, ঘাসকার্পসহ নানা জাতের মাছ এসেছে। আর চিংড়ি, পুটি, কই, চিতল, চাপিলাসহ ইত্যাদি দেশীয় মাছের প্রদর্শনী ছিল লক্ষ্যণীয়। মেলায় পইল গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী কদর আলী ২০ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ নিয়ে এসেছেন।
এ মাছের মেলা উপলক্ষে স্টলে ছিল শিশু-কিশোরদের উপচে পড়া ভীড় শুরু হচ্ছে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের ছিল নানা আয়োজন।

মেলায় হবিগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের ভীড়ের জন্য কয়েক মাইল দূরে যানবাহন রেখে দর্শনার্থীদের আসতে হয়। তবে প্রথম দিন ভীড় তেমন না হলেও পৌষ সংক্রান্তির দিন মেলায় হাজার লোকের সমাগম হয়। এ ব্যাপারে মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি পইল ইউপির চেয়ারম্যান সাহেব আলী বলেন, যদিও সংক্রান্তির দিন মেলা বসে। কিন্ত মেলার পূর্ব ও পরের দিন মিলে মেলা গড়ায় তিনদিনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মেলায় লোকজন নির্বিঘেœ আসার সুযোগ করা হয়েছে। 

কোনো সমস্যা হবে না।  কমিটি জানায়, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ মেলাটি এলাকার সাধারণ মানুষের একটি প্রাণের উৎসব। আবার কবে আসবে এ মেলাটি এ প্রত্যাশাই থাকে সকলের। শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত হলেও পইল গ্রামের সাথে আরো উন্নত যোগাযোগ গড়ে তোলার দাবি স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন- হবিগঞ্জের হাওরের কেমিকেলমুক্ত মাছ এ মেলায় উঠছে। লোকজন সাদরে এসব মাছ ক্রয় করে নিচ্ছে। তার সাথে নতুন প্রজন্মরা এখানে আসছে। তারা মেলায় দেশীয় মাছ অবলোকন করে মুগ্ধ হচ্ছে। 


আপনার মন্তব্য

আলোচিত