জুয়েল রাজ,লন্ডন

০১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১১:০৭

উদীচী’র ইঁদারা মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে লন্ডনে শেষ হল ‘সিজন অব বাংলা ড্রামা’

বাঙালির হাজার বছরের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নিজেদের কৃষ্টি,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিলেতে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে প্রতি বছর টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল আয়োজন করে মাসব্যাপী সিজন অব বাংলা ড্রামা। ২৯শে নভেম্বর রবিবার উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী যুক্তরাজ্য সংসদের ৮ম প্রযোজনা নাটক ‘ইঁদারা’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিলেতে বাংলা নাটকের সবচেয়ে বড় উৎসব সিজন অব বাংলা ড্রামার ১৩তম আসর।

উৎসবের শেষ দিন বৈরী আবহাওয়া মাড়িয়ে ব্রাডি আর্ট সেন্টার মিলনায়তন পূর্ণ করে তুলেন ভিন্ন ভাষাভাষীর নাট্য প্রাণ দর্শক। চল্লিশের দশকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার  ঘুণধরা বৈষম্য পূর্ণ সমাজের চিত্র নিয়ে নাট্যকার মান্নার হীরার  অনবদ্য সৃষ্টি ইঁদারা । অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও সেই একই সমাজ, একই সুবিধাভোগী মানুষ এবং সেই ধর্মীয় বিভাজন টুঁটি চেপে ধরে আছে বিশ্ব মানবতার। বিশ্বজুড়ে ধর্মীয় আগ্রাসনে বিপন্ন আজ মানবতা। অবিশ্বাস্য ভাবে এই আধুনিক বিশ্বেও মানুষের পরিচিতির মূল আধার হয় তার ধর্ম, বর্ণ অথবা প্রতিপত্তি। ধর্ম বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বাদ যায়না নিষ্পাপ শিশুও। উগ্র ধর্মান্ধ মানুষদেরও  মাঝে রক্তের হোলি খেলা নিয়েই ইঁদারা। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন উজ্জ্বল দাশ ।



নাটকটিতে অভিনয় করেছেন উজ্জ্বল দাশ, নুরুল  ইসলাম,অসীম চক্রবর্তী, জুয়েল রাজ,  ফিরোজ আলী, নজরুল ইসলাম, সামসুদ্দীন, শাহ রাসেল, মুসলেহ জাহিন এনামুল, প্রশান্ত দাশ সুশান্ত সহ আরও অনেকে। শাগুফতা শারমিন তানিয়ার পোশাক পরিকল্পনা ও মঞ্চ সজ্জা আর প্রযোজনাটির সমন্বয়কারী ছিলেন অসীম চক্রবর্তী।  

নাট্য উৎসবের সমাপনী পর্বে আয়োজন সহযোগিসহ উপস্থিত দর্শকদের সাধুবাদ পায় উদীচী’র নাটক বিভাগ। প্রশংসা কুড়ায় সময়োপযোগী এমন গল্প মঞ্চায়নের জন্য।
দর্শকদের সাথে মঞ্চায়ন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় নাটকটির নির্দেশক উজ্জ্বল দাশ বলেন, ধর্ম বর্ণ নিয়ে বৈষম্যহীন পৃথিবী চায় শান্তিকামী মানুষ অন্যদিকে উগ্র ধর্মান্ধগোষ্ঠি বিভেদের দেয়াল তৈরিতে মত্ত।  চারপাশে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটলেও আমাদেও মানস চৈতন্যের বিকাশ ঘটেনি। ইঁদারার প্রেক্ষাপট আর আজকের পৃথিবীর ফারাক কোথায়!

লন্ডন বাংলাদেশ হাই কমিশন এর প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদির তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন , নাটকটি আমাকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে আমার বাবাকে যখন পাকিস্তানীরা ধরে নিয়ে যায় সেদিন আমার মাকে প্রথম প্রশ্ন করেছিল হিন্দু না মুসলমান? সেই একই অবস্থা থেকে আমরা এখনো বের হয়ে আসতে পারিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত