জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য

১৪ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:৫৯

জাতিসংঘের উচিত বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের পাশে দাঁড়ানো : আইসিএসএফ

জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই-কমিশন (“হাই কমিশন) এর পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ দ্বারা মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্তকৃত যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী এবং মীর কাশেম আলীর দণ্ডাদেশের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেওয়া বিবৃতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)।

গত ৮ এপ্রিল ২০১৬ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে এ বিবৃতি দেয়।

হাই-কমিশনের এই বিভ্রান্তিকর বিবৃতিটিতে দাবি করা হয় – এই দুই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে নাকি জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের সনদ (আইসিসিপিআর)-এ বিধৃত বিচারের মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি। হাই-কমিশনের এই দাবীটি সত্য নয়, কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ এবং ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধিই অনুসরণ করা হয়েছে এই দুই অপরাধীর ক্ষেত্রে, যা কার্যত আইসিসিপিআর-এ বিধৃত কথিত সে মানদণ্ডেরই প্রতিফলন। হাই-কমিশনের বিবৃতিতে ‘সকল পরিস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধাবস্থান’ ব্যক্ত করা হয়েছে, এমনকি ‘বিচারের সর্বোচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়ে থাকলেও’। জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই-কমিশন এর এই কথিত অবস্থান শুধু অসত্য ও বিভ্রান্তিকরই নয়, তা জাতিসংঘের নিজেরই বিধৃত মানবাধিকার আইনের সাথেই অসঙ্গতিপূর্ণ। কারণ, আইসিসিপিআর এর অনুচ্ছেদ ৬(২)-তে এর ঠিক বিপরীত অবস্থানই ব্যক্ত করা রয়েছে।

আইসিএসএফ মনে করে জাতিসংঘের উচিত সর্বতোভাবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই বিচার প্রক্রিয়ার পাশে দাঁড়ানো। কারণ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধগুলোকে ঘিরে চার দশকের যে বিচারহীনতা তার মোকাবিলায় বর্তমান পৃথিবীতে এই ট্রাইব্যুনালই একমাত্র বিচার প্রক্রিয়া।

সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আইসিএসএফ এটাও মনে করিয়ে দিতে চায় যে – ১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের স্থানীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী-রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা মিলে ভয়াবহ আন্তর্জাতিক অপরাধে লিপ্ত ছিল স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে – তখন এই জাতিসংঘ ছিল নীরব এবং নিষ্ক্রিয়। এর পর চার দশকেও অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার লক্ষ্যে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়নি জাতিসংঘের দিক থেকে। অবশেষে যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হল, এমনকি তখনও পাকিস্তানের অনৈতিক লবিং এর কাছে নতি স্বীকার করে জাতিসংঘ বাংলাদেশের এই বিচার প্রক্রিয়াকে শুধু পরিত্যাগই করেনি, সব ধরণের কারিগরি ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানেরও বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে আন্তর্জাতিক এই সংগঠনটি। উল্লেখ্য, এর সবই ঘটেছে ট্রাইব্যুনালে এমনকি প্রথম মামলাটিও শুরু হওয়ার অনেক আগেই।

তাই আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই-কমিশনকে আহ্বান জানানো হচ্ছে তাদের এই আপত্তিকর বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য। সেই সাথে আহ্বান জানানো হচ্ছে এই বিচার প্রক্রিয়াকে সহায়তাকল্পে জাতিসংঘ যেন বাংলাদেশের সরকার, ট্রাইব্যুনাল, এবং ১৯৭১ এর ভিকটিমদের পক্ষে সক্রিয় নাগরিক সংগঠনগুলোর (যেমন: আইসিএসএফ) সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করে – যাতে করে পলাতক অপরাধীদেরও (যেমন: পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী) বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়। আইসিএসএফ মনে করে এটি জাতিসংঘের নৈতিক এবং আইনগত দায়িত্ব এবং ম্যানডেটেরই অংশ।

সবশেষে, আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে জাতিসংঘকে আহ্বান জানানো হচ্ছে – প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের গণহত্যাকে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে গত শতাব্দীর ভয়াবহ গণহত্যাগুলোর তালিকায় তা যেন আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, এবং সে অনুযায়ী বিচারকার্যে সহায়তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আইসিএসএফ এর সদস্য রায়হান রশিদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এই দাবী জানানো হয়। উল্লেখ্য বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার বাস্তবায়নে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ভাবে কাজ করছে সংগঠনটি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত