মাহমুদুল হাসান রুবেল

০৫ মার্চ, ২০১৫ ১৯:৩০

বহুমাত্রিক সৃজনশীলতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত মন্ট্রিয়ল গ্রন্থমেলা

ঢাকার গ্রন্থমেলার মতো ধূলো-বালি না থাকলেও ছিলো শুভ্র তুষার। ২১ শে ফেব্রুয়ারি মন্ট্রিয়লের বিরূপ আবহাওয়া স্বত্ত্বেও সারাদিনব্যাপী আসা যাওয়ার মধ্যে ছিলেন বইপ্রেমিকরা। ‘আমরা মন্ট্রিয়লবাসী’র উদ্যোগে আয়োজিত এবারের গ্রন্থমেলা বহুমাত্রিক সৃজনশীলতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত রেখে মন্ট্রিয়লবাসীদের মধ্যে প্রত্যাশার পারদ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

গ্রন্থমেলাকে বলা হয় প্রাণের মেলা। ‘আমরা মন্ট্রিয়লবাসী’ মন্ট্রিয়লের গ্রন্থমেলাকে প্রাণের মেলায় রূপান্তর করতে মূল মঞ্চের কোন অনুষ্ঠানই ঝুলিয়ে দেয়নি। সে সাথে স্টলদাতাদের উপর কোন রকম আরোপিত নির্দেশনা ছিলো না। নিজেদের মনের মাধুরি মিশিয়ে স্টল সাজিয়েছেন তারা। স্টলেও ছিলো ভিন্ন মাত্রা। ঢাকার দিব্যপ্রকাশ ও আমার প্রকাশনী, পরাগ পাতা, জসিম মল্লিক ও হাসিব মোঃ আব্দুলের বই স্টল, কবি সহিদ রাহমানের সিডি ও বই এর স্টল, মিডিয়া স্টলের মধ্যে ছিলো সাপ্তাহিক ভোরের আলো, সাপ্তাহিক দেশের আলো, সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ এর স্টল। বিশেষায়িত দুইটি স্টল সবার নজর কাড়ে। একটি চিত্রশিল্পী আরিফুর রহমানের চিত্রকর্মের স্টল এবং অন্যটি আসাহীর চিত্রকর্মের স্টল। মূলত ‘রঙ তুলিতে প্রবাস প্রজন্মে’ নামে প্রথমবারের মতো আসাহীর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী হয় এ গ্রন্থমেলায়।

আরো দুইটি স্টলের কথা না বললেই নয়, ২৫ পদের পিঠা নিয়ে খাবারের স্টল এবং নজরুল আলম শানুর সৌজন্যে টিম হর্টন্স এর কফি স্টল। ধূমায়িত কফি ছাড়া বাঙালির আড্ডা জমে না আর সাথে যদি বাড়তি হিসেবে থাকে নানা পদের শীতের পিঠা তাহলে তো আর কথাই নেই। আর তাই তো গ্রন্থমেলার শেষ হওয়ার এক ঘন্টা আগেই সব পিঠা আর কফি শেষ। বই বিক্রয়ও ভালো হয়েছে। কেবল দিব্যপ্রকাশ এবং আমার প্রকাশনী মোট ১৪৭৫ ডলারের বই বিক্রি করেছে বলে জানা যায়।  আর তাই নতুন উদ্যোমে এ বছরই কাজ শুরু হয়ে গেছে আগামী বছরের গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠানের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ। আগামী বছর আয়োজকদের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ১০ টার মতো প্রকাশনী সংস্থা অংশ নিবে। 

জনপ্রিয় উপস্থাপক সাংবাদিক দেওয়ান মনিরুজ্জামানের উপস্থাপনায় মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান শুরু হয় দিব্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত অলোক চৌধুরী কংকনের কাব্যগ্রন্থ ‘গণজাগরণ’ এর মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ড. শোয়েব সাঈদ। তারপর শুরু হয় একুশের বিশেষ সেমিনার। এ সেমিনারে জ্ঞানগর্ব বক্তব্য রাখেন ড. শোয়েব সাঈদ, ড. কুদরত-ই-খোদা এবং ড. রোমানা নাহিদ সোবহান। পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গনে চিত্রশিল্পী আরিফুর রহমানের তত্ত্বাবধানে দুইটি গ্রুপে বাংলাদেশ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। নির্ধারিত বিষয়বস্তু ‘বাংলাদেশ’ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে প্রথম হন রোহানা, যথাক্রমে ২য় ও ৩য় হন আরিন কবির ও সাফিদ মোসাব্বির। অন্যদিকে ‘খ’ গ্রুপে ১ম হন যুবায়ের রহমান অর্ক এবং ২য় ও ৩য় হন যথাক্রমে  রুরিক ও সাদিদ মুসাব্বির। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আরিফুর রহমান কামাল, মাশরেকুল আলম খান ও ইনতিসার আসাহী। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইতরাদ জুবেরী সেলিমের সৌজন্যে বিজয়ীদের পুরষ্কৃত করা হয়। একুশের স্মরণে আগত অতিথিদের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা পর্ব উপস্থাপন করেন এনাম আহমেদ। এ পর্বে বক্তৃতা রাখেন ড. আব্দুল মোত্তালিব, হেলাল উদ্দিন আহমেদ, মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, লিবারেল পার্টির মার্ক মিলার, রনজিত মজুমদার, হাফিজুর রহমান, শাফিয়াল মাহমুদ সমীর, সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী সুইট, মাছুম আহমেদ, এলান হেলাল, এডভোকেট শহীদুল ইসলাম খান, এডভোকেট আলী আহমদ, নূর মোহাম্মদ কাজী প্রমূখ। জনপ্রিয় উপস্থাপক সাংবাদিক ফরহাদ টিটোর উপস্থাপনায় কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন মনিরুজ্জামান, আশফাক চৌধুরী, জাকিয়া জান্নাত রিতা, নাজনীন নিশা, সাফিনা করিম, রনজিত মজুমদার, ফরহাদ টিটো প্রমূখ। ফরহাদ টিটোর উপস্থাপনায় মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি স্টলের কর্তাব্যক্তিদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়। সবাই আয়োজনের সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। 

মূল মঞ্চে মনিরুজ্জামান, ঘোষণা হবে ‘প্রবাসী একুশে পদক’ এবং ‘গ্রন্থমেলা পদক’। পুরো মিলনায়তন অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন। বিপুল করতালীতে প্রবাসী একুশে পদক ও গ্রন্থমেলা পদকের জন্য নাম ঘোষনা করা হয় বিশিষ্ট লেখক জসিম মল্লিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা সাইফুল ওয়াদুদ হেলাল, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, সঙ্গীত ও সংস্কৃতি সেবার জন্য শর্মিলা ধর, কবি ও গীতিকার সহিদ রহমান, নতুন প্রজন্মের মাঝে বাংলা সঙ্গীত প্রসারের জন্য সরগম মিউজিক একাডেমীর প্রিন্সিপাল ডরিন মলি গোমেজ, গণমাধ্যমের মধ্যে সাপ্তাহিক ভোরের আলো, সাপ্তাহিক বাংলা কাগজ, সাপ্তাহিক দেশের আলো, বাংলাদেশ টেলিভিশন এর কানাডা প্রতিনিধি সদেরা সুজনকে। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ জলিল রহমানের সৌজন্যে পদক প্রদান করা হয়।  

তারপর মঞ্চে আসেন সরগম মিউজিক একাডেমীর প্রিন্সিপাল ডরিন মলি গোমেজ প্রায় ৪০ জন শিল্পী নিয়ে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ খুবই দরদ দিয়ে পরিবেশন করেন সরগম মিউজিক একাডেমীর শিক্ষার্থীরা। আরো বেশ কয়েকটি গান পরিবেশন করার পর মঞ্চে উঠেন জনপ্রিয় শিল্পী নিরোজ বড়ুয়া ও অনুজা দত্ত। তাদের গান প্রাণভরে উপভোগ করেন দর্শকরা। দীপক দত্ত তবলায়, মন্দিরায় হাসান জাহিদ কমল এবং ট্যাম্বোলায় রনজিত মজুমদার ছিলেন। পুরো অনুষ্ঠানটি ‘আমারব্লগ ডটকম’ এর মাধ্যমে অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়। যা সারাবিশ্বে সে সময় আঠারো হাজারের উপর দর্শক দেখেন। সে সাথে পুরো গ্রন্থমেলার দৃষ্টিনন্দন ভি-লগস্ শীঘ্রই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখা যাবে। ফটোগ্রাফি একাডেমী অব ফাইন আর্ট ফটোগ্রাফি এবং সাপ্তাহিক ভোরের আলো’র সৌজন্যে ফটোবুথে দিনব্যাপী আগতরা ছবি তুলেছেন। সেখান থেকে তিনটি ছবি প্রকাশ করা হবে ভোরের আলো’র পর পর তিন সংখ্যায়। মেলা শেষ হলেও দর্শকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কেবল আগামী গ্রন্থমেলা সামারে নিয়ে আসা যায় কি না এ গ্রন্থমেলা এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত