নাজমুল হোসেন, লন্ডন থেকে

২২ মে, ২০১৬ ১২:০৪

ওয়ার্ক পার্মিট নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশী প্রতিনিধি দলের বৈঠক

ব্রিটেনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ শেফ ও অন্যান্য স্টাফ সংকটের কারণেই প্রতি সপ্তাহে দুটি করে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে ব্রিটিশ কারী শিল্প এক সংকটময় সময় পার করছে, যাদের মালিক মুলত বাংলাদেশীরা। এ জন্য আরো কিছু কঠিন শর্ত আরোপ করে হলেও ইইউর বাহির থেকে স্টাফ আনার ক্ষেত্রে স্বল্প মেয়াদী বা সর্ট টার্ম ওয়ার্ক পারমিট প্রচলনের মাধ্যমে সরকার যুক্তরাজ্যের  ৪.২  বিলিয়ন পাউন্ডের এ কারী শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের কাছে সাক্ষাত করে বৈঠকের মাধ্যমে এ জোর দাবি জানিয়েছে দীর্ঘ দিনের ধরে কারী শিল্পের সাথে জড়িত একটি প্রতিনিধি দল। আর এ ভিসার প্রচলন হলে বাংলাদেশই লাভবান হবে বেশী, কারণ দেশ থেকেই মুলতঃ কারী শিল্পের স্টাফের জোগান দেয়া হত একসময়। কিন্তু ভিসার কড়াকড়ি আরোপের ফলে এতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঘাত ঘটছিল।

শুক্রবার (২১ মে) বিকেলে পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেইনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।

গত বৃহস্পতিবার ‘কারী শিল্পের সংকট থেকে উত্তরণের উপায়’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আমন্ত্রণে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এনাম আলী এমবিই- এর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের ফলপ্রসূ আলোচনার বিষয়বস্তু সাংবাদিক ও মিডিয়া কর্মীদের মাধ্যমে কমিউনিটিকে জানানোর উদ্দেশ্যে আয়োজন ছিল এ সাংবাদিক সম্মেলনের।

৯ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেন। স্পাইস বিজনেস ম্যাগাজিনের সম্পাদক জনাব এনাম আলী ছাড়াও এ দলে আরো ছিলেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশ ক্যাটারার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহনুর খান, থেমস ভ্যালী গিল্ড অফ বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল মুহাইমিন মিয়া, রেস্টুরেন্ট সাপ্লায়ার কোম্পানি এশিয়াটিক লিমিটেডের ডিরেক্টর সফিকুল ইসলাম , চিলি পিকল রেস্টুরেন্টের ডিরেক্টর স্পেরিং, দাব্বাঅয়ালের ডিরেক্টর শাহ জুলফিকার আলী, টিভি উপস্থাপক ও রেস্টুরেন্ট একাউন্টিং-এ বিশেষজ্ঞ ড. সানাউয়ার চৌধুরী, কাউন্সিলর ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হক ও ফ্রেঞ্চাইস রেস্টুরেন্ট গ্রুপের ডিরেক্টর বশীর আহমেদ।

এদেশে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত সেফ তৈরি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, কারণ সারের ইপ্সমে অবস্থিত লি রাজ একাডেমী ( ব্রিটিশ কারী কলেজ) তাদের কোর্স মাত্র সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। শুরুর পর লেখাপড়া ও হাতে কলমে প্রশিক্ষণের জন্য সময় দিতে হবে কয়েক বছর পর্যন্ত প্রশিক্ষণার্থীদের। আবার যারা প্রশিক্ষণ শেষ করবে তারা কাজ হিসেবে এ শিল্পে থাকবে কিনা তাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেমন একদিকে। তেমনি লক্ষ্য করা গেছে, এখানকার লোকজন ভিন দেশী একটি শিল্পে বিশেষ করে এশিয়ান মসল্লা/স্পাইসযুক্ত রান্না ঘরে এখনো উপযোগী হতে পারেনি।

এ শিল্প এখনই যে সংকটময় সমস্যার মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে, তাতে এ  অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে কারী শিল্প বাঁচিয়ে রাখার জন্য  অতি দ্রুত একটি সমাধান আবশ্যক তা প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীকে বুঝাতে সক্ষম হয়।

তাই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রয়োজন হলে আরো কঠিন শর্ত আরোপ করে হলেও ১ থেকে ৩ বছর মেয়াদী সর্ট টার্ম ওয়ার্ক পার্মিট/  স্বল্পমেয়াদী কাজের ভিসা চালুর দাবি জানান। যাতে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ না থাকা, মেয়াদ শেষ হলে দেশে ফিরে আর না আসার সুযোগ, কোন ধরনের বেনিফিটের সুযোগ না থাকা, নিয়োগ কর্তা কর্তৃক স্বাস্থ্যের ইনস্যুরেন্স, পরিবার আনার সুযোগ না থাকা ও স্পন্সরকৃত নিয়োগ কর্তা ছাড়া কাজের সুযোগ না থাকার মতো কঠিন শর্ত সরকার চাইলে সরকার আরোপ করতে পারে।

আর এ ধরনের ভিসা বিশ্বে নতুন নয়, ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য, জার্মানি ও আমেরিকায় এর প্রচলন আছে। এ ধরনের ভিসা চালু হলে তাঁরা রাষ্ট্রের উপর বোঝা হবে না বা ব্রিটেনের মানুষের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও বাঁধা হবে না। বরং বিভিন্ন দেশের স্টাফের নানা ধরনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শুধু এ ব্যবসা রক্ষাই নয়, কাস্টমারদের গত ৪০ বছর ধরে কারীর স্বাদের গুনগত মানের উন্নতি সম্ভব হবে বলে প্রতিনিধি দল আশা ব্যক্ত করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত