আব্দুল করিম কিম, নিউ ইয়র্ক থেকে

২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৫:২৮

নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ', নিউ ইয়র্কে মানববন্ধন

বিশ্ব নদী দিবসে নদী বাঁচানোর দাবিতে কর্মসূচি পালন করলেন প্রবাসীরা। সুরমা নদীর উৎসমুখ খনন এবং দখল ও দূষণের হাত থেকে সিলেট বিভাগ ও দেশের নদ-নদীকে রক্ষার দাবিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় আয়োজিত এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিভিন্ন বয়সী প্রবাসী নাগরিকেরা অংশগ্রহণ করেন। 'সুরমা বাঁচাও সিলেট বাঁচাও, নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও', 'সেইভ রিভার, সেইভ আওয়ার এগজিস্টেন্স', 'নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ, সুন্দর থাকবে বাংলাদেশ', 'সিলেটের নদী সিলেটের প্রাণ, সিলেট বাঁচাতে নদী বাঁচান', 'মরলে নদী সবুজ শেষ, বাংলা হবে মরুর দেশ' ইত্যাদি নানান বক্তব্যের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশে। বেন-এর সংগঠক রানা ফেরদৌসের সভাপতিত্বে ও লেখক-গীতিকার ইশতিয়াক রুপুর সঞ্চালনায় সমাবেশে মূল বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম। কিম বলেন, সিলেটের প্রধান নদী সুরমার উৎসমুখ ভরাট হয়ে গেছে। অবিলম্বে সুরমার উৎসমুখ খনন করা না হলে সুরমা তার আত্মপরিচয় হারিয়ে ফেলবে। দেশে এই দাবি জানানো হয়েছে অনেকবার। প্রবাসের মানুষকে সাথে নিয়ে সুরমার উৎসমুখ খননের দাবি আবারো জানাচ্ছি। তিনি সুরমা'সহ সিলেট বিভাগের শত নদী রক্ষায় প্রবাসীদের জোরালোভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

টাইম টিভির সিইও প্রবাসী সাংবাদিক এম এ তাহের বলেন, প্রবাসীরা যেখানেই থাকেন না কেন, শৈশবের স্মৃতিময়  নদীর কথা ভুলতে পারেন না। সেই নদীর বিপন্নতার কথা শুনলে মন বিষণ্ণ হয়ে যায়। তিনি পিয়াইন, সারি, ডাউকি, ধলাই, ভাদেশ্বরা নদীর স্মৃতিচারণ করে বলেন, সিলেট অঞ্চলের নদ-নদীরক্ষায় পরিবেশবাদীদের চলমান লড়াইয়ে প্রবাসীদের সম্পৃক্ত করতে তিনি প্রচেষ্টা চালাবেন।

বেন-এর সংগঠক রানা ফেরদৌস বলেন, পরিবেশ আন্দোলনের অব্যাহত কর্মসূচির কারণে মানুষ নদীরক্ষার কথা ভাবতে শুরু করেছে। সরকারও নদী রক্ষাকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে। উচ্চ আদালত পরিষ্কারভাবে নদী বিষয়ক দিক নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নদী বাঁচাতে টাস্কফোর্স ও নদী কমিশন তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু গত ৮ বছরে একটি নদীও সম্পূর্ণরূপে দখল-দূষণ মুক্ত হয়নি। তাই পরিবেশ আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে নদীরক্ষার কাজকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষার লড়াই কারো ব্যক্তিগত লড়াই নয়; এ লড়াইয়ে জয়ী হলে সকলের জয়, পরাজয় হলে সকলের পরাজয়।

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা সমিতির সভাপতি জোসেফ চৌধুরী, প্রবাসী সংগঠক ও সাংবাদিক হেলিম আহমদ,  কমিউনিটি নেতা ফকু চৌধুরী, শেখ আতিকুল ইসলাম ও এবাদ চৌধুরী, লেখিকা  শাহানা বেগম, নিউইয়র্ক সিটি যুবলীগ সভাপতি হোসেন আহমদ টিপু, খোয়াই তীরের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারি, সিলেটের সুরমা তীরের প্রবাসী গৃহিণী শাহিনা বেগম, বালাগঞ্জের বড়ভাগা নদীতীরের খন্দকার আলী হামজা, বিয়ানীবাজারের লুলা নদী তীরের মাহবুব সুন্নাহ, মনু তীরের সৈয়দ লিটু, তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীতীরের সুধাময় দাস, বিশ্বনাথের বাসিয়া তীরের নিরঞ্জন কুমার চৌধুরী, খুলনার পশুর তীরের লরেন্স সরকার, ঢাকার বুড়িগঙ্গা তীরের প্রবাসী ট্যাক্সিচালক মো শাহজাহান, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদীতীরের আসলাম খাঁন প্রমুখ ।

'দখল দূষণমুক্ত প্রবহমান নদী; বাঁচবে প্রাণ ও প্রকৃতি' প্রতিপাদ্যে এ বছর বাংলাদেশে বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন হয়েছে। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্বময় নদী রক্ষার সংগ্রামীরা বিশ্ব' নদী দিবস পালন করে। কানাডার নদীপ্রেমী মার্ক অ্যাঞ্জেলোর উদ্যোগে ১৯৮০ সালে দিবসটি সর্বপ্রথম পালিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে দিবসটি পরবর্তিতে উদযাপন হতে থাকে। স্বস্ব অঞ্চলের নদীরক্ষার লড়াইয়ে দিবসটি নদীকর্মীদের অনুপ্রেরণা যোগায়। জাতিসংঘ ২০০৫ সালে দিবসটি 'এনডোর্স' বা অনুসমর্থন করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত