লন্ডন প্রতিনিধি

১৬ জুন, ২০১৫ ২৩:৪১

যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগে মৌলবাদী শক্তির অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। রাষ্ট্রীয় এবং দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করবেন। লন্ডনে আওয়ামিলীগ ও যুবলীগের বর্তমান কমিটির কয়েকজন নেতা সম্পর্কে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়েছে।
 
অনেকেরই প্রশ্ন যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামির আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর আস্থাভাজন লোক এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে কটুক্তিকারীদের আপন ভাইয়েরা কীভাবে ইউকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদলাভ করে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে লন্ডন হাউস অব কমন্সের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে এক সময়ে যুদ্ধাপরাধী নিজামীর কাছের মানুষেরাও।

জানা যায়, যুদ্ধাপরাধী নিজামী’র আস্থাভাজনদের আপন ভাইয়েরা ইউকে আওয়ামী লীগ  ও যুবলীগের উল্লেখযোগ্য নেতৃত্বে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট যে ইউনিটের কমিটি গঠন করতে স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন।

ছবি: চারদলীয় জোটের ২০০৬ সালের সেই অনুষ্টানের লিফলেট।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি দেশ তথা দলীয় সবধরণের ক্রান্তিকালে যুক্তরাজ্য আওয়ামিলীগের ভুমিকা উল্লেখ করার মতো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগে মৌলবাদী শক্তির অনুপ্রবেশ ইস্যুতে ঝড় বয়ে গেছে অনলাইন এবং বাঙালি কমিউনিটি জুড়ে। অনলাইন থেকে প্রাপ্ত পোস্টার এবং ভিডিও বক্তব্যের তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ  এবং যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে আছেন যুদ্ধাপরাধী যুধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ঘনিষ্টভাজনদের আপন ভাইয়েরা।

ছবি: ইউকে যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জামাল খানের আপন ভাই সদরুজ্জামান খান (বামে) ও বিতর্কিত মুফতি সদরুদ্দিন একই মঞ্চে।

এদের মধ্যে একজনের নাম মাওলানা আব্দাল হোসেন চৌধুরী যিনি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত মতিউর রহমান নিজামীর আস্থাভাজন এবং ইসলামী ঐক্যজোট ইউরোপের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। পারিবারিকভাবে মৌলবাদী এবং এন্টি-আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে জড়িত মাওলানা আব্দাল হোসেন চৌধুরীর আপন ভাই আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্য আওয়ামিলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনে দেশের বাইরে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে অনলাইন এক্টিভিস্ট, প্রো-একাত্তর বাঙালি কমিউনিটি এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামিলীগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও সেখানকার আওয়ামিলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে কোনো সমাবেশ অথবা সংহতিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।শুধু তাই নয় এখন পর্যন্ত  আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে  আলতাব আলী পার্কের ২১ ফেব্রুয়ারী; ২৬ মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বরের বেশ কিছু অনুষ্টানে অংশগ্রহন করতে দেখা যায়নি।বাঙালি কমিউনিটির অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দল জামায়াতের মানুষ হওয়ায় তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও সে সব কর্মসূচিতে অংশ নেননি।

কেবল আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীই নয় যুক্তরাজ্য যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জামাল খান নিয়েও বাপক কানাঘুষা চলছে। তার আপন ভাই যুক্তরাজ্য জমিয়তে উলামা'র অন্যতম নেতা ছদরুজ্জামান খান। যুদ্ধাপরাধী বিরোধী গণআন্দোলনের সময়ে ছদরুজ্জামান খান এর ভূমিকা সম্পর্কে অনেকেই অবগত। তৎকালীন সময়ে লন্ডনের চ্যানেল এস-এ ছদরুজ্জামান খান যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে ব্যাপক অপপ্রচার চালান যা যুক্তরাজ্যের বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। অভিযোগ রয়েছে, এছাড়াও মসজিদভিত্তিক প্রচারণার মাধ্যমে লন্ডনে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে গণমত সৃষ্টির পাশাপাশি জঙ্গিবাদিতাকে উস্কে দিচ্ছেন ছদরুজ্জামান খান।

এদিকে প্রবাসী বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে লেবার দলীয় প্রার্থী জন রিগস-এর পক্ষে তিনি বাঙালি কন্যা রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক এবং রূপা খান শহীদ আলতাব আলী পার্কে গণসংযোগে আসলে সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আব্দাল হোসেন চৌধুরী। এই ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে নতুন করে সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন- চিহ্নিত একজন জামায়াত নেতা কীভাবে টিউলিপের কাছাকাছি আসার সুযোগ পাচ্ছেন? 


ছবি: টিউলিপ সিদ্দিক এম পি'র ঠিক পেছনে মাওলানা  আব্দাল হোসেন চৌধুরী-জিন্নাহ টুপি পরিহিত।

এ বিষয়ে জানতে ইউকে আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফকে সিলেটটুডে টুয়েন্টি ফোর ডটকমের পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জামাল খানের বিষয় নিয়ে একাধিকবার সুর্নিদিষ্ট প্রশ্ন করার পর এক পর্যায়ে তিনি লাইন কেটে দেন।

আপন ভাই জামায়াত নেতা এবং তিনি কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ নন এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়ার জন্য কয়েকবার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুর’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।  

ভিডিও : লন্ডনে শেখ হাসিনের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখছেন ছদরুজ্জামান খান

আপনার মন্তব্য

আলোচিত