যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

৩০ এপ্রিল, ২০১৮ ১০:২৩

ওয়াশিংটনের বিসিসিডিআই বাংলাস্কুলের বর্ষবরণ উৎসব

শতবর্ষের লোকজ সংস্কৃতির এক অনন্য অনবদ্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বৃহত্তর ওয়াশিংটনের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির শিক্ষামুলক সংগঠন বিসিসিডিআই বাংলাস্কুল পালন করেছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫।

গ্রাম বাংলার চিরন্তন রূপ আর লোকজ সংস্কৃতির এক অভূতপূর্ব পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বৃহত্তর ওয়াশিংটন তথা পুরো যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সৃষ্টি করল এক অনন্য উদাহরণ।

বরন্য সাংবাদিক রোকেয়া হায়দারের সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে গত ২৮ এপ্রিল শনিবার বৃহত্তর ওয়াশিংটনের ম্যাশন ডিষ্ট্রিক পার্কে শুরু হয় বিসিসিডিাই বাংলাস্কুলের বর্ষবরণ উৎসব ১৪২৫। এরপর পরেই বৃহত্তর ওয়াশিংটনের প্রায় পঞ্চাশজন শিল্পীর সমন্বয়ে পরিবেশিত ”আনন্দলোকে” গানের সাথে দুই নুতন প্রজন্মের শিল্পী মরিয়ম ইসলাম ও প্রিয়াঙ্কা বোসের নৃত্যের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বাংলার চিরন্তন লোকজ সাংস্কৃতিক এক অনন্যা পরিবেশনা। এরপর ”এসো হে বৈশাখ গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে নায়লা, অতশী, শুসান, অহনা, অনিতা, নাইমা, অবন্তিকা, রানিতা, ও তাসনুভা। এরপর ধনধান্যে পুষ্পে ভরা গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করে প্রিয়াঙ্কা বোস।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয় ছোটদের পরিবেশনা। বাংলাস্কুলের শিক্ষক শামীম চৌধুরী ও শতরূপা বড়ুয়ার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় বৃহত্তর ওয়াশিংটনের ক্ষুদে শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করে ছয়টি রিতু, আজি এ ভোরে, হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস, বাউলা কে বানাইল রে, জন্মিলে মরিতে হয়, মানুষ ছাড়া ক্ষেপাওে তুই, মিলন হবে কতদিনে, জ্বালাইয়া গেলা মনের আগুন, মঙ্গল হোক, পাহাড়ি মন, বাজে বংশী, মিষ্টি সবুজ মাঠ, চল চল সখী, পাহাড়ি সাপের খেলা, বাউলের একতারা, ঢুলি বাজায় ঢোল ও বাংলাদেশের একতারা।

এই পর্বে অংশগ্রহণ করে সুমিত, ফারিয়াল, আরিয়া, এলেনা, লিয়ানা, আয়ান, লাইবা, রিদি, অহনা, দিব্য, পরাগ, অংকিতা, নোরা, অবন্তী, অহনা, অনিতা, বিজন, সৃজন, কৌশিক, সুষ্ময়, রিদিতা, মুহিত, অপ্সরা, ফারজান, স্বপ্নিল, তাসনুভা, অতসী, শুসান, প্রভা, ওয়াদিয়া, ও শ্রেয়সী সহ আরো অনেকে।

ছোটদের পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন বিসিসিডিআই বাংলাস্কুলের সভাপতি আতিয়া মাহজাবিন নীতু। এ সময় মঞ্চে স্বাগত জানান বিসিসিডিআই বাংলাস্কুলের শুভাকাঙ্ক্ষী ভাষা সৈনিক মাজহারুল ইসলামকে। শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর মাজহারুল ইসলাম বিসিসিডিআই বাংলাস্কুলের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য পঞ্চাশ হাজার ডলারের চেক প্রদান করেন।

পরে কবিতা নিয়ে মঞ্চে আসে অদিতী, সিলিকা ও দীপু। এর পরপরই শতবর্ষের লোকজ সংস্কৃতির পরিবেশনা শুরু হয়। দেশ বন্দনা পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এইপর্বে বৃহত্তর ওয়াশিংটনের প্রায় পঞ্চাশজন শিল্পী কলাকুশলী কালিকা প্রসাদ বন্দনা, লালন ফকিরের ধন্য ধন্য, বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের গ্রামের নওজোয়ান, কোন মিস্ত্রি ও তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো, শীতলং শাহ এর সোয়া উরিল, হাসান রাজার নেশা লাগিল রে, পুথি পাঠ, ভাটিয়ালী গান কই যাও রে পদ্মার ঢেউ, মমতাজ আলী খানের এই যে দুনিয়া, রাধা রমণের জলে গিয়াছিলাম সই ইত্যাদি গান পরিবেশন করে। প্রায় দেড়ঘন্টা ধরে শতবর্ষের লোকজ সংস্কৃতির এই পরিবেশনা দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ বিমোহিত করে।

এরপরেই শুরু হয় মিছিল। মারো জোরে হেইয়া, জোরসে বল হেইয়া, বলরে বল হেইয়া, সবাই বল হেইয়া ইত্যাদি স্লোগানে স্লোগানে পুরো অনুষ্ঠাস্থল প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। মনে হয়েছিল পুরো অনুষ্ঠাস্থল একটি ছোট্ট বাংলাদেশের শ্যামল সবুজ গ্রাম বাংলায় পরিণত হয়েছে। যেখানে কোন ভেদাভেদ নেই, নাই কোন ধর্মের বেড়াজাল বা কুসংস্কার। আছে শুধু বাংলা আর বাঙালিত্ব এবং একই সাথে বাংলার চিরন্তন লোকজ সংস্কৃতি। চারিদিকে আনন্দ আর রঙের খেলায় ঝলমল।

দিনভর বৃহত্তর ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশীরা নানা রঙের কাপড় পরে নানা ঢঙে অনুষ্ঠানে সময় কাটান। ঘুরে বেড়ান অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ষ্টল। কেনাকাটা করেন, গ্রহণ করেন দেশী খাবার। সবশেষে বৃহত্তর ওয়াশিংটনের ব্যান্ড দল আরিচা ঘাট, শ্যাডো ড্রিম, ও জটিল সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

বিসিসিডিআই বাংলাস্কুলের বর্তমান বোর্ড ওয়াশিংটন প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে বাংলার শত বছরের যে লোকজ সংস্কৃতির বৈশাখী মেলা উপহার দিল তার জন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানানো যেতেই পারে। ভবিষ্যতে বিসিসিডিআই বাংলাস্কুল বাংলার লোকজ সংস্কৃতি বাংলা ভাষা প্রবাসে নুতন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আরো জোরালো ভূমিকা পালন করবে বলে অনুষ্ঠানে আগত দর্শক শ্রোতারা বিশ্বাস এবং আশা করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত