সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ মে, ২০১৮ ০১:৫৪

মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার চেষ্টা, শাস্তির মুখে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি দম্পতি

বেড়ানোর কথা বলে মেয়েকে দেশে এনে জোর করে তার এক চাচাত ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে এক বাংলাদেশি দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে যুক্তরাজ্যের লিডস ক্রাউন কোর্ট।

মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১৮ জুন এই মামলায় সাজা ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশি ওই বাবা-মাকে কারাভোগ করতে হবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন বিচারক।

ওই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ছুটির সময় বেড়ানোর কথা বলে তাদের ১৯ বছরের মেয়েকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর তাকে এক চাচাত ভাইকে বিয়ে করতে বলা হয়। ব্রিটেনে প্রেমিক থাকা এ-লেভেলের ছাত্রী তাতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাকে মারধরও করা হয়।

পরে ছোট বোনের সহায়তায় মেয়েটি ব্রিটিশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করেন। পাশাপাশি ব্রিটেনে অবস্থানরত প্রেমিককে বাংলাদেশের ঠিকানা পাঠান, তিনি ইয়র্কশায়ার পুলিশে অভিযোগ করলে তারাও ঢাকায় ব্রিটিশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করে।

পরে বিয়ের নির্ধারিত দিনের আগে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। ব্রিটেনে ফিরে মেয়েটি লিডস ক্রাউন কোর্টে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে জোর করে তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ করেন।

আদালত ওই দম্পতি বা তাদের মেয়ের নাম প্রকাশ করেনি।

মেয়েটি আদালতে বলেছে, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা এবং ঈদ উদযাপনের জন্য ছুটি কাটানোর উদ্দেশে তাকে বাংলাদেশে নেওয়া হয়েছিল। ৩ জুলাই দেশে পৌঁছানোর কয়েক দিন পর বাবা তাকে বলেন, তার জন্য একজন পাত্র পছন্দ করেছেন।

“তিনি বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এই পরিকল্পনা করে রেখেছি, ছেলেটি সত্যিই ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আমি তাকে টাকা পাঠিয়েছি এবং সে সত্যিই আকর্ষণীয় ছেলে।

“তিনি আমাকে রাজি করাতে চাইছিলেন। কিন্তু কোনোভাবেই আমি হ্যাঁ বলতে পারছিলাম না। চাচাত ভাই হওয়ায় তা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না।”

তখন মেয়েটিকে বলা হয়, তিনি ‘রানির মতো থাকবেন’ এবং তিনি এই বিয়েতে রাজি না হলে তা বাবা-মার জন্য ‘লজ্জার’ হবে।

মেয়েটি আদালতে বলেছে, মেয়েকে দমাতে তাকে মারধরে করার জন্য বাবাকে চাপ দিয়েছিলেন তার মা।

তখন তিনি তার মাকে বলেন, তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হলেও ব্রিটেনে ফিরে সবকিছু উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবেন তিনি।

“কিন্তু আমার মা বলে যে, তা হওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ তারা আমাকে সেখানে এক বছরের জন্য রেখে আসবেন যাতে সে সময়ের মধ্যে আমি গর্ভধারণ করি এবং সেও (চাচাত ভাই) ভিসা পায়।”

এই মামলায় তিন সপ্তাহের শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত বাংলাদেশি ওই দম্পতিকে দোষী সাব্যস্ত করে। মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মারধর, হুমকি দেওয়া এবং বলপ্রয়োগের অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে।

মাত্র এক সপ্তাহ আগে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত বার্মিংহামের এক নারীকে তার কিশোরী মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে সাড়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে জোর করে সন্তানদের বিয়ে দেওয়ার অভিযোগে কোনো বাবা-মায়ের শাস্তি পাওয়ার ঘটনা সেটিই ছিল প্রথম।

২০১৪ সালের জুনে যুক্তরাজ্যে জোর করে বিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে করা আইন কার্যকর হয়। পরের বছর জুনে এক নারীকে জোর করে বিয়ে করার অভিযোগে এক ব্যক্তির কারাদণ্ড হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত