যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি

২৯ জুন, ২০১৮ ০১:১৬

বাংলা কবিতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন মুজিব ইরম

বাংলা কবিতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেন কবি মুজিব ইরম। কাব্যনির্মাণে ঈর্ষণীয় বাঁক বদল করে কবি মুজিব ইরম বাংলা কাব্যধারায় নতুন নির্মাণ কৌশলই শুধু সংযোজন করেননি, তিনি ঘরে ফেরার এক নতুন বার্তাও পাঠক সমাজকে দিতে পেরেছেন।

গত রোববার (২৪ জুন) পূর্ব লন্ডনের শাহ কমিউনিটি সেন্টারে কবিকণ্ঠ আয়োজন করে কবি মুজিব ইরমের কবিতা নিয়ে আলোচনা, পাঠ ও আবৃত্তির বিশেষ অনুষ্ঠানে সুধীজন এ মন্তব্য করেন।

কবি হামিদ মোহাম্মদের উপস্থাপনায় আলোচনায় অংশ নেন কবি মাশুক ইবনে আনিস, কবি ফারুক আহমেদ রনি, কবি জফির সেতু, কবি টি এম আহমেদ কায়সার, কবি মিল্টন রহমান ও লেখক সারওয়ার-ই-আলম প্রমুখ। কবিতা পাঠে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী পপি শাহনাজ, অজন্তা দেব রায়, মোস্তাফা জামান নিপুণ।

মুজিব ইরম রচিত পুথিপাঠে অংশ নেন কবি মুজিবুল হক মনি। এ ছাড়া সপাঠ ও কথনে অংশ নেন কবি মুজিব ইরম।

অতিথি আলোচক সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি জফির সেতু আলোচনায় বলেন, মধ্যযুগে কবি আলাওল আরকান রাজ্যে বাংলা সাহিত্যের চর্চা করে যে বাংলাসাহিত্যের বিকাশ সাধন করেছিলেন, এখন বিলেতে কবি মুজিব ইরম একইভাবে ভিন দেশে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর ভিন্নমাত্রার এ কাজ অবশ্যই ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত।

মিল্টন রহমান বলেন, মুজিব ইরম আত্ম-অনুসন্ধানের যে নতুন অন্তর্জগৎ নির্মাণ করেছেন তা দেশকাল পেরিয়ে আন্তর্জাতিক দ্যোতনা সৃষ্টি করেছে। তাঁর কবিতায় হোমসিকনেস স্বদেশপ্রেমকে উসকে দিতে পেরেছে। উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মুজিব ইরম শত বছর পরেও মানবিক এ বেদনাকে ধারণ করেছেন, তবে ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন মেজাজে। এই জন্য তিনি বিশিষ্ট।

টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, প্রথা ভাঙার যে তর্কবিতর্ক নব্বইয়ের লিটল ম্যাগ আন্দোলনে আমরা করেছি, সেই বাঁক বদলের সফল কবি মুজিব ইরম। কবিতার শরীর নির্মাণ কৌশল বদলে দেওয়া, অন্তর্জাগতিক কাব্য স্পর্শকে পাঠকের মনে স্পন্দিত করা, নতুনভাবে বলা, সবই মুজিব ইরমকে সার্থক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে তার কবিতা। যাকে বিদ্রোহ বা চ্যালেঞ্জ বলতে হবে।

সারওয়ার-ই-আলম তার বক্তব্যে বলেন, মুজিব ইরম কবি হওয়ার জন্য ঢাকায় যান। তিনি সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, প্রচলিত ফর্ম বা ধারায় তার স্বপ্ন পূরণ হবে না। তাই তিনি চ্যালেঞ্জ নেন। তিনি লিখতে শুরু করেন নিজের মতো, নিজেকে নিয়ে অর্থাৎ, তার জন্মস্থান গ্রাম নালিহুরীর হালটের কাদামাটি, ছায়া উজ্জ্বল বটমূল, মনু নদীর জল, আখালুকির থইথই ঢেউ নিয়ে, সেই শৈশবস্মৃতি। বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের একঝাঁক লেখকের মধ্যে বাবরিওয়ালা এক ভীষণ জেদি অথচ চুপচাপ স্বভাবের কবি মুজিব ইরম।

মাশুক ইবনে আনিসের বক্তব্যে উঠে আসে সাহিত্য জগতের চলমান ঈর্ষাপরায়ণতার কথা। তিনি বলেন, সমসাময়িক বা বন্ধু কবিদের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা থাকে, সেটা ভালো। কিন্তু যতটুকু জানি, বেশির ভাগ ঈর্ষাই থাকে এ প্রতিযোগিতার অন্তরালে। কবি মুজিব ইরমের কাব্যকর্ম নিয়ে হামিদ মোহাম্মদ ঈর্ষার আগল ভেঙে যে ঐতিহাসিক আয়োজন করলেন, এটা বিস্ময়কর, অভিবাদনযোগ্য।

ফারুক আহমেদ রনি বলেন, কোনো প্রকৃত কবিকে নিয়ে বা মুজিব ইরমকে নিয়ে এ ধরনের একক আয়োজন বিলেতে এই প্রথম। কবিকণ্ঠ ইতিহাস সৃষ্টি করল।

অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রাণ ছিল মুজিব ইরমের কবিতা থেকে পাঠ। পপি শাহনাজের হৃদয়গ্রাহী পাঠ ছিল মুগ্ধ করার মতো। হাসিনা আখতার, অজন্তা দেব রায়ের কবিতা পাঠ উপস্থিত দর্শকদের মনোযোগ কাড়ে। অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল মুজিব ইরমের কবিতা থেকে কবি মুজিবুল হক মনির পুথিপাঠ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। ফুল দেওয়ার মুহূর্তটি বর্ণিল ও আবেগঘন হয়ে ওঠে উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের যোগদানে। কবি বরণের পর পাঠ করা হয় কবি বৃত্তান্ত। এতে কবির জীবন ও সাহিত্যকর্মের বিবরণ পাঠ করেন কবি ইকবাল হোসেন বুলবুল।

সব শেষে মুজিব ইরম সপাঠে সকথনে অংশ নেন। তিনি তার প্রিয় স্মৃতিজাগানিয়া একটি কবিতা পড়ে শোনান। সকথনে বলেন, আমি অভিভূত, কবিকণ্ঠের হামিদ মোহাম্মদ ভাইয়ের আয়োজনে। আর আপনারা যারা এতে উপস্থিত হয়ে আমার কবিতা নিয়ে আলোচনা ও পাঠ করেছেন এবং আমাকে ভালোবেসে অনুষ্ঠানে এসে ধৈর্য ধরে কবিতা ও আলোচনা শুনেছেন, সবাইকে আমার বিনীত ধন্যবাদ। আপনারা আমার বংশের লোক, কবি বংশের লোক; আপনাদের জয় হোক, কবি বংশের জয় হোক।

অনুষ্ঠানে ভিডিও চিত্রে কবি মুজিব ইরমের জীবন ও কর্ম প্রদর্শন করা হয়। তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন কবি আনোয়ারুল ইসলাম অভি। সমগ্র অনুষ্ঠানটি ভিডিও ধারণ করেন সাংবাদিক রোমান বকত চৌধুরী। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কবিকণ্ঠ কুলাচার্য মুজিব ইরম সংখ্যা প্রকাশ করে।

উল্লেখ্য, কবি মুজিব ইরম ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ পুরস্কার পেয়েছেন। এ ছাড়া তিনি মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার ১৯৯৬। বাংলা কবিতায় সার্বিক অবদানের জন্য পেয়েছেন সংহতি সাহিত্য পদক ২০০৯, কবি দিলওয়ার সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪। কবি বংশ কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৪। শ্রীহট্টকীর্তন কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন সিটি-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত