সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জুলাই, ২০১৮ ১৯:৫৯

বাঙালি সংস্কৃতি ও দেশীয় পণ্যকে তোলে ধরতে নিউ ইয়র্কে ঈদ আনন্দমেলা

প্রবাসে বাঙালী সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও দেশীয় পণ্যকে তুলে ধরার প্রয়াসে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জমজমাট ঈদ আনন্দমেলা। দেশ এবং প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের জমকালো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা প্রাণভরে উপভোগ করেন এটর্নি মঈন চৌধুরী ঈদ আনন্দ মেলায় আসা হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতা।

রোববার (১৫ জুলাই) বাঙালী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের প্রাণকেন্দ্র স্টারলিং-বাংলাবাজার এলাকার পাডি পার্ডি স্ট্রিটে বসেছিল ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক সোসাইটি-ব্যান্ডস এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস, নিউইয়র্ক ইনক’ স্মরণকালের বৃহত্তম এ পথমেলা।

দেশজ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে নানা রঙে সাজিয়ে তোলা হয় পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। মেলায় বাংলাদেশী নানা ধরণের পোশাক, প্রসাধন, গয়না, টিউটোরিয়াল, রিয়েল এস্টেট, ফার্মেসি, হোম কেয়ার, হেলথ ইনস্যুরেন্স, মজাদার খাবার, দেশীয় পিঠাসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা। নির্মল আনন্দ বিনোদনের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশীরা এদিন মেতে ওঠেন কেনা-কাটার উৎসবেও। সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে থাকে মেলা আঙিনায়। উপচেপড়া দর্শনার্থীর অংশগ্রহণে সন্ধ্যে সাড়ে ৮টায় শেষ হয় দিনব্যাপী এ ঈদ আনন্দমেলা।

এদিন বিকেল ৪টায় আয়োজকদের সঙ্গে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেলার টাইটেল স্পন্সর ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার এট লার্জ এটর্নি মঈন চৌধুরী, স্টেট সিনেটর লুইস সিপুলভেদা, কাউন্সিল মেম্বার রুবিন ডিয়াজ, ব্রঙ্কস বোরো প্রেসিডেন্ট রুবিন ডিয়াজ জুনিয়ারসহ অন্যান্যরা।

উল্লেখ্য, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কমিউনিটি একটিভিস্ট কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন ও বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোঃ আলীর মেলা উদ্বোধনের কথা থাকলেও তারা পরে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

মেলা কমিটির আহবায়ক প্রফেসার শেখ আল মামুনের সভাপতিত্বে মেলার বিভিন্ন পর্বে বক্তব্য দেন ও উপস্থিত ছিলেন ব্যান্ডসের সভাপতি সোলায়মান আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের সভাপতি সাহেদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, মেলা কমিটির সদস্য সচিব তৌফিকুর রহমান ফারুক, যুগ্ম আহবায়ক তপন সেন, সামাদ মিয়া জাকের ও প্রদীপ মালাকার, যুগ্ম সদস্য সচিব হাসান জিলানী, মো. আলী আকন্দ, শেখ জামাল হুসেন ও হুমায়ূন কবির সোহেল, সমন্বয়কারী কফিল চৌধুরী ও রফিকুল ইসলাম, ট্রাস্ট্রি বোর্ড সদস্য জুনেদ চৌধুরী।

অতিথিদের মধ্যে ছিলেন নিউইয়র্কের কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট ১৪ থেকে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি বিজয়ী আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কার্টেজ, জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও এনওয়াই ইনস্যুরেন্সের সিইও শাহ নেওয়াজ, ওয়েল কেয়ারের সিনিয়র ম্যানেজার সালেহ আহমদ, বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলর প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এন মজুমদার, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিম বাদশা, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন কমিশনার বাংলা টাউনের স্বত্বাধিকারী কাওছারুজ্জামান কয়েছ, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দীন আহমেদ সোহাগ, মার্কস হোম কেয়ার এজেন্সির সিনিয়র ম্যানেজার আলমাছ আলী, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী সালেহ উদ্দিন সাল, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের সাবেক সভাপতি মাহবুব আলম, জাসদ নেতা নুরে আলম জিকু, নর্থ ব্রঙ্কস কমিউনিটি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর চৌধুরী জগলুল, পার্কচেস্টার ফ্যামেলি ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী ফার্মাসিস্ট গৌরব কোঠারী (মিস্টার জি), এশিয়ান মাল্টি সার্ভিস ইনক’র প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও সাইদুর রহমান লিংকন, হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠান লংজিভিটি হেলথ সার্ভিসের কর্ণধার রুকন হাকিম, সিপিএ আহাদ আলী, কমিউনিটি একটিভিস্ট মখন মিয়া, মান্না মুনতাসিরসহ মূলধারা ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ।

মিডিয়া ব্যক্তিত্বের মধ্যে ছিলেন সাপ্তাহিক বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, মিলিনিয়াম টিভি ইউএসের প্রেসিডেন্ট নূর মোহাম্মদ, ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম এবং সাপ্তাহিক জনতার কন্ঠ’র সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সাপ্তাহিক আজকালের নির্বাহী সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর, এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার দিদার, সাপ্তাহিক ঠিকানার সিনিয়র রিপোর্টার ছন্দা বিনতে সুলতান।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। মেলার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ‘বাংলাদেশী-আমেরিকান ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক সোসাইটি-ব্যান্ডস এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস, নিউইয়র্ক ইনকের কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে কমিউনিটিকে এগিয়ে নিতে অনবদ্য ভূমিকা পালনের জন্য আয়োজক সংগঠন ব্যান্ডসের সভাপতি সোলায়মান আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম মিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কসের সভাপতি সাহেদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, মেলা কমিটির আহবায়ক প্রফেসার শেখ আল মামুন, সদস্য সচিব তৌফিকুর রহমান ফারুক, সমন্বয়কারী কফিল চৌধুরী ও রফিকুল ইসলাম, কর্মকর্তা কাজী জামান বিটু, সামাদ মিয়া জাকেরসহ বেশ কয়েকজনকে কংগ্রেস ও নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটের পক্ষ থেকে  সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে আয়োজকদের পক্ষ থেকে আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও কার্টেজকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। মেলা উপলক্ষে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও প্রেরিত বাণী পাঠ করে শুনানো হয় অনুষ্ঠানে।
 
স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বেশ বেচা-বিক্রি হয়েছে বলেও জানান বিক্রেতারা। চমৎকার আবহাওয়ায় বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর অংশ গ্রহণে এটি পরিণত হয় স্মরণীয় ঈদ আনন্দমেলায়। মেলায় বাংলাদেশী নানা ধরণের পোশাক, প্রসাধন, রিয়েল এস্টেট, স্বাস্থ্য সেবা, গয়না, মজাদার খাবার, দেশীয় পিঠাসহ বিভিন্ন পণ্যের অর্ধশতাধিক স্টল বসে মেলায়। মেলা শুরুর পর পরই জমে ওঠে স্টলগুলো। স্টলে ভালো বিক্রি হয়েছে বলে জানান কয়েকজন স্টল মালিক।

মেলায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল দেশ এবং প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের জমকালো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। দর্শনার্থীরা প্রাণভরে উপভোগ করেন তাদের অনন্য পরিবেশনা। মেলায় স্থাপিত বিশাল মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বরেণ্য শিল্পী রিজিয়া পারভিন, ড. তনিমা হাদী, রোকসানা মির্জা, কৃষ্ণা তিথী, রানু নেওয়াজ, বীনা মজুমদার, ন্যান্সী খান, সিরাজুম মনিরা মেরী, গাজী জুয়েল, শাহনাজ বেগম, সুমাইয়া ইসলাম অন্তু, সুফিয়া মেগলা, জেরিনা মাইশা, সামিরা ইসলাম, মনিকা, নিয়াজুল হক নিয়াজ, কাজী জামান বিটু প্রমুখ।

শেষে মেলার বিশেষ আকর্ষণ র‌্যাফেল ড্র বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। র‌্যাফেল ড্র প্রাইজ স্পন্সরদের মধ্যে ছিল : ১ম পুরস্কার টিভি : পসরা গ্রোসারি, ২য় পুরস্কার ল্যাপটপ : সিপিএ আহাদ আলী, ৩য় পুরস্কার ট্যাবলেট : রোজী হোসেন (রোজী বিউটি সেলুন), ৪র্থ পুরস্কার ট্যাবলেট : মোহব্বত আলী খন্দকার (সাংগঠনিক সম্পাদক, ব্যান্ডস)।

মেলার বিভিন্ন পর্বে বক্তারা ব্রঙ্কসকে আরো এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, ব্রঙ্কস এখন আর অবহেলিত নয়। সিটির অন্যতম সমৃদ্ধ এলাকায় পরিণত হয়েছে। নিউইয়র্কে একমাত্র ব্রঙ্কসেই রয়েছে সিটি কাউন্সিল অনুমোদিত বাংলা বাজার এভিনিউ, যা নিউইয়র্কের আর কোথাও নেই। ব্রঙ্কস নানা কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে ওঠছে। আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তারা।

এটর্নি মঈন চৌধুরী নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সিপুলভেদা, কাউন্সিলম্যান রুবিন দিয়াজসহ অন্যান্য নির্বাচিত কর্মকর্তাদের অফিসে বাঙালীদের নিয়োগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অনুষ্ঠানে স্টেট সিনেটর লুইস সিপুলভেদা, কাউন্সিল মেম্বার রুবিন ডিয়াজ, ব্রঙ্কস বোরো প্রেসিডেন্ট রুবিন ডিয়াজ জুনিয়ার যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নে বাংলাদেশী কমিউনিটির ভূমিকার প্রশংসা করেন।

আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মেলায় আগত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রবাসীদের নির্মল বিনোদন, বাঙালী সংস্কৃতি ও দেশীয় পণ্যকে তুলে ধরার প্রয়াসে আমরা প্রতি বছরই এই মেলার আয়োজন করি। গত ৯ বছর ধরে চলছে এ পথমেলা আয়োজন। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, নতুন প্রজন্ম  ও মূলধারায় বাংলাদেশকে তুলে ধরার প্রয়াসে আমাদের এ যাত্রা অব্যাহত থাকবে।

মেলার আয়োজকরা মিডিয়া সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আশাতীত সফল হয়েছে এ মেলা। বিপুল লোক সমাগম আমাদের ভবিষ্যতের জন্য আরো আশাবাদী করে তুলেছে। সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। সংগঠনের নের্তৃবৃন্দসহ মেলায় আগত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত