সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুলাই, ২০১৫ ১৭:১০

নিউইয়র্কে গাফফার চৌধুরীর সমাবেশে বাধা, নেপথ্যে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকেরা

জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে এক অনুষ্ঠানের বক্তব্যের জন্য একুশের গানের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরীরকে ‘নাস্তিক’ ও ‘মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে নিউ ইয়র্কে তার কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকরা।

স্থানীয় সময় রোববার বিকালে জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি সেন্টারে ‘আওয়ামী পরিবার’ ব্যানারে ওই সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে এই পার্টি সেন্টার কর্তৃপক্ষ সমাবেশ আয়োজনে উদ্যোক্তাদের কাছে অপারগতা প্রকাশ করেন। সংবাদ সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

সমাবেশের আয়োজকদের অন্যতম শরাফ সরকার বলেন, “একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের বিরুদ্ধে নিউইয়র্কে ইতিপূর্বে যারা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে, তাদের পক্ষ থেকে হুমকির কারণে তারা পার্টি হলে সমাবেশ করতে দিতে চাননি।”

এর পর তাৎক্ষণিকভাবে ব্রুকলিনে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের মিলনায়তনে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া হলে এর সামনে একদল লোক জড়ো হয়ে গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘মুরতাদ’, ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বিক্ষোভ করে।

এসময় অন্যান্যের বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা হেলালউদ্দিন, স্থানীয় বায়তুল জান্নাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, বাংলাদেশি আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম, মো. শহীদুল্লাহ, মাওলানা সাফায়েত ও মাহবুবুর রহমান।

‘আজকের প্রতিবাদ কাদের বিরুদ্ধে- নাস্তিক গাফ্ফারের বিরুদ্ধে’, ‘গাফফারের চামড়া তোলে নেব আমরা,’ ‘যেখানে গাফফার-সেখানেই প্রতিরোধ’- এই স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা, তারা গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি জুতাও দেখান।

সমাবেশের জন্যে নির্ধারিত মিলনায়তনের দরজা বাইরে থেকে আটকে দেন বিক্ষোভকারীরা। তখন ভেতরে থাকা লোকজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে খরব পেয়ে আয়োজকদের অন্যতম নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাকারিয়াকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে তার কাছের মসজিদে চলে যান। 

ওই সময় নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরনবী কমান্ডার পুলিশকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে গেলে কর্মকর্তার সামনেই বেশ কয়েকজন তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

পুলিশ উভয় পক্ষকেই শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে –এমন কিছু করতে নিষেধ করলে সেখানেও গাফফার চৌধুরীর সমাবেশ আর করা যায়নি। পুলিশ চলে যাওয়ার পর সমাবেশের আয়োজকদের পক্ষে নূরনবী কমান্ডার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দুয়েকজন নেতার আসকারা পেয়ে জামাত-শিবির এবং বিএনপির কট্টরপন্থিরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে।

“নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিনের যে টানাপড়েন চলছে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তিশালী কলামনিস্ট গাফফার চৌধুরীকে ‘ভিকটিম’ করা হচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে।’

জাকারিয়া চৌধুরী বলেন, “জামাত-শিবিরের দোসরদের যখন পুলিশ তাড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একজন নেতার লেলিয়ে দেওয়া কয়েকজন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন প্রবীন রাজনীতিক নূরনবী কমান্ডারকে।”

এদিকে নিউইয়র্ক সিটির এস্টোরিয়ায় ‘মদিনার আলো’ নামের একটি সংস্থার আয়োজনে তারাবির নামাজ শেষে ইমাম মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, “নাস্তিক মোরতাদ গাফফার চৌধুরীর শাস্তি চান আমাদের এখানকার সকল মুসল্লি এবং তাকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে ঢিল ছুঁড়ে মেরে ফেলতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহসভাপতি গিয়াস আহমেদ বলেন, “অমার্জনীয় অপরাধ করেছেন গাফফার চৌধুরী। এর শাস্তি তাকে ভোগ করতেই হবে।”

আব্দুল গাফফার চৌধুরী এখন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন। নিউ ইয়র্কে বেশ কটি মসজিদের ইমামসহ বিক্ষোভকারীরা ‘যেখানে গাফ্ফার চৌধুরী- সেখানেই প্রতিরোধ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে ‘বাংলাদেশ : অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির বিবর্তনের ইতিহাস বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এক পর্যায়ে ভাষা ও ধর্মের ভিন্নতা তুলে ধরে গিয়ে কলামনিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘এখন যেটাকে আরবি ভাষা বলা হচ্ছে, সেই ভাষাতে কাফেররাও কথা বলতো। আজকে আরবি ভাষার যে সমস্ত শব্দ আমরা ব্যবহার করি, সবই কাফেরদের ব্যবহৃত ভাষা।

“যেমন আমরা বলি, আল্লাহর ৯৯ নাম, সবগুলোই কিন্তু কাফেরদের দেবতাদের ভাষা ছিল। রাহমান, গাফ্ফার ও গফুর সবই কাফেরদের ব্যবহৃত নাম ছিল। এখন সেগুলো ইসলাম ‘এডপ্ট’ করেছে। আজকে বাংলা ভাষায় ‘এডপ্টিং’ শক্তি আছে যে, বাংলা ভাষাকে আজকে দেখতে পাই সবচেয়ে সমৃদ্ধ ভাষা। এবং এই ভাষায় আরবি, ফার্সি থেকে শুরু করে যে কোন প্রকার ভাষা ‘এডপ্ট’ করা যায়।”

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এ কে এ মোমেন বলেন, “গাফফার চৌধুরীর এ বক্তব্য বাংলাদেশের কোনো কোনো দৈনিকে যথাযথভাবে প্রকাশিত না হওয়ায় তা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।”

এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ওই বক্তব্যে ‘আল্লাহকে কটাক্ষ’ করা হয়েছে দাবি করে এজন্য তার নিন্দা জানিয়ে দূতাবাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত