সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৮:৫৭

প্রবাসীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস

নিউইয়র্কে বিজনেস সম্মেলন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে এই ব্যাপারে সরকারের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিপুল প্রয়োজন এবং সুযোগ আছে। এখন সহজ বিনিয়োগ নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগে আকর্ষণীয় প্রণোদনা এবং সর্বোচ্চ মুনাফা লাভেরও সম্ভাবনা রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কে আইন দ্বারা সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। বিনা বাধায় লাভ এবং আসলসহ পুঁজি প্রত্যাবাসন সুবিধা রয়েছে।

সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে আমেরিকান বাংলাদেশি বিজনেস এলায়েন্সের ১০ম বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।

এবিবিএ’র আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং জয়েন্ট মেম্বার সেক্রেটারি এএফ মিসবাহউজ্জামান ও নিউজ প্রেজেন্টার শামসুন নাহার নিম্মির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথি সেলিম উদ্দিন এমপি, এফবিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, আল-হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান নাসির, সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরী, এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন, এবিবিএ’র সদস্য সচিব ইয়াকুব এ খান, সিপিএ, এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ার শাহ নেওয়াজ, চিফ কো-অর্ডিনেটর ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এন মজুমদার ও তারেক হাসান খান, কো-কনভেনর এজে বাবুল, ব্যবসায়ী নেতা জাকারিয়া মাসুদ জিকো, এটর্নি হাসান মালিক, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, এবিবিএ’র উপদেষ্টা নাসির আলী খান পল, রেজাউল করীম চৌধুরী, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এলিজাভেদ ক্রাউলি।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন এক্সিকিউটিভ কো-কনভেনর বিলাল চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবিবিএ’র আহ্বায়ক মইনুল ইসলাম।
 
বিজনেস সম্মেলনের মূল পর্ব শুরু হওয়ার আগে এবিবিএ’র আয়োজনে ‘বিজনেস নেটওয়ার্কিং গ্রুপ’র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, নতুন শিল্প কারখানা এবং সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রবাসীরা যার যার সুবিধাজনক অঞ্চলে সহজে সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

সরকার প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসও চালুর কথা উল্লেখ করে বলেন, আগের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন প্রবাসীদের বিনিয়োগের সহায়তা উদার। প্রবাসীদের বিনিয়োগবান্ধব সরকারের এ সুযোগ গ্রহণ করার উৎকৃষ্ট সময় এখনই।

এফবিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুব ভাল অবস্থানে। প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ অগ্রগতি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩য় শীর্ষ সবজি উৎপাদনকারী, ৪র্থ শীর্ষ চাল উৎপাদনকারী এবং তৃতীয় শীর্ষ মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই বাংলাদেশ শীর্ষ রপ্তানিকারকের কাতারে উঠে আসবে। তিনি প্রবাসীদের বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশ উন্নয়নে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রবাসীদের অবদানের প্রশংসা করে মাহতাবুর রহমান নাসির প্রবাসীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তিনি সকলকে বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৈধ চ্যানেলে অর্থ প্রেরণের পর সে অর্থ পরে ফেরত আনার সুযোগ থাকে।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। বাংলাদেশি-আমেরিকান ব্যবসায়ীরা অর্থ উপদেষ্টার কাছে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

এবিবিএ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে প্রবাসীরা ব্যাপক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে আগ্রহী। দেশে বিনিয়োগের অবারিত সুযোগ চান বাংলাদেশী-আমেরিকান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বাংলাদেশ-আমেরিকার মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারের আরও আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি ও আয়োজক কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন খানস টিউটোরিয়ালের চেয়ারপার্সন নাঈমা খান, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বদরুন নাহার খান মিতা ও সিনিয়র লিগ্যাল কনসালটেন্ট নাসরিন আহমেদ।

অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ইমাম কাজী কায়্যূম, পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন ডা. টমাস দুলু রায় এবং পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন তারক গাইন। এবিবিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত সাঈদুর রহমান মান্নানের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এর আগে এবিবিএ’র ১০ম বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনের মূল পর্ব শুরু হওয়ার আগে নিউইয়র্কে ‘বিজনেস নেটওয়ার্কিং গ্রুপ’ আয়োজিত বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ এবিবিএ’র সদস্য সচিব বিশিষ্ট সিপিএ ইয়াকুব এ খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।

এবিবিএ’র বার্ষিক বিজনেস সম্মেলনের প্রথম পর্বের এ ওয়ার্কশপে আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট কমিউনিটি এক্টিভিস্ট মোহাম্মদ এন. মজুমদার, মাস্টার অব ল, এইচএবি ব্যাংক’র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল আহমেদ, চেজ ব্যাংকের ম্যানেজার জুবের চৌধুরী, বিশিষ্ট রিয়েলেটর মোহাম্মদ জন ফাহিম ও এটর্নি ব্রুশ ফিসার।

শুরুতে সিপিএ ইয়াকুব এ. খান ‘বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপ’র লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ব্যবসা শুরুর আগে করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের ছাড়াও আইনজ্ঞদের সাথে খোলামেলা পরামর্শ করা উচিত। ব্যবসায় সফলতার জন্য অভিজ্ঞতা, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, উন্নত কাস্টমার সার্ভিস, ভালো লোকেশন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, সুন্দর প্রেজেন্টেশন, ছোটখাটো বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া, হিসাব-নিকাশে স্বচ্ছতা, ব্যবসায় সময় দেয়া, টিম ওয়ার্ক, মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ক্রেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, সর্বোচ্চ সেবা প্রদান, দূরদৃষ্টি, আধুনিক সিস্টেমসহ ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে।
 
ওয়ার্কশপে মোহাম্মদ এন মজুমদার বলেন, ব্যবসায় যেমন লাভবান হওয়া যায়, তেমনি লোকসানেরও নানা ঝুঁকি থাকে। সঠিক আইনকানুন জেনে ব্যবসায় নিয়োজিত হলে লাভবান হওয়া যায়, আর লোকসানের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়।

অন্যান্য আলোচকরা ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে অতি প্রয়োজনীয় পরামর্শ তুলে ধরেন। ব্যবসা শুরুর পূর্বে যে সকল বিষয় বিবেচনায় রাখা দরকার, ব্যবসা পরিচালনায় জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব, একজন উদ্যোক্তার আইনি বিষয়ে করণীয়, ব্যাংকিং-এর গুরুত্ব, ফাইনেন্সিয়াল ডাটা, রিপোর্ট পর্যালোচনাসহ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তারা। সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবসার ধরন, পুঁজি, ব্যাংক লোন, এ্যামপ্লয়ি, কাস্টমার সার্ভিস, লোকেশন, আয়-ব্যয় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসহ ব্যবসার খুঁটিনাটি সকল বিষয়ই তুলে ধরেন। পরে আলোচকরা উপস্থিত ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে সংগীত পরিবেশন করেন প্রবাসের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রানো নেওয়াজ ও অপু রহমান। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত