জুয়েল রাজ, লন্ডন থেকে

০১ অক্টোবর, ২০১৮ ২০:৫৭

ব্রিটেনে কারি শিল্পে নতুন সংযোজন আরিটা এওয়ার্ড

সফলভাবে সমাপ্ত হলো বিলেতের কারি শিল্পে নতুন সংযোজিত এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট এন্ড টেইকওয়ে এওয়ার্ড (ARTA, আরটা)। ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলের ভোক্তাদের ভোটে স্বীকৃত সফল এশিয়ান রেষ্টুরেন্ট গুলো থেকে অঞ্চল ভিত্তিক বাছাইকৃত রেষ্টুরেন্ট গুলোকে দেয়া হয় এই এওয়ার্ড। এই পদকের মূল আকর্ষণ ছিল ৫০ হাজার পাউন্ডের (বাংলাদেশী টাকায় অর্ধকোটির বেশী মূল্যের) সেরাদের সেরা অর্জন এওয়ার্ড। যা এই প্রথম বার কোন কারি এওয়ার্ডে সংযোজিত হলো। অন্যান্য কারি এওয়ার্ডগুলোতে শুধুমাত্র ক্রেস্ট এবং সার্টিফিকেট দেয়া হলেও আরিটা এওয়ার্ডটি ভিন্নমাত্রা পায় এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এর কারণে।

লন্ডনের পাঁচতারকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত হয় ‘আরটা’র এই প্রথম এওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এমপি, জাতীয় রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সেলিব্রেটিসহ ব্রিটিশ সোসাইটির উচ্চ পর্যায়ের ব্যাক্তিরা। এছাড়াও সারা দেশ থেকে আগত রেষ্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অঞ্চল ভিত্তিক সফল রেষ্টুরেন্টগুলোকে স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যমানের সেরাদের সেরা এচিভমেন্ট এওয়ার্ডও প্রদান করা হয় এই ‘আরটা’ নাইটে। এই এচিভম্যান্ট এওয়ার্ড লাভ করেন এসেক্স ‘দ্যা মহারাজা’ রেষ্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ সিরাজ আলী। তাঁর হাতে এওয়ার্ড তুলে দেন প্রবীণ ব্রিটিশ রাজনীতিক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির লীডার স্যার ভিন্স কেবল। এওয়ার্ড তুলে দিতে গিয়ে প্রবীণ এই রাজনীতিক ব্রেক্সিট পরবর্তী কারি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ব্রিটিশদের খাদ্যাভ্যাস বদলে দেয়া এশিয়ান কারী আজ স্টাফ সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। ব্রেক্সিট কার্যকর হলে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের বাইরে থেকে স্টাফ যোগানের আশ্বাস যে অসার ছিলো এটিতো এখন দিবালোকের মত সত্য। ‘ব্রেক্সিট বেদনাদায়ক ও ব্যয়বহুল’ এমন মন্তব্য করে স্যার ভিন্স কেবল আশা প্রকাশ করে বলেন, ব্রিটিশ কারি  মাল্টিকালচারালের ব্রিটিশ নাগরিকদের এক টেবিলে বসায়, ব্রেক্সিট সংকট মোকাবেলায় রাজনীতিকদেরও এভাবে ‘ওয়ান নেশন’ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করুক এই শিল্প।

মূলধারার টিভি প্রেজেন্টার, সেলিব্রেটি শেফ এইনসিল  হ্যারিয়ট এবং বিবিসি ওয়ার্ল্ড সংবাদ পাঠিকা সামান্থা সিমন্ডস এর প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত জমকালো এই ‘আরটা’ নাইটে উপস্থিত ছিলেন বলিউডের মেলোডি  কুইন আলকা ইয়াগনিক।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ‘আরটা’ ফাউন্ডার এন্ড সিইও মোহাম্মদ মুনিম সালিক। অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, এশিয়ান কারি শিল্প যে ব্রিটিশ বিজনেস সেক্টরের অন্যতম মহীরুহ, এই সেক্টরটি যে ব্রিটিশদের হাউজহোল্ড ব্রান্ড, সেটি জানান দিতেই আজকের এ ‘আরটা’ নাইট।

তিনি বলেন, সকলের সহযোগিতায় ‘আরটা’র যে যাত্রা শুরু হলো এটি আমরা নিয়ে যেতে চাই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। প্রথাগত নয়, ব্যতিক্রম হতে চায় ‘আরটা’। পূর্ব প্রজন্মের রেখে যাওয়া এই শিল্পে বর্তমান প্রজন্মের মেধা সম্পৃক্তি ঘটাতে চায় এই প্লাটফর্ম। তিনি বলেন, সারা দেশের সফল রেষ্টুরেন্টগুলো বাছাইয়ে মূল ভূমিকা রেখেছেন এই সেক্টরের প্রাণ খ্যাত কাস্টমাররা। নিজের প্রিয় রেষ্টুরেন্টটিকে সফলতার তালিকায় দেখতে চাওয়ার কাস্টমারদের এই যে স্বপ্ন এটিই হলো কারী শিল্পের মূল শক্তি। এই শক্তিকে সাথে নিয়েই সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে চায় ‘আরটা’।

উল্লেখ্য প্রতিবছর এই কারি শিল্প থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড ব্রিটেনের অর্থনীতিতে যোগ হয়।  

ব্রিটেনের জনপ্রিয় এ শিল্পটিতে এখন জনবলের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। সে কারণেই দাবি উঠেছে অভিবাসন নীতির নতুন করে পর্যালোচনার। ব্রিটেন জুড়ে  প্রায় ১২ হাজার  রেস্তোরাঁ। তারাও মূলত এখন শঙ্কিত যে দিনকে দিন যেভাবে যুক্তরাজ্যে এশিয়ান রেস্তোরাঁর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাতে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী ২৯ হাজার পাউন্ডের বেশি আয় এবং ভালো ইংরেজি বলতে পারা সহ আরও কিছু শর্ত পূরণ করলেই কেবল যুক্তরাজ্যে কাজের অনুমতি পাচ্ছে একজন শেফ। এই সেক্টরে নন-ইউরোপিয়ান মাইগ্রেন্টরা কাজ করলেও তাদের দিয়ে সব কাজ করানো সম্ভব নয়। এই সেক্টরকে টিকিয়ে রাখতে হলে বাইরে থেকে শেফ নিয়ে আসা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। আরিটা এওয়ার্ডেও বক্তারা সহজ ভিসানীতির জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত