সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ১২:৫৫

নিউ ইয়র্কে গ্রেপ্তার বিচারপতি সিনহার ভাতিজা পরিচয়ের রনজিৎ

যুক্তরাষ্ট্রে চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ভাতিজা রনজিৎ সিনহা। 

সিলেটের কমলগঞ্জের রনজিৎ (৪৮) নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে বসবাস করতেন। ২০১৫ সালে হাডসন সিটি সংলগ্ন সেথাম সিটির ৩১০ রিজোর হিল রোডে মুনলাইট গ্যাস স্টেশনে কাজ নিয়ে সেখানে যান তিনি।

সেথাম সিটিতে মুনলাইট গ্যাস স্টেশনে কর্মরত অবস্থায় বিপুল অর্থ চুরির মামলায় সম্প্রতি গ্রেপ্তার হন রনজিৎ। গত ১৫ নভেম্বর তাকে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা কম শাস্তি পেতে দোষ স্বীকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেটি হচ্ছে ৫ বছরের জেল এবং চুরিকৃত সমুদয় অর্থ কিস্তিতে পরিশোধ।

তবে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রনজিৎ দোষ স্বীকার করতে চাইছেন না। কারণ তাহলে জেল খাটার পরই তার গ্রিনকার্ড বাতিল করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে ইমিগ্রেশন বিভাগ।

এদিকে কলম্বিয়া কাউন্টি ডিসট্রিক্ট এটর্নি পোল সিজেজকা আসামি রনজিৎকে জানিয়েছেন, স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার না করলে চুরির দায়ে কমপক্ষে ১২ বছরের জেল খাটতে হবে তাকে।

জানা যায়, ওই গ্যাস স্টেশনটির মালিক বাংলাদেশি সাঈদ মোহাম্মদ খোকন ব্যবসার টাকার হিসেবে গরমিল পেয়ে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে বুঝতে পারেন যে রনজিৎ অর্থ চুরি করছেন। ২০১৬ সালে ঘটনাটি ধরার পর তিনি পুলিশে অভিযোগ করলে রনজিৎ গা ঢাকা দেন। গত সেপ্টেম্বরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানা যায়, সিলেটের কমলগঞ্জের সন্তান রনজিৎ (৪৮) নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে ৩৫৫৪ রচেম্ব্যুতে বসবাস করতেন। ২০১৫ সালে হাডসন সিটি সংলগ্ন সেথাম সিটির ৩১০ রিজোর হিল রোডে মুনলাইট গ্যাস স্টেশনে কাজ নিয়ে সেখানে যান। বাংলাদেশী মালিক সাঈদ মোহাম্মদ খোকন তার ওপর ভরসা করেন পুরোপুরি। অর্থাৎ ঐ গ্যাস স্টেশনের আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে কোন টেনশনে ছিলেন না তিনি। কিন্তু মাস ছয়েক পরই দেখতে পান যে বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। এরপর গোপনে যাচাইয়ের পন্থা অবলম্বন করেন। সিসিটিভিতে দেখতে পান যে, রনজিৎ সকালে স্টোরে গিয়েই ক্যাশ বাক্স খুলে বেশ কিছু ডলার নিয়ে তা দিয়ে একই স্টোরের লটারির টিকিট ক্রয় করেন। প্রতিদিনই লটারি খেলেন চুরিকৃত ডলারে। একবার সাড়ে ৭ হাজার ডলার জয়ী হলে সেই পুরষ্কারের অর্থ ড্র করেন নিউইয়র্কে এসে আরেকটি স্টোর থেকে। লটারির রেকর্ডে এটিও উদঘাটনে সক্ষম হন খোকন। এটি ২০১৬ সালের ঘটনা।

এরপর বিষয়টি কলম্বিয়া কান্ট্রি পুলিশকে অবহিত করা হয়। সে মামলার নম্বর ২০১৯২২৪২। শুরু হয় গোপনে তদন্ত। টের পেয়ে রনজিৎ আত্মগোপন করেন। তদন্ত শেষে রনজিতের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয় এবং তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়। স্টোরের মালিকও ভেতরে ভেতরে সন্ধান করেন রনজিৎকে। কিন্তু খুঁজে পাননি। এরইমধ্যে রনজিৎ গাড়ি চালানোর সময় মহাসড়ক পুলিশের কাছে ট্রাফিক ভায়োলেশনের জন্যে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হলে তার ব্যাকগ্রাউন্ড খতিয়ে দেখার সময়ই সেপ্টেম্বরের শেষার্ধে গ্রেফতার হন রনজিৎ। শুরু হয় মামলা। জামিন লাভেও সক্ষম হয়েছেন তিনি।

সাঈদ মোহাম্মদ বলেন, “বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির ভাতিজা হিসেবে আমি তাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। তাকে কাজ দিয়ে তার আর্থিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। তবে তার চুরির স্বভাবে পরিবর্তন ঘটেনি।”

তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিদেশ পাড়ি জমিয়ে এস কে সিনহা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে থাকা অবস্থায় রনজিৎ তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলেন।

সাঈদ বলেন, রনজিৎ যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে ঢাকায় ‘আদম ব্যবসা’ করতেন। তাতেও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

রনজিতের মামলা প্রসঙ্গে কলম্বিয়া কান্ট্রি ডিসট্রিক্ট এটর্নি অফিস থেকে জানা গেছে, সিসিটিভি এবং নিউইয়র্ক স্টেট লটো কোম্পানির সরেজমিনে অনুসন্ধানে সবকিছু সত্য বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তাকে চুরির দায়ে জেল খাটতেই হবে। তার সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী। এরপরই দণ্ড ঘোষণা করা হবে।

‘রায়ে শাস্তি যতদিনই হউক তা ভোগের পরই রনজিতকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখোমুখি হতে হবে, কারণ তিনি সিটিজেন নন। এসাইলামের মাধ্যমে পাওয়া গ্রীণকার্ড বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী বাতিল করেই তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে’-জানান নিউইয়র্কের খ্যাতনামা একজন এটর্নি। 

এদিকে বহুল আলোচিত-সমালোচিত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ভাতিজা হিসেবে পরিচয় দেয়া রনজিতের চুরি-কাণ্ডে প্রবাসেও নানা গুঞ্জন উঠেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত