নিউজ ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০১:৩৮

শিল্পাচার্য জয়নুলের জন্মশতবার্ষিকী পালিত

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন । বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে প্রথমেই যার নাম বলতে হয় তিনি হলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন

বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। শনিবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে বছরব্যাপী এসব অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় পর্যায়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন শিল্পাচার্যের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসমূহের পক্ষ থেকেও এ সময় পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ চৌধুরী ও জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক ওদুদুল বারী চৌধুরীর নেতৃত্বে স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ শিল্পাচার্যের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ ছাড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, কপিরাইট অফিস, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জয়নুল আবেদিনের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

শিল্পাচার্যের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আবহমান সংস্কৃতির অন্যতম একটি শক্তিশালী উপাদান হলো চিত্রশিল্প। এদেশের চিত্রশিল্পের পুরোধা ব্যক্তিত্ব শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। তাঁর হাত ধরে আমাদের চিত্রকলা যাত্রা শুরু করেছে, সমৃদ্ধ হয়েছে।

তাঁর কর্ম, সৃজনশীলতা, চেতনা ও জীবনদর্শনকে আমাদের মধ্যে ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে তাঁর অসাধারণ শিল্পকর্মগুলো সম্পর্কে জানাতে হবে, যাতে তারা অনুপ্রাণিত ও উদীপ্ত হতে পারে।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্পাচার্যের শিল্পচর্চা ছিল বৈচিত্রময়। পারিপাশ্বিক বাস্তবতার পাশাপাশি তিনি রং-তুলির ছোঁয়ায় এদেশের মানুষ, প্রকৃতি ও লোকজ সংস্কৃতিকে ক্যানভাসে তুলে এনেছেন এক অনন্য দক্ষতায়।

এ সময় সংস্কৃতি মন্ত্রী জয়নুলের কর্ম, চেতনা ও জীবনদর্শনকে সবার মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান।

জয়নুল সম্মাননা :
শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী অধ্যাপক গোলাম মোহাম্মদ শেখ এবং বাংলাদেশের শিল্পি অধ্যাপক সমরজিৎ রায় চৌধুরী ‘জয়নুল সম্মানা’ লাভ করেছেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. অ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সহধর্মিনী মিসেস জাহানারা আবেদিন এবং বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন এবং শিল্পী রফিকুন নবি।


শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন ।
বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে প্রথমেই যার নাম বলতে হয় তিনি হলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ।১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে একটি শিল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আনুভুত হয় ।শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন এর নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ন্যাশনাল মেডিকেল স্কুলের একটি জীর্ণ বাড়িতে মাত্র ১৮ জন ছাত্র নিয়ে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট এর যাত্রা শুরু হয় ।শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ছিলেন এ প্রতিষ্ঠান এর প্রথম শিক্ষক ।১৯৫১ সালে এটি সেগুনবাগিচার একটি বাড়িতে স্থানান্তরিত হয় ।১৯৫৬ সালে গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউট শাহবাগে স্থানান্তর করার পর ১৯৬৩ সালে এটি একটি প্রথম শ্রেণীর সরকারী কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায় । তখন এর নামকরণ করা হয় পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় নামে এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় নামে । শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ১৯৪৯-১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । ১৯৮৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এই সরকারী কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরভুক্ত হয় । শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সোনার গাঁয়ে লোকশিল্প যাদুঘর ও মায়মনসিংহ জয়নুল সংগ্রহশালাও গড়ে তোলেন  তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে- দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড় এবং আরো অনেক ছবি। ১৯৭০ সালে গ্রাম বাংলার উত্‍সব নিয়ে আঁকেন ৬৫ ফুট দীর্ঘ তাঁর বিখ্যাক ছবি নবান্ন।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত