নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০১:৩৮

‘এই দেশেতে স্বার্থপরদের চলছে রঙের খেলা’

মঞ্চে উঠেই দলনেতা কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য বললেন, আমরা এখানে গান গাইতে আসিনি। করিমের গান আপনারা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো গান। আমরা এখানে এসেছি পূজা করতে। প্রার্থনা করতে। আমরা বাউল ধর্মে দিক্ষিত নই। তবু করিম শাহকে আমরা মুর্শিদ গন্য করি। তাই করিম শাহ জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁর প্রার্থনা করতে এসেছি।

শুক্রবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে বাউল আবদুল করিম জন্মশতবার্ষিকী উৎসবের শেষ দিনে এভাবেই শেষের শুরু করে দোহার।

এরপরই যথারীতি বন্দনার মাধ্যমে নিজেদের পরিবেশনা শুরু করে দোহার। এবার বাউল করিমকে নিয়ই বন্দনা করে কলকাতার এই লোকগানের দলটি।

এরপর একে একে আবদুল করিমের জনপ্রিয়-অজনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে শোনায় দোহার। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে কালিকাপ্রসদের কথা। রাত ১২ টা পর্যন্ত গান কথা আর বাদ্যযন্ত্রের মোহময় আবেশে মাতোয়ারা হন দর্শকরা।

কালিকাপ্রসাদ বলেন, আবদুল করিমের জন্মশতবর্ষ উৎসব সেদিনই সফল হবে যেদিন আমরা তাঁর গানের কথা, তাঁর দর্শন বিশ্বাস করতে পারবো। তাঁর দর্শনে বিশ্বাস না করেই জন্মশতবর্ষ উৎসব করলে সেটা সফল হবে না। তখন হয়তো করিমের জন্মশতবার্ষিকী উৎসব রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবার্ষিকী উৎসব হয়ে যাবে।

কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে গান কিংবা গানের ফাঁকে ফাঁকে কথা। দোহার একে একে গেয়ে শোনায় আগে শাহ আবদুল করিমের গান ‘কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, ‘ফুরু থাকতে যে খেইড় খেলাইতাম’, ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’ ‘এই দেশেতে স্বার্থপরদের চলছে রঙের খেলা/ কোনো কাজে গেলেই কয় ঘুষ দিলা’, ‘তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো,’ ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’ ‘গাড়ি চলে না চলে না’সহ আরো বেশ কয়েকটি গান।

‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’ শুরুর আগে কালিকাপ্রসাদ বলেন, ‘‘আগের যতো বাউল আছেন তারা মনের মানুষকে খোঁজে গেছেন। আর করিম খুঁজেছেন সাধারণ মানুষকে। একদিন আমি এই বিষয়টি করিম শাহকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন- ‘আমিও তো মনের মানুষকে খোঁজি। কিন্তু মানুষকে না চিনলে মনের মানুষকে চিনবো কি করে’।’’

কালিকাপ্রসাদ বলেন, এ জন্যই করিম ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’-এর মধ্যেও লিখেন- ‘তত্ত্ব গান গেয়ে গেলেন যারা মরমী কবি/ আমি তুলে ধরি দেশের দুঃখ দুর্দশার ছবি/ বিপন্ন মানুষের দাবি করিম চায় শান্তি বিধান।’

প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী দোহারের কন্ঠে ভাটির স¤্রাট করিমের গান মুগ্ধ হয়ে শুনেন দর্শকরা। দোহারের গানের মাধ্যমেই শেষ হয় করিম জন্মশতবার্ষিকী উৎসবের সিলেট পর্বের আয়োজন। আয়োজকরা জানান, এবছর ভারত ও বাংলাদেশের ১১ টি স্থানে করিম উৎসব হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রালয়ের পৃষ্টপোষকতায় এই উৎসবের আয়োজন করে ‘আবদুল করিম জন্মশতবার্ষিকিী উদযাপন কমিটি’।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত