নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ২৩:৩১

করিমের গানের ভণিতা ব্যবহার না করাটা অপরাধ : কালিকাপ্রসাদ

আমাদের যে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তার মধ্যে নাগরিক বা আধুনিক সাহিত্য কতটুকু? তার মধ্যে প্রান্তিক সাহিত্যই তো বেশি। তার মধ্যে তো আ্ওয়ালের পদ্মাবতী, মনসামঙ্গল, বৈষ্ণব সাহিত্য, বাউল-ফকির- সবই তো প্রান্তিক সাহিত্য।- এমনটি বলেছেন কলকাতার লোকগানের দল দোহার’র শিল্পী কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।

বাউল আবদুল করিম জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে গান গাইতে সিলেট এসেছেন তিনি। শুক্রবার অনুষ্ঠান শেষে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম’র সাথে আলাপ করেন তিনি।

কালিকা বলেন, বাউল গান, লোকগানের একজন শিল্পী হিসেবে শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে রাষ্ট্রিয় উদ্যোগে এমন আয়োজন তো আমার জন্যও বিরাট পাওয়া। আমাদের ভাষা সংস্কৃতিকে তো এরাই বাঁচিয়ে রেখেছেন। এটা কেবল বাংলাদেশের উৎসব নয়। পুরো পৃথিবীর উৎসব। এবার বাংলাদেশে এসে দেখলাম পুরো দেশজুড়ে করিমের গান গাওয়া হচ্ছে। এবার বসন্তের আরেক নাম শাহ আবদুল করিম।

আবদুল করিমসহ বিভিন্ন বাউল-লোককবিদের গান ভুলভাবে গাওয়া সম্পর্কে কালিকাপ্রসাদ বলেন, লোককবিরা তো মুখে মুখে গান ছড়িয়ে দেন। একটা গান মানুষের মুখ থেকে মুখে যেতে যেতে তার চরিত্র খানিকটা বদলায়। করিমের গান যদিও লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে তবু তাঁর গানের মূল বাহন তো হচ্ছে মুখ। তাছাড়া লিখিত গানেরও একাধিক ভার্সন আছে। একেকটায় একক রকম শব্দের ব্যবহার আছে। তবে দুয়েকটা শব্দ এদিক ওদিক হলে মারাত্মক কোনো ইন্দ্রপতনও ঘটে না। তাঁর গনের ভাব-দর্শনটা হচ্ছে মূল কথা।

তিনি বলেন, করিম গেয়েছেন- ‘ভাবে করিম দীনহীন আসবে কী আর শুভদিন’। এই যে শুভদিনের প্রত্যাশা সেই বার্তাটা মানুষের কাছে দেয়া যাচ্ছে কী না, তিনি যে সমন্বয়ের কথা বলেছেন সেই সমন্বয়ের কথা আমার গানে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারছি কী না সেটাই হচ্ছে মূল কথা। তবে এক্ষেত্রে করিমের কথাটাকে ঠিক রেখেই মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে- যোগ করেন কালিকা।

কলকাতার বিভিন্ন শিল্পীরা করিমের গানের ভণিতা ব্যবহার না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গানের ভণিতা ব্যবহার না করাটা অপরাধ। করিমের গান গাইতে হলে তাঁর ভণিতাসহ গাইতে হবে। তাঁর কথায় গাইতে হবে। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা রয়েছে, যা আগেই বলেছি। এই সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। একদিনেও এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। রবীন্দ্রনাথের গানও তো একটা দীর্ঘসময় কথা পাল্টে গাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আগে করিমের ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গান ভণিতা ছাড়া গাওয়া হতো, লোকে জানতোই না এটা কার গান। এখন লোকে জানে এবং ভণিতাসহ-ই গায়।

কালিকাপ্রসাদ ভণিতা ব্যবহার না করাকে অপরাধ হিসেবে মন্তব্য করলেও গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিলেটে করিম জন্মশতবার্ষিকীর আরেকটি অনুষ্ঠানে এসে কলকাতার আরেক শিল্পী মৌসুমী ভৌমিক বলেছিলেন, ‘অনেক গান লেখককে ছাপিয়ে যায়। যে গান শিল্পীকে ছাপিয়ে যায় সেটাই স্থায়িত্ব পায়। রবী ঠাকুরের গানে তো কোনো ভণিতা নেই। তাই বলে কি রবী ঠাকুরের গান টিকে থাকেনি। আমার মা শাহ আবদুল করিমের 'আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম' এই গানটা জানেন। কিন্তু গানটি কে লিখেছেন তা জানেন না। কিন্তু করিমের গান তো তাঁর কাছেও পৌঁছেছে।"

শুক্রবার সিলেটটুডেকে দেয়া সাক্ষাতকারে কালিকাপ্রসাদ আরো বলেন, সাধকরা প্রাবন্ধিক না। তাঁরা তত্ত্বের কচকচানি করেন না। তাঁরা ম্যাজিক করেন। শাহ আবদুল করিম তাঁর গানে এই ম্যাজিক করে গেছেন। করিমের গান গাইলে পুরোটাই গাইতে হবে। আংশিক গাইতে হলে নিজে গান লিখেই গাওয়া ভালো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত