অরণ্য রণি

১৭ অক্টোবর, ২০১৬ ২১:৩৫

‘ছবি আঁকা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে উৎসাহ দিন’

'ছবি আঁকা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে উৎসাহ দিন'- সিলেটের সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আঁকা ‘প্রথম শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ২০১৬’-এর আমন্ত্রন পত্রে লেখা রয়েছে এই বাক্যটি।

কেনো এমনটি লেখা, জানতে চাইলে প্রদর্শনীর সাথে সম্পৃক্ত এক শিক্ষক বলেন, শিশুদের ছবি আঁকতে অনেক অভিভিবকই নিরুৎসাহিত করেন। কিন্তু ছবি আঁকার মাধ্যমে শিশুদের কল্পনার বিকাশ ঘটে। শিল্পবোধ জাগ্রত হয়। তাই আমরা শিশুদের ছবি আঁকায় উৎসাহ দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।

রোববার থেকে অগ্রগামী স্কুলে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী এ প্রদর্শনী। প্রথমবারের মতো এ আয়োজন চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যাবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল মনন গঠনে চারুকলা বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ চিত্রকর্ম গত প্রায় ছয় মাসের চেষ্টায় সম্পন্ন করা হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে চারুকলা বাধ্যতামূলক পাঠ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচির বাইরে আঁকাআঁকির প্রেরণায় এ আয়োজন করা হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ১৪৫ জন শিক্ষার্থীর আঁকা ১৬২টি চিত্রকর্ম নিয়ে এ প্রদর্শনী।

চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের হাতে আঁকা আবহমান গ্রাম বাংলার বিভিন্ন দৃশ্য। ঋতুকালীন বৈচিত্র্য, গ্রামের মানুষের বিভিন্ন কাজকর্ম ফুটে উঠে বিভিন্ন ছবিতে। ছবিতে ফুঁটে ওঠেছেন বিশিষ্টজনেরাও- আছে লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, চে গুয়েভারা থেকে বঙ্গবন্ধু। রং তুলিতে ফুটে ওঠেছে প্রকৃতির অপরুপ রুপ। সুন্দরবন, রাতারগুলের সৌন্দর্য ছবিতে ফুটে তুলেছে ছাত্রীরা। মুক্তিযুদ্ধের ছবির পাশাপাশি বাঙালি জাতির বিভিন্ন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিশ্রনেরও ছবি দেখা যায় এই প্রদর্শনীতে। এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে নীল চাষীদের অত্যাচারিত হওয়ার ছবিও।

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বীনব্রীজ, নতুন শহীদ মিনার, রাতারগুল, শাহী ঈদগাহর ছবিও এঁকেছে অগ্রগামীর শিক্ষার্থীরা।

নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী প্রতিভা কর্মকার ও ফারজানা আক্তার সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খুব ভালো লাগছে আমাদের। প্রথমবারের মত আমরা এই রকম চিত্র প্রদর্শনীর সুযোগ পেয়েছি। আমরা অনেক আনন্দিত। আমাদের ইচ্ছা প্রতিবছর আমরা এই চিত্র প্রদর্শনী করার। পড়ালেখার পাশাপাশি এটা আমাদের অনেক উপকার করবে।

প্রথম শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আহবায়ক ও বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. কবির খান সিলেটটুডে টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা প্রতিটি জাতীয় দিবসে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। ৩য়-৮ম শ্রেণীর অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের প্রবণতা কিছুটা কম দেখা যায়। এই প্রতিযোগিতায় ছাত্রীদের আগ্রহ দেখে আমরা মূলত প্রেরণা পাই এই চিত্রাংকন প্রদর্শনীর। গত বছর থেকেই আমাদের একটা পরিকল্পনা ছিল এই প্রদর্শনী করার। সেই লক্ষে আমরা বিদ্যালয়ের ২০১৬ এর ক্যালেন্ডারের এই প্রদর্শনীর সূচী প্রকাশ করি। স্কুলগুলোতে সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয় কিন্তু এইরকম চিত্র প্রদর্শনী মনে হয় না আর কোন স্কুল করেছে। এই চারুকলার মাধ্যমে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও মননশীলতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরো বলেন, চারুকলার শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র নাথের তত্ত্বাবধানে প্রায় হাজারখানেক ছবির মধ্যে ১৬২টি ছবি বাছাই করা হয় প্রদর্শনীর জন্য। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দিবসে আঁকা ছবি ও বিষয়ভিত্তিক ছবির সমন্বয়ে বাছাইকৃত ছবিগুলোই নির্ধারণ করা হয়েছে প্রদর্শনীতে। একজন শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ ৩টা ছবি আছে এখানে। আমরা সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এই শিল্পকর্ম প্রদর্শনী প্রতি বছর চালিয়ে যেতে পারবো বলে তিনি আশা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত