১৬ নভেম্বর, ২০১৬ ২০:৩১
“নানকা জাগে, তেভাগা জাগে; সিঁধু কানুর স্বপ্ন জাগে। হাজার হাজার ইলা ডাকে আয়রে আয়। আমার জমি আমার জান, টুকরাখানাও দিবাম নায়।”
খড় দিয়ে বানানো গোল বৃত্ত, তার ভিতরে মাটির হাড়ি, একপ্রান্তে ‘মহামান্য উন্নয়ন’। তার সামনে মাথা নত করে ক্রন্দনরত এক সাঁওতাল। এক সময় তার উপর হামলা চালায়, ভীত সন্ত্রস্ত সাঁওতাল প্রাণ বাঁচাতে তার ঘরে ঢুকলে সেই খড়ের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় মহামান্য উন্নয়নের পেঁটোয়া বাহিনী।
তারপর, রক্তস্নাত সেই সাঁওতাল রুখে দাঁড়ায়, হাতে তুলে নেয় তীর-ধনুক, বুক চেতিয়ে রুখে দাঁড়ায় মহামান্য উন্নয়নের বিরুদ্ধে, তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিবাদী ভঙ্গিতে রুখে দাঁড়ায় অন্যান্যরা।
মাত্র ১৫ মিনিটের অনবদ্য ইন্টার্যাকটিভ স্ট্রিট ড্রামা “ভূমিসূত্র” মনে করিয়ে দেয় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিঁধু-কানুদের রুখে দাঁড়ানোর সেই ঐতিহাসিক স্মৃতি।
১৮৫৫ ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও বিহারের ভাগলপুরে সংঘটিত সাঁওতাল বিদ্রোহ বা সান্তাল হুল এর স্মৃতি আবারো নবজাগরূক হয়ে উঠুক ২০১৬ সালের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের মধ্য দিয়ে।
গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে গুলি চালিয়ে উচ্ছেদের ঘটনার প্রতিবাদে সিলেটের অন্যতম নাট্য সংগঠন ‘নগরনাট’ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত শতাধিক মানুষের সামনে পরিবেশন করে এ ইন্টার্যাকটিভ স্ট্রিট ড্রামা ‘ভূমিসূত্র’।
“সাঁওতাল করেছে ভগবান রে, আমায় মানুষ করেনি ভগবান” এ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে সিঁধু-কানুদের জেগে উঠার বিপ্লবের মধ্য দিয়েই শেষ হওয়া এ সংলাপবিহীন নাটকটি কাঁদিয়েছে উপস্থিত দর্শকদের। সাঁওতালদের দুঃখ, কষ্ট ও বিপ্লব যেনো মূর্ত হয়ে উঠেছে নগরনাটের এ পরিবেশনায়।
স্ট্রিট ড্রামা ভূমিসূত্রে কুশীলব হিসেবে ছিলেন উজ্জ্বল চক্রবর্তী, সপ্তর্ষী দাস, রনি, তানভীর হাসান, অয়ন, প্রান্তর ও বিপ্র। এছাড়াও সঙ্গীতে ও সঙ্গতে ছিলেন অরূপ বাউল, অচ্যুৎ চক্রবর্তী বর্ষণ, কুতুব উদ্দিনসহ অন্যান্যরা।
আপনার মন্তব্য