নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ মার্চ, ২০১৭ ০১:২৩

মানবতার জয়গানে শেষ হলো ‘মানবিক সাধনার’ উৎসব

সব ধর্মই মানুষের জয়গান গেয়েছে। শ্রীমদভাগবত গীতায় বলেছে- মানুষ অমৃতের পুত্র। বাইবেল শরীফ বলে- মানুষ ইশ্বরের সন্তান। ত্রিপিটক বলেছে- সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা হলো মানুষ। কোরআন শরীফ বলে, মানুষ আশরাফুল মখলুকাত। অথচ এখন ধর্মের নামে চলছে মানুষ হত্যা। এরচেয়ে বড় অধর্মের কাজ আর কিছু হতে পারে না। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবকে হত্যা করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

বললেন শফি মণ্ডল। সিলেটে দশদিনব্যাপী মানবিক সাধনায় বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের শেষ দিনে সর্বশেষ শিল্পী ছিলেন তিনি।

ধর্মের নামে মানুষ হত্যার নিন্দা জানিয়ে শফি মণ্ডল গান ধরেন- 'আমি মন মন্দিরে পূজা দেব সত্যম শীবম অনন্তম/ আমি দেল কাবাতে নামাজ পড়ব/ আল্লাহ হু-আকবর ... হু-আকবর/আমি মন মন্দিরে পূজা দেব/ পড়ব নামাজ দেল কাবায়/ মসজিদ মন্দিরে যেতে বল না আমায়/ তোমরা মন্দির মসজিদে যেতে বল না আমায়।/ মানুষ যদি আদম সন্তান সৃষ্টি একজনার/ তবে ভিন্ন ভিন্ন ঘর হবে কেন ভিন্ন কেন আচার/ আমি ঘর হারা এক পথের মানুষ/ আপন করলো পথ আমায়। আরে জন্ম দেখি মরণ দেখি তাঁরে দেখি না/ অদৃশ্য তার প্রেমের বলি আমরা কজনা/ জগত জুড়ে রক্ত সাগর/কারে পায় কে বয়ে যায়...'

শফি মণ্ডল একে একে গেয়ে শোনান লালন সাঁই থেকে শাহ আব্দুল করিমের গান। ওপার বাংলার বাউল গান- 'তোমায় হৃদমাজারে রাখিবো ছেড়ে দেবো না' এবং 'কতো লক্ষজনম ভ্রমণ করে মানবজনম পেলাম শেষে'।

শাহ আবদুল করিমের গান গাওয়ার আগে শফি মণ্ডল বলেন, 'অনেকেই বলে থাকেন আবদুল করিম বাউল না। একদিন টেলিভিশনে এনিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। আমি উত্তরে বলেছি- নিজেকে নিজেকে তুচ্ছ করে গুরুর কাছে সমর্পণ করতে পারেন তিনি তো প্রকৃত বাউল। শাহ আবদুল করিম সেটা পেরেছিলেন।'

শফি মণ্ডল যখন মঞ্চে গান গাইছেন তখন মঞ্চের সামনে প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার দর্শক। সকলে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন শফি মণ্ডলের সাথে। সর্বমানবের এই জয়গানেই শুক্রবার শেষ হলো 'মানবিক সাধনার' এই উৎসব। সিলেটের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই আয়োজন শেষেও দর্শকের কণ্ঠে অতৃপ্তির সুর। এমন উৎসব আগামীতে আরো আয়োজনের আহ্বান তাদের।

এরআগে এই মঞ্চে গান পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রখ্যাত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি তিনিও গেয়ে শোনান শাহ আব্দুল করিমের গান।

শেষ দিনে বেলা চারটায় গীতিবিতান বাংলাদেশের শিল্পীরা দলীয় পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় হাসন রাজা মঞ্চের অনুষ্ঠান। এ সংগঠনের পরিবেশনার পর শিল্পী অনিন্দিতা চৌধুরী গান পরিবেশন করেন। সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

সমাপনী অধিবেশনের পর বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের শিল্পীরা দলীয় যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন। 

এদিকে, সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে বিকাল ৪টায় প্রদর্শিত হয় চলচ্চিত্র 'ঘাসফুল' এবং ৭টা ১৫ মিনিটে মঞ্চায়িত হয় নাট্যদল সুবচনের পরিবেশনায় মঞ্চ নাটক 'মহাজনের নাও'।

উল্লেখ্য, ২২ ফেব্রুয়ারি ১০ দিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন হয়। পুরো উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছিল জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাককে। ইনডেক্স গ্রুপ নিবেদিত এ উৎসবের সহযোগিতায় ছিল ঢাকা ব্যাংক। উৎসবের সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই।

সৈয়দ মুজতবা আলী এবং হাসন রাজা মঞ্চে প্রতিদিন অনুষ্ঠান হওয়ার পাশাপাশি শাহ আবদুল করিম চত্বরে বাদ্যযন্ত্র ও সিলেট অঞ্চলের লোকগানের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী; গুরুসদয় দত্ত চত্বরে কারুমেলা ও বেঙ্গল প্যাভিলিয়ন এবং কুশিয়ারা কলোনেডে স্থাপত্য প্রদর্শনী হয়েছে। রাধারমণ দত্ত বেদিতে অনুষ্ঠিত হয় সুবীর চৌধুরী আর্ট ক্যাম্প। এ ছাড়া উৎসব চলাকালে তিন দিনব্যাপী কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত