রাজীব রাসেল

২০ মার্চ, ২০১৭ ০০:১৪

আঁকে, আঁকায়, আঁকাতে চায় ‘চিত্রন’

'চিত্রন' সিলেটের একটি আঁকাআঁকি শেখানোর বিদ্যালয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটি সৃজনশীল ও স্বপ্নদর্শী জীবনব্যাপী শিখনের সুপরিসর ব্যবস্থা হিসেবে রূপ দেবার লক্ষে কতিপয় স্বপ্নদর্শী শিল্পানুরাগী ব্যক্তির উদ্যোগে 'চিত্রন' যাত্রা শুরু করে ২০০৭ সালের মার্চ মাসে।

চারুশিক্ষার বিদ্যালয় হিসেবে 'চিত্রন' কাজ করে চলেছে এমন একটি অঞ্চলে, যেখানে শিল্পকলার অনুশীলন ও প্রদর্শন নানাবিধ বাস্তব প্রতিকূলতার কারনে সুগম নয়। এ কথাতো সবারই জানা যে একজন মানুষের সার্বিক বিকাশের ক্ষেত্রে শিল্পকলার বিবিধ মাধ্যমে অনুশীলন জরুরী। এটি ছাড়া কোন মানুষের সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয়। ফলে একটি উন্নত জাতি গঠনে এসব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম।

'চিত্রন' এর গুরুত্বের জায়গাটা ঠিক এখানেই। এখানে শিশুদের সিলেবাসের চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি তাদের সৃষ্টিশীল চিত্রশিক্ষার অনুশীলন করানো হয়। শুধু বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় নম্বর প্রাপ্তির চাইতেও অনেক বড় লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগোচ্ছে 'চিত্রন'। শিশুদের পাশাপাশি এই অঞ্চলের তরুণদের চারুশিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। এডাল্ট ব্যাচ নামে একটি বিশেষ ব্যাচ তৈরি করে তরুণদের চিত্রকলায় প্রশিক্ষণ দিয়ে সৃষ্টিশীল কাজে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে 'চিত্রন'।

বেসিক ব্যাচ বা বি ব্যাচ হচ্ছে শিশুদের জন্য ব্যাচ। দক্ষতা এবং বয়সের স্তর অনুযায়ী এই ব্যাচে রয়েছে প্রাক প্রথম বর্ষ, প্রথম বর্ষ, ২য় বর্ষ ও ৩য় বর্ষ। আর এডাল্ট ব্যাচে রয়েছে ১ম থেকে ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ।

'চিত্রন' এর কার্যক্রম সম্পর্কে আরও জানতে মুখোমুখি হয়েছিলাম 'চিত্রন' এর পরিচালক চিত্রশিল্পী সত্যজিৎ চক্রবর্তীর সাথে। তিনি জানান, " 'চিত্রন' একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে যাচ্ছে এ অঞ্চলে। আপনারা জানেন, সিলেট একটি বিভাগীয় শহর হওয়া সত্ত্বেও এখানে নেই কোন চারুকলা মহাবিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলেও নেই কোন চারুকলা ইন্সটিটিউট। ফলে 'চিত্রন' একটি সামাজিক আন্দোলনের জায়গা থেকেই কাজ করে যাচ্ছে।"

তিনি আরো বলেন, "এখানে মূলত দুটি পর্যায়ে শ্রেণিভিত্তিক শিখনায়োজন রয়েছে। শিশু-কিশোরদের উপযোগী বি ব্যাচ বা বেসিক ব্যাচ এবং বড়দের উপযোগি এ ব্যাচ বা এডাল্ট ব্যাচ। বেসিক ব্যাচের আওতায় প্লে গ্রুপের ছাত্র থেকে ক্লাস নাইন পড়ুয়া পর্যন্ত যে কেউ ভর্তি হতে পারে। বয়স ও দক্ষতা বিবেচনা করে বিভিন্ন বর্ষে এদের ভর্তি করা হয়। আর এ ব্যাচ বা এডাল্ট ব্যাচে এসএসসি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বা তদুর্ধ যে কেউ ভর্তি হতে পারেন। সেক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কোন অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর আগ্রহকেই যোগ্যতা বিবেচনা করে 'চিত্রন'।"

প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে সত্যজিৎ বলেন, "আগেই বলেছি চিত্রনের প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ ছাড়াও রয়েছে আরো একটি বৃহত্তর স্বার্থ। শিল্প-সংস্কৃতিহীন কোন জাতি উন্নত সভ্যতা নির্মাণ করতে পারেনা। আর শিল্প শিক্ষার মূল লক্ষ্য হলো শিশু ও তরুণদের সৃষ্টিশীল ও মানবিক বোধ সম্পন্ন করে গড়ে তোলা।"

গত বছর চিত্রনের শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবি নিয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে 'চিত্রন উৎসব' শিরোনামে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় বলে জানান সত্যজিৎ চক্রবর্তী।

'আমরা আঁকি, আঁকাই, আঁকাতে চাই। এঁকে আঁকিয়ে ভাঙাতে চাই প্রভাত পাখির ঘুম।'- এমন শ্লোগানে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে (স্বপ্নীল-১৩/বি) ও রায়নগরে (বসুন্ধরা-৫) অবস্থিত চিত্রন চারুশিক্ষালয়ের দু'টি ক্যাম্পাসে নিয়মিত চলছে শিশু ও তরুণদের আঁকা শেখানোর কার্যক্রম। 'চিত্রন' এর ব্যাপারে আরও জানতে যোগাযোগ করা যাবে ০১৭১২৭৮৩২০৫ নম্বরে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত