সিলেটটুডে ডেস্ক

০৭ মে, ২০১৫ ০০:০০

ভাস্কর নভেরা আহমেদের জীবনাবসান

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের নিকটবর্তী শথমেলে দ্বীপে নিজের বাড়িতে মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় ঘুমের মধ্যে নভেরা আহমেদ মারা গেছেন বলে তার অফিসিয়াল ফ্যান পেইজ উল্লেখকারী একটি পেইজে এক পোস্টে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, আগামী সোমবার সকালে শথমেলে সমাধিস্থলে নভেরার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। খবর সূত্র: বিডিনিউজ।

তিনি ভাস্কর হামিদুর রহমান এর সাথে জাতীয় শহীদ মিনারের প্রাথমিক নকশা প্রণয়নে অংশগ্রহণ করছিলেন। দীর্ঘ অন্তরাল জীবনের পর ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারি থেকে প্যারিসে তাঁর রেট্রোসপেকটিভ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ভাস্কর্যশিল্পের অন্যতম অগ্রদূত নভেরাকে ১৯৯৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

৮৫ বছর বয়সী ভাস্কর নভেরা আহমেদ দীর্ঘকাল থেকে ফ্রান্সে  বসবাস করছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ চার দশক পর গত বছর ১৭ জানুয়ারি থেকে প্যারিসে তার শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়। তার আগে ১৯৭৩ সালে জুলাই মাসে প্যারিসে তার সর্বশেষ প্রদর্শনী হয়েছিল। শিল্পী হাশেম খান এক লেখায় বলেছেন, নভেরার বাবা ছিলেন এক্সাইজ অফিসার। ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) কুমিল্লায় বদলি হন তিনি। তার আগে কলকাতায় নভেরার শৈশব কাটার ইঙ্গিত পাওয়া যায় ওই লেখায়। তার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামে।

চারুকলার অধ্যাপক হাশেম খানের দেওয়া তথ্যমতে, ভাস্কর্য বিষয়ে পড়াশোনা করতে ১৯৫১ সালে লন্ডন যান নভেরা। লন্ডনের ক্যাম্বারওয়েল আর্ট স্কুলে লেখাপড়া করেন তিনি। সেখানেই শিল্পী হামিদুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয় তার। ১৯৫৭ সালে হামিদুর রহমান ও নভেরা আহমেদ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ শুরু করেন।

“শহীদ মিনারের জন্য অনেক মডেল জমা পড়লেও হামিদ-নভেরার ডিজাইনটিই নির্বাচিত হয়। প্রায় একমাস খেটে দুজনে ডিজাইনটি তৈরি করেছিলেন। ’৫৭-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কাজ চলে ’৫৮ সাল পর্যন্ত। কিন্তু শেষ হওয়ার আগেই মার্শাল ল জারি হওয়ায় শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।”

১৯৫৯ কিংবা ৬০ সালে নভেরা পাকিস্তানের লাহোর চলে যান বলে হাশেম খান জানান। ১৯৬১ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল এক্সিবিশন অব পেইন্টিং স্কাল্পচার অ্যান্ড গ্রাফিক আর্টস নামে এটি প্রদর্শনীতে তার ছটি ভাস্কর্য স্থান পেয়েছিল। প্রদর্শনীতে ‘চাইল্ড ফিলোসফার’ নামে তার একটি ভাস্কর্য ‘বেস্ট স্কাল্পচার’ পুরস্কার পায়।

হাশেম খানের তথ্য অনুযায়ী, লাহোরে কয়েক বছর থাকার পর নভেরা চলে যান ভারতের মুম্বাইয়ে। সেখান থেকে প্যারিসে গিয়ে আবার ফিরেছিলেন লাহোরে। তবে বেশি দিন সেখানে থাকেননি তিনি। বিভিন্ন দেশ ঘুরে শেষে প্যারিসেই স্থায়ী হন নভেরা আহমেদ।

নভেরার মৃত্যুর খবর জানানো ফেইসবুক পেইজে প্যারিসপ্রবাসী চিত্র সমালোচক ও নভেরা আহমেদের শেষ জীবনের ঘনিষ্ঠজন আনা ইসলামের একটি লেখা রয়েছে, যেখানে ১৯৩৯ সালে নভেরা আহমেদের জন্ম হয়েছে বলে বলা হয়েছে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত