সিলেটটুডে ডেস্ক

২৬ মে, ২০১৫ ২২:১৫

বাংলাদেশের থিয়েটারকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা আমাদের স্বপ্ন : শুভাশিস সিনহা

মণিপুরি থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শুভাশিস সিনহা। বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মণিপুরি কালচার একাডেমিতে নাট্য প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত। দলে নেতৃত্বের পাশাপাশি নির্দেশনাও দিচ্ছেন। থিয়েটার নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে—

দল শুরু করলেন কবে?
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থানার মণিপুরি অধ্যুষিত একটি গ্রামে বাস আমাদের। কেবল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করেছি, গ্রামে আড্ডা দেয়া ছাড়া তেমন কিছু করতাম না। এমন সময় হঠাৎ করেই বন্ধুরা সবাই মিলে ভাবলাম, আমাদের তো নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আছে; তাছাড়া সমকালের ঘটনা নিয়ে তো কোনো নাটকও নেই। তার পর কয়েকজন বন্ধু মিলে ‘মেঘ বৃষ্টি রোদ’ নামে একটি বাংলা ভাষার নাটক করি। মূলত এ নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়েই ১৯৯৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আমাদের দলের যাত্রা। শুরুতে দলের নাম ছিল আধুনিক নাট্যগোষ্ঠী। এর পর ২০০০ সালে দলের নাম পরিবর্তন করে মণিপুরি থিয়েটার রাখি।

জাতীয়ভাবে নাটক মঞ্চায়নে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
২০০২ সালে প্রথম ঢাকায় অনুষ্ঠান করি। সেবার বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আমন্ত্রণে ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ নামে মণিপুরি ভাষায় একটি নাটক করি। ঢাকায় এই ১৩ বছরে ৬০টির মতো শো করেছি। এতে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি আমরা। এমনকি টাইমস অব ইন্ডিয়ার আমন্ত্রণে ভারতেও শো করেছি। সেখানেও আমাদের নাটক প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলা ভাষায়ও তো নাটক করছেন—
এটা একটা বাস্তবতা। এটা তো আমাদের দ্বিতীয় ভাষা। মণিপুরি ভাষা হলেও আমাদের পড়াশোনা, সাহিত্যচর্চা সবকিছুর সঙ্গেই বাংলা ভাষা জড়িত। এজন্য দুই ভাষারই সমন্বয় করি, সেক্ষেত্রে উপস্থাপনটা মণিপুরি ঢঙে থাকে। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৩০টি নাটক করেছি। এর মধ্যে বাংলায় ১০টি ও মণিপুরী ভাষায় ১৬টি নাটক করেছি। বাকিগুলো উভয় ভাষায়ই।

উৎসবে কেবল একটি নাটক নিয়ে কেন এলেন...
আসলে দূর থেকে ঢাকায় গিয়ে নাটক করতে হয় আমাদের। এতে খরচ ও সময় ব্যয় হয় অনেক। এজন্য একটু সাশ্রয়ী করতে এ ধরনের পরিকল্পনা।

নাটক ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কাজ করেন...
মণিপুরি থিয়েটার পত্রিকা নামে নিয়মিত একটি কাগজ বের করি। সেখানে বাংলা, মণিপুরিসহ আদিবাসী-বিষয়ক নানা লেখা ছাপা হয়। এছাড়া পাঠচক্র, ওয়ার্কশপ করি। 

মণিপুরি সংস্কৃতি প্রসঙ্গে বলুন
আমরা আসলে একটি দায় থেকে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। বাংলা ভাষায় অনেক দল কাজ করে এটিকে মজবুত অবস্থানে নিয়ে গেছে। এছাড়া ভারতেও আমাদের এ জাতিসত্তা অনেক বিকশিত। সেখানে একটি রাজ্যই আছে মণিপুর নামে। মণিপুরি নাচ সারা পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এ দেশে মণিপুরি জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা মাত্র ৫০ হাজার। আর এটি আমাদের জাতিসত্তার একটি থিয়েটার। তাই আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে আরো বেশি করে পরিচিত করতে চাই।

থিয়েটার বৈচিত্র্যময় করতে কী পরামর্শ আপনার?
সব ভাষায় তো আমরা কাজ করতে পারব না। আমাদের কাজ দেখে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অন্যরা যদি থিয়েটার করে তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের সব জনগোষ্ঠীরই একটি করে থিয়েটার থাকবে। এতে বাংলাদেশে থিয়েটারের পরিমণ্ডল ব্যাপক বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ হবে।

দল নিয়ে স্বপ্ন—
আরো বড় পরিসরে নিজেদের দেখতে চাই। ভাষা ও সংস্কৃতিকে আগলে রাখা এবং বাংলাদেশের থিয়েটারকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা আমাদের স্বপ্ন। এজন্য ব্যাপকভাবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত