মারূফ অমিত

২৮ মে, ২০১৫ ১৭:০৪

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৩৯ তম প্রয়াণ দিবস আজ

চিত্রশিল্প নিয়ে আগ্রহ অনেকেরই। অনেকেই ছবি আঁকেন। কিন্তু কজন'ই বা ছবি একে মানুষের হৃদয়ে স্থান পেয়েছেন! ছবি একে বিশ্ববাসীর মন জয় করতে পেরেছেন যে কয়েকজন বাঙ্গালী চিত্রশিল্পী তন্মধ্যে জয়নুল আবেদীন একজন।

ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল জয়নুল আবেদিনের৷ তাই মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের সাথে সেই দূরের শহর কলকাতায় গিয়েছিলেন কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য৷ সেখান থেকে ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশুনায় মন বসাতে পারছিলেন না কোনভাবেই৷ ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের সাধারণ পড়ালেখার পাট চুকিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন৷ তাঁর মা ছেলের এই আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার এই আর্ট স্কুলে পড়তে যেতে সাহায্য করেছেন৷ আর ছেলেও মায়ের এই ঋণ শোধ করেছেন দেশের সুনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে৷ 

দেশের সুনামধন্য ও অন্যতম এই শিল্পী হলেন জয়নুল আবেদীন৷ তিনি শুধুমাত্র এদেশের একজন সুনামধন্য শিল্পীই ছিলেন না তিনি ছিলেন এদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ৷ জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯শে ডিসেম্বর বর্তমান বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন৷ বাবার নাম তমিজউদ্দিন আহমেদ এবং মা জয়নাবুন্নেছা৷ বাবা ছিলেন পুলিশের সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর৷ তিনি ছিলেন পিতামাতার দ্বিতীয় সন্তান এবং জ্যেষ্ঠ পুত্র৷ ব্রহ্মপুত্র নদের প্লাবন অববাহিকার অত্যন্ত শান্ত, সুনিবিড় ও রোমান্টিক পরিবেশে তিনি বেড়ে উঠেছেন৷ তাঁর শৈশব এবং তারুণ্যের প্রধানতম অর্জন ছিল বলতে গেলে এই প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের অভিজ্ঞতা৷ তাঁর শৈল্পিক মানসিকতা নির্মাণে প্রকৃতির প্রভাব ছিল অসামান্য ও সুদূরপ্রসারী৷

জয়নুল ভালোবাসতেন নদী। তিনি বলেছেন ও “নদীই আমার শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক”৷  ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি কলাকাতার সরকারি আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন৷ ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং এ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন৷ ১৯৩৮ সালেই নিখিল ভারত চিত্র প্রদর্শনীতে গভর্নরের স্বর্ণপদক লাভ করেন তিনি৷ এ পুরস্কার ছিল ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদ নিয়ে আঁকা তাঁর একগুচ্ছ জলরং ছবির জন্যে৷ এরপর আরো কিছুকাল পর্যন্ত জয়নুল আবেদিন প্রাকৃতিক পরিবেশেরই এক রোমান্টিক রূপকার হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ 

গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, মানুষের দুর্দশা, কষ্ট ও সংগ্রামই ছিল জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মের প্রধান উপজীব্য। তিনি এঁকেছেন ১৯৪৩ সালের ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে ‘নবান্ন’, ১৯৭০ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে লাখো উপকূলবাসীর মৃত্যুতে ‘মনপুরা’র মতো হৃদয়স্পর্শী চিত্র।

আজ বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।


রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন বাঙালির গর্ব। তার শিল্পকর্ম আগামী প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজে নিরন্তর অনুপ্রেরণা জোগাবে। শিল্পাঙ্গনে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের অনবদ্য অবদান বাঙালি জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, বাংলার প্রকৃতি, বাঙালির জীবনযাত্রা, সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য এবং স্বাধীনতার স্পৃহা তুলি আর ক্যানভাসে মূর্ত করে তুলেছিলেন জয়নুল আবেদিন। চিত্র ও শিল্পকলার মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি। 


বিশ্ববরেণ্য এই চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত