সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

২৮ অক্টোবর, ২০১৭ ১৬:২৩

সুনামগঞ্জে চলছে চার লোককবি স্মরণে ‘হাওড়পাড়ের গল্প’

ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা ৭টা। হঠাৎ নিভে গেল মঞ্চের আলো। শৈল্পিকভাবে সাজানো মঞ্চ থেকে ভেসে এলো সুর, ১৮ জন শিল্পী একসঙ্গে গাইলেন 'মুর্শিদ ভজরে কেমনে চিনিব তোমারে'। এ গানের মধ্য দিয়েই শুরু হয় সুরে সুরে লোক সংগীতের চার কিংবন্তি’র স্মরণে হাওড়পাড়ের গল্প।

চার দিনব্যাপি লোক কবিদের স্মরণে হাওড়পাড়ের গল্প শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। কবিতার দেশ, গানের দেশ নামে রয়েছে এর সুপরিচিতি। দেশের লোক সংগীতের ধারায় সুনামগঞ্জের লোকজ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক হাছন রাজা, রাধারমন দত্ত, দুর্বিণ শাহ ও শাহ আব্দুল করিম।

বাংলার লোক সংগীতের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্যই প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও হাওড়পাড়ের গল্পের মধ্য দিয়ে গানে গানে স্মরণ করা হল বাংলার চার কিংবদন্তিকে। গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত চার দিন ব্যাপি এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করবেন জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমি। ফসল বিপর্যয়কে কারণ দেখিয়ে “লোক উৎসব” হয় “হাওরপাড়ের গল্প” নামে তবে ভিন্নতা আনতে না পারার অভিযোগ আয়োজকদের বিরুদ্ধে।

এই অনুষ্ঠানটির ‘হাওড়পাড়ের গল্প’ নামকরণ করা হলেও হাওরের লোক সংস্কৃতির কথা উঠে আসছে না বলে মন্তব্য করেন সংগীত প্রেমী সাধারণ শ্রোতারা। এক্ষেত্রে লোক উৎসবের নামটি শুধু পরিবর্তন করা হয়েছে। অন্যান্য বছর লোক উৎসব নামে যে অনুষ্ঠানগুলো হত এবছর সেই উৎসবই বৃদ্ধমান আছে। শুধু নামকরণ করা হয়েছে হাওড়পাড়ের গল্প।

এব্যাপারে শাহ আব্দুল করিমের ছেলে নুর জালাল বলেন, হাওরপাড়ের গল্প শিরোনামে যে অনুষ্ঠানটি হয়েছে এখানে হাওরের কোনো দিকগুলো ফুটে উঠেনি। নাচ, গান আর আবৃত্তির মধ্য দিয়েই এটি সীমাবদ্ধ। ফসল হারিয়ে জেলার কৃষকরা দিশেহারা। এমতাবস্থায় এই জমকালো অনুষ্ঠানটি পালন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন জেলা প্রশাসন। এছাড়াও জেলা প্রশাসন যাদের নিয়ে এমন আয়োজন করেছেন তাদের পরিবারের কাউকে সঠিক মুল্যায়ন করা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, আমি শাহ আব্দুল করিমের ছেলে। আমি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার পরও আমাকে মঞ্চে কোনো বসার স্থান দেয়া হয়নি।

এব্যাপারে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সামছুল আবেদীন বলেন, শিল্পীরা একটু অভিমানী হয়। শাহ আব্দুল করিম পুত্র একজন গীতিকার ও শিল্পী। তাঁর অভিমানের সাথে আমিও ব্যক্তিগতভাবে একমত।  তার অভিমানে একত্মতা পোষণ করে আগামীতে আরো ভাল অনুষ্ঠান করার চেষ্ঠা করা হবে।

জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, চার লোক কবিদের পরিবার ও তাদের সাথে যুক্ত সংগঠনকে নিয়ে অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে। শিল্পীরা তাদের মত করে অনুষ্ঠান করবেন। শিল্পীর স্বাধীন । আমাদের প্রচেষ্ঠা থাকবে এই অনুষ্ঠান যাতে আরো হয়। এই চার লোক কবিকে নিয়ে একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও সরকারের রয়েছে বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত