নিউজ ডেস্ক

১৪ জানুয়ারি, ২০১৫ ০১:৪৯

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব

১৪ জানুয়ারি নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সপ্তম প্রয়াণ দিবস।  ২০০৮ সালের এই দিনে তিনি লোকান্তরিত হয়েছিলেন। দিনটি উপলক্ষে  ১৪-১৫ জানুয়ারি  দুই দিনব্যাপী সেলিম আল দীন স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সেলিম আল দীন ফাউন্ডেশন।  
 
প্রথম দিনের আয়োজনে রয়েছে সকাল ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত নাট্যাচার্যের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে 'পুতুল তোমার জনম কি রূপ' নাটকটির মঞ্চায়ন। ঢাকা থিয়েটারের পরিবেশনায় এর চরিত্রাঙ্কন করেছেন শিমূল ইউসুফ। 
 
১৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় নাট্যশালায় 'বাংলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু-মুসলিম প্রসঙ্গ এবং দেশভাগ' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন রাহমান চৌধুরী। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে অংশ নেবেন অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষসহ অনেকে। 
 
অন্যদিকে নাট্য সংগঠন স্বপ্নদলের আয়োজনে চলছে তিন দিনব্যাপী 'সেলিম আল দীন স্মরণোৎসব'। বুধবার সন্ধ্যায় পরীক্ষণ থিয়েটার হলে 'স্পার্টাকাস' মঞ্চস্থ করবে। জাবির নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের আয়োজনে থাকছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। 
 
সংক্ষিপ্ত জীবনী
 
নাট্যকার সেলিম আল দীন জন্মেছিলেন ১৯৪৯ সালের ১৮ই আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে৷ মফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফিরোজা খাতুনের তৃতীয় সন্তান তিনি৷ 
 
শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ফেনী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রংপুরের বিভিন্ন স্থানে৷ বাবার চাকরির সূত্রে এসব জায়গার বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি৷ সেলিম আল দীন ১৯৬৪ সালে ফেনীর সেনেরখিলের মঙ্গলকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন৷ ১৯৬৬ সালে ফেনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন৷ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন৷ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়ে ভর্তি হন টাঙ্গাইলের করোটিয়ায় সাদত কলেজে৷ সেখান থেকে স্নাতক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন৷ 
 
১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে নাটক’ এর উপর গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন সেলিম আল দীন।
 
সেলিম আল দীনের বাবা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। সেই সূত্রে ঘুরেছেন বহু জায়গা। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি ছিল তাঁর চরম ঝোঁক। তাই দূরে কাছে নতুন বই দেখলেই পড়ে ফেলতেন এক নিমেষে। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর লেখক হওয়ার বিষয়ে পাকাপোক্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। লেখক হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে, কবি আহসান হাবিব সম্পাদিত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ পত্রিকার মাধ্যমে। আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের নিয়ে লেখা তাঁর বাংলা প্রবন্ধ ‘নিগ্রো সাহিত্য’  ছাপা হয় ওই পত্রিকায়।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন, যুক্ত হন ঢাকা থিয়েটারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষে যোগ দেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা বিটপীতে, কপি রাইটার হিসাবে। ১৯৭৪ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। ওই বছরই বেগমজাদী মেহেরুন্নেসার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের একমাত্র সন্তান মইনুল হাসানের অকালমৃত্যু হয়। মধ্যযুগের বাংলা নাট্যরীতি নিয়ে গবেষণা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশে একমাত্র বাংলা নাট্যকোষেরও তিনি প্রণেতা। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণকেন্দ্রিক এথনিক থিয়েটারেরও তিনি উদ্ভাবনকারী।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠা সেলিম আল দীনের হাত ধরেই। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার।
 
তাঁর প্রথম রেডিও নাটক বিপরীত তমসায় ১৯৬৯ সালে এবং টেলিভিশন নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর প্রযোজনায় লিব্রিয়াম (পরিবর্তিত নাম ঘুম নেই) প্রচারিত হয় ১৯৭০সালে। আমিরুল হক চৌধুরী নির্দেশিত এবং বহুবচন প্রযোজিত প্রথম মঞ্চনাটক ‘সর্প বিষয়ক গল্প’  মঞ্চায়ন করা হয় ১৯৭২ সালে। তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্য বিষয়ক কোষগ্রন্থ বাংলা নাট্যকোষ সংগ্রহ, সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত ‘হরগজ’  নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনূদিত হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে।
 
সেলিম আল দীনের প্রথমদিককার নাটকের মধ্যে ‘সর্প বিষয়ক গল্প’, ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’, ‘মূল সমস্যা’, এগুলোর নাম ঘুরে ফিরে আসে। সেই সঙ্গে ‘প্রাচ্য’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘বাসন’, ‘আততায়ী’, ‘সয়ফুল মূলক বদিউজ্জামান’, ‘কেরামত মঙ্গল’, ‘হাত হদাই’, ‘যৈবতি কন্যার মন’, ‘মুনতাসির ফ্যান্টাসি’ ও ‘চাকা’  তাকে ব্যতিক্রমধর্মী নাট্যকার হিসেবে পরিচিত করে তোলে। 
 
জীবনের শেষ ভাগে ‘নিমজ্জন’ নামে মহাকাব্যিক এক উপাখ্যান বেরিয়ে আসে সেলিম আল দীনের কলম থেকে।
 
২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত