নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ আগস্ট, ২০১৮ ২০:৪০

‘আলতাফ মাহমুদ পদক’ পেলেন দুই গুণী

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদের স্মরণে তাঁর অন্তর্ধান দিবসে ‘শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক’ দিয়েছে শহীদ আলতাফ মাহমুদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন।

বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) আলতাফ মাহমুদের অন্তর্ধান দিবসের দিন সন্ধ্যা ছয়টায় শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সৈয়দ হাসান ইমাম ও ফেরদৌসী মজুমদারের হাতে এ পদক তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন নাট্যজন আলী যাকের। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহধর্মীনি সারা আরা মাহমুদ।

প্রধান অতিথি আলী যাকের পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘নিজের মতো করে স্বাধীনতা প্রয়োজন। আলতাফ মাহমুদ যে সমাজে হাল ধরেছিলেন সে সমাজ ছিল পরাধীন। তিনি সংগীতকে ভালোবাসতেন। আলতাফ মাহমুদ স্বাধীনতার জন্য সংগীতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন।’

পদকপ্রাপ্তির পর নিজের প্রতিক্রিয়ায় সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘আলতাফ মাহমদুকে আজ এই সময়ে এসে বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। দেশ আছে, পতাকা অছে অথচ আলতাফ মাহমুদ নেই। তার মতো প্রাণবন্ত একজন মানুষকে এভাবে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে সেটা ভাবা যায় না।’

অপর পদকপ্রাপ্ত ফেরদৌসী মজুমদার বলেন, ‘আলতাফ মাহমুদ কতো বড় শিল্পী, সুরস্রষ্টা ছিলেন তা বোঝা যায় ‘একুশে ফ্রেব্রুয়ারি’ গানটির মাধ্যমে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততোদিন আলতাফ মাহমুদকে আমরা স্মরণ করব। তিনি আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। তার নামে পদক পেয়ে আমি অভিভূত।’

উল্লেখ্য, আলতাফ মাহমুদকে ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের দোসররা ধরে নিয়ে যায়। এরপর তিনি আর ফেরেননি। পাকিস্তানি বাহিনী ও আলী আহসান মুজাহিদের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে যায়।

আলতাফ মাহমুদকে স্মরণ রাখতে তাঁর পরিবার ও ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলাদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশনের। এ ফাউন্ডেশন ২০০৫ সাল থেকে গুণীজনদের আলতাফ মাহমুদ পদক দিয়ে আসছে।

৩০ আগস্ট ২০০৫ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক বেবি ইসলামকে সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে শহীদ আলতাফ মাহমুদ ফাউন্ডেশন-এর যাত্রা শুরু হয় ।

এরপর ৩০ আগস্ট ২০০৬ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. এনামুল হক, ৩০ আগস্ট ২০০৭ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বাংলাদেশের অন্যতম সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, ৩০ আগস্ট ২০০৮ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংগীতশিল্পী অজিত রায় এবং সংগীত পরিচালক খোন্দকার নুরুল আলম, ৩০ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংগীতশিল্পী এবং বিশেষজ্ঞ সুধীন দাস, ৩০ আগস্ট ২০১০ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক বিপুল ভট্টাচার্য, ২৩ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে শিল্পকলা একাডেমিতে উদীচী আয়োজিত শহীদ আলতাফ মাহমুদ এর জন্মদিন উদযাপন অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশন সংগীত পরিচালক আলম খান, ৩০ আগস্ট ২০১২ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এবং নায়ক রাজ রাজ্জাক, ৩০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার এবং সংগীত পরিচালক মো. শাহ্‌নেওয়াজ এবং ৩০ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী এবং সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল-এর হাতে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদক তুলে দেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট শহীদ আলতাফ মাহমুদ-এর ৪৪তম অন্তর্ধান দিবসে ওই বছরের আলতাফ মাহমুদ পদক পেয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সংগীতপরিচালক আলাউদ্দীন আলী। ২০১৬ সালে এ পদক পেয়েছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, এবং ২০১৭ সালের এ পদক পান নাট্যজন আলী যাকের এবং লেখক-প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত