নিজস্ব প্রতিবেদক

২১ মার্চ, ২০১৫ ১৭:৪৯

পিপীলিকা থেকে গুগলে শাবির ফরহাদ

ছবি ফেসবুক থেকে

বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা'র অন্যতম নির্মাতা তিনি। এবার বাংলার গন্ডি ছাড়িয়ে যোগ দিচ্ছেন বিশ্বের এক নম্বর সার্চ ইঞ্জিন গুগলে। তিনি ফরহাদ আহমেদ। এ বছরের অক্টোবরে গুগলের মাউন্টেন ভিউ শাখায় যোগ দেবেন ফরহাদ। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে শনিবার সকালে যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করে গুগুল।

সিলেটের কৃতি মুখ ফরহাদ আহমেদ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এরআগে তিনি ঢাকাদক্ষিণ এমএল হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও ভাদেশ্বর নাসিরউদ্দিন হাইস্কুলে লেখাপড়া করেন।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে চালু করা প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন 'পিপীলিকা' দলের অন্যতম সদস্য ফরহাদ।

গুগলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ফরহাদ ফেসবুকে নিজের স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 

`কাল অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলাম, অবশেষে সকাল বেলায় অফিশিয়ালি কনফার্ম হল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এই বছরের অক্টোবরে গুগলের মাউন্টেন ভিউ শাখায় জয়েন করতে যাচ্ছি। আমি মনে হয় অনেক সৌভাগ্যবান মানুষদের দলে , গত কয়েক বছর ধরে কত কিছু পেয়েই যাচ্ছি। আল্লাহর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া। তবে সত্য আমার চারপাশে এত মানুষের সাপোর্ট, ভালোবাসা আর দোয়া না থাকলে এই অর্জন গুলো সম্ভব হত না। এই আনন্দের দিনে তাই কিছু মানুষকে স্মরন না করলেই না, যারা আমার জীবনে এত বেশি প্রভাব ফেলেছে...

অনুরঞ্জন স্যারঃ আমি গণিতে এত ভাল ছিলাম না। কলেজে অনেক ফাকিবাজি করেছিলাম। কিন্তু শেষের দিকে নিজেই টেনশনে ছিলাম কিভাবে শেষ করব পুরা বই। শেষের চার মাস স্যারের কাছে পরতে গিয়েছিলাম। স্যার অন্য কলেজের হলেও আমার অবস্থা দেখে ওনি নিজেই একদিন বলল," তোমার অবস্থা ত বেশি ভাল না, অনেক কিছু তুমি কাবার কর নাই। এক কাজ কর তুমি আমার কাছে ২বার করে পরবে এই জন্য তোমাকে টাকা দিতে হবে না।" কষ্ট হলেও সত্য ওই সময় টাকা দিয়ে পরতে লাগলে আমার পক্ষে সম্ভব হত না। অবশেষে স্যার এর কাছে শেষ চার মাস অনেক পরাশুনা করলাম। ফলাফল এত ভালো রেজাল্ট করব আমি নিজেই ভাবি নি। স্যার আমাকে এখনও নিজে থেকে ফোন দিয়ে খবরাখবর নিয়ে থাকেন। স্যারের সাথে একটু পরেই কথা হবে...

সজীব স্যার ও সুমন স্যারঃ যদিও ২জন একে অপরের বিপরীতধর্মী চিন্তাভাবনায়, কিন্তু এই ২জনের অবদানের কথা কোনভাবেই ভুলা সম্ভব না। সুমন স্যার এর সাথে বেশি সময় কাটিয়েছি। শেষের দিকে ত স্যার এর সাথে বন্ধুর মত সম্পর্ক ছিল। স্যার অনেক পিন দিত, কিন্তু ওইগুলা যে এত কাজে দিবে, বুঝিনি। স্যারকে দেখিয়ে দিব এই চিন্তা থেকে আরও বেশি করে পরিশ্রম করতাম। স্যার আপনাকে শুধু আমি না ডিপার্টমেন্টও অনেক মিস করে। স্যার স্টুডেন্টদের নিয়ে যেই রকম প্ল্যান করে জাফর স্যারও করেন কিনা সন্দেহ আছে। আর সজীব স্যার, দি লীজ্যান্ড, দি বস। অনেক বিশেষণ দেওয়া যার স্যার এর বেলায়। স্যার শুধু ডিপার্টমেন্ট নিয়েই চিন্তা করতেন না। কিভাবে চ্যালেঞ্জ নিতে হয় , আর সফল হতে হয় তার আদর্শ উদাহরন ওনি। একটার পর একটা মুকুট পরিয়ে দিয়ে গেছেন সাস্টকে। আমিও স্বপ্ন দেখি স্যার এর মত কিছু একটা করার।

মুস্তাফিজ ভাইঃ এই মানুষটা আমার খুব প্রিয় মানুষের কাতারে। ওনার বিনয়ী আর নম্রতা যে কাওকে অভিভুত করবে। ওনি যখন সাস্টে আসল তখন উনার উপর আমাদের অনেক রাগ হয়, আমাদের অজ্ঞতার জন্য। প্রথমে ভেবেছিলাম আমাদের টিম ভেঙে দিয়ে আমার টিমমটকে নিয়ে যাবে। পরে শুনি কিসের কি ওনি আরও টিম না ভাঙার পক্ষে। শুধু এই টুকু না, কিভাবে আরও ভাল করা যায়, কি কি জায়গায় আরও ঊন্নতি করা যায় আমাদেরকে সব সময়ই সাপোর্ট দিয়ে যেতেন। অনেকেই আমাকে বলে থাকে ভাই আপনি ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট এত সহজে মিশেন কিভাবে। আরে এই রকম মানুষের সংস্পর্শে থাকলে যে কেঊ ওই রকমই হবে। ওনিও ওয়ার্ল্ড ফাইনালিস্ট। আমার যেকোন প্রবলেমেই ভাই অনেক সহযোগিতা করত। এই রকম মানুষ পাওয়া আসলে সৌভাগ্যেরই...

আশিষ, অপু, মাকসুদ, মাহফুজ, বাকেরঃ আমার খুব কাছের বন্ধু আর ক্লাসমেট। আমাদের গ্রপ এর নাম ছিল পেন্টাগন (বাকের ছাড়া :P)। সব জায়গায়, সব সময়ই আমরা এক সাথে থাকতাম। আশিষ আর অপুর সাথে এখনও একই মেসে থাকি আমরা। আমি programming নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতাম যে টিকমত ক্লাস করা হত না, করলেও মনোযোগ দিতাম না। ক্লাস প্রব্লেম সমাধান করতাম। আশিষের জন্য এই রকম টেনশন ফ্রি থাকতাম। পরীক্ষার আগে ও আমার জন্য সবই রেডি করে রাখত কি কি পরতে হবে, না বুঝলে বুঝাইয়া দিত। আমার রেজাল্ট একটু ভাল বলাই যায় 3.77। সবই আশিষ আর মাহফুজের ক্লাস নোটের অবদান। অপুকে আমরা অনেক পিন দিতাম। ওরে মেয়েরা অনেক পছন্দ করত tongue emoticon । মাকসুদ আর বাকের সম্পর্কে তেমন কিছু বলা লাগবে না সবাই জানে। আমরা SUST_Palindrome টিম এর মেম্বার।

দাদিঃ কেঊ যদি বলে আমার জীবনের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তার করা মানুষটি কে? আমার উত্তর দিতে সময় লাগবে না আমার দাদি। ওনি আমার রক্তের সম্পর্কের দাদি নন, কিন্তু তার চেয়েও বেশি। আমি যখন ক্লাস টেনে তখন আমার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর পর আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। ঠিক তখনই ওনি কিভাবে যেন আমাকে নতুন জীবন দেওয়ার মত করে পাশে দাড়ালেন। এর পর থেকে আমাকে কখনও আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। যখনই কোন কিছু লাগত তখনই আমার পাশে থাকতেন। কি অন্ন্য রকম ভালোবাসায় আমাকে আপন করে নিলেন। ওনার মত মানুষের জন্য আমার মত ফরহাদ এতদুর আসতে পেরেছে। আল্লাহ পাকের কাছে সব সময় ওনার জন্য দোয়া করি। ওনি যেন আরও অনেকদিন বেচে থাকেন আর ঊনার সেবা করার তৌফিক আমাকে দান করেন।

সোহাইব ভাই , মুকিত ভাইঃ সোহাইব ভাই আমার বর্তমান টিম লিডার। গতকাল আমার আনন্দের দিনে সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে ভাইয়াকে যখন বলি। জানি ওনি খুশি হয়েছেন। তারপরও এই দেড় বছরের সময়ে ভাইয়ার সাথে এত ভাল সম্পর্ক গড়ে উটেছে ছেড়ে যাওয়াটাও আমার জন্যেও অনেক কষ্টের। ভাইয়া আমাকে এত স্নেহ করেন বলে বুঝানো যাবে না। গত বছর facebook এ ভিসা জটিলতার জন্য আমি রিজেক্ট হই। কিন্তু আমার তেমন মন খারাপ হই নি। কারন ভাইয়ার মত এত ভাল টিম লিডার এর কাছে থেকে আমি অনেক খুশি। মুকিত ভাই কে সব চেয়ে বেশি পিন দিয়ে থাকি। এত ভাল মানুষ আমি কমই দেখেছি।

সায়িদ বন্ধুঃ ওর সম্পর্কে আলাদা করে বলে দরকার। আমি যখন এডমিশনের ফর্ম কিন্তেছিলাম তখন D ইউনিটের ফর্ম কিনেনি। ওই আমাকে জোর করে ও টাকা দিয়ে কিনে দিয়েছিল। আমার কাছে টাকা ছিল না। আমি ধরে নিয়েছিলাম হবে না শুধু শুধু টাকাটা নষ্ট না করলেই হয়। আর সেই আমি চান্স পেয়ে যাই। সবই আল্লাহর ইচ্ছে। ও আমাকে সব চেয়ে বেশি উতসাহ দিত।

আরো অনেকের কথা লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবার সম্পর্কে লিখতে গেলে অনেক বড় হয়ে যাবে। আমি আবারও আমার সকল বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র বড় ভাই/আপু, শিক্ষক,জুনিয়র, আমার ফ্যামিলি ম্যাম্বারদের, আত্মীয় সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার এই অর্জন সবাইকে উৎসর্গ...'

 

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত