উত্তম কুমার, সিকৃবি

২০ আগস্ট, ২০১৬ ২০:৩০

দেশের স্বকীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে চান সিকৃবির ফাগুন!

ক্যাম্পাসের মুখ

ফাগুন নামের সাথেই রঙের একটা মিশেল আছে। নামের মতই বৈচিত্র্যপূর্ণ তার জীবন। সৃজনশীল কাজে বরাবরই অগ্রগামী ফাগুন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছেন বছরখানেক হল। এর মধ্যেই ক্যাম্পাসে প্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি। পুরো নাম ইফতেখার আহমেদ হলেও ফাগুন নামেই ব্যাপক পরিচিতি তার।

“সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ” এর   সূচনা হয়  তার হাত ধরেই । একাধারে  শর্টফিল্ম নির্মাতা, সাংবাদিক এবং দক্ষ সংগঠক হিসেবে কুড়িয়েছেন সিনিয়রদের প্রশংসা।


সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মাৎস্য-বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম বর্ষের ছাত্র ফাগুন আইনজীবী বাবা এবং গৃহিণী মায়ের  বড় ছেলে।  হবিগঞ্জ শহরেই বড় হয়েছেন তিনি। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই গৎবাঁধা পড়াশোনার বাইরের কাজে মন ছিল তার। হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে  স্কাউট এর ইউনিট লিডার হওয়ার মাধ্যমেই সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় প্রকাশ হতে থাকে তার।

২০০৯ সালে স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেছিলেন শিশুতোষ  সাংস্কৃতিক সংগঠন “ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক ক্লাব”। সাত বছর পর এই সংগঠনটি  আজ হবিগঞ্জ জেলার প্রথম সারির সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর  মধ্যে একটি। সাংবাদিকতায় আগ্রহ সৃষ্টির পর  ২০১০ সালে ক্লাস এইটে পড়া অবস্থায় জাতীয়  শিশু টাঙ্কফোর্সে শিশু সাংবাদিক হিসেবে  যোগ দেন এবং  হবিগঞ্জ জেলা  শিশু টাঙ্কফোর্সের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  ২০১২ সালে ‘হান্ড্রেড ওয়ার্ড প্লে’ শীর্ষক স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও-চিত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত হয় তার একটি ভিডিও চিত্র । ওই বছরই ডিসেম্বরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের আমন্ত্রণে লন্ডনের লাবানে এক কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করেন ফাগুন।


২০১৩ সালে সালে বন্ধুদের নিয়ে নির্মাণ করে প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বৃত্তবন্দী’ । ২০১৪ সালে নির্মাণ করেন শিশুতোষ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘মর্মস্পর্শী ৭১’। এই চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান করে নেয় । ২০১৫ সালে পুলিশ প্রশাসনের নিবেদনে নির্মাণ করেন দাঙ্গা বিরোধী জনসচেতনতামূলক  চলচ্চিত্র ‘দর্পচূর্ণ’ । বছরব্যাপী দাঙ্গা প্রবণ এলাকায় সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে এই চলচ্চিত্রটি  প্রদর্শন করেছে পুলিশ প্রশাসন।  এছাড়াও ফাগুন নির্মাণ করেছে আরও দুইটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম। সাংবাদিকতায়ও তার অনবদ্য বিচরণ।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল  বিডিনিউজ২৪ডটকমে কাজ করেছেন । বর্তমানে সাংবাদিক হিসেবে বাংলাট্রিবিউন এ  কাজ করছেন তিনি ।

‘ঐতিহ্য সাংস্কৃতিক ক্লাব’এর  সভাপতি সুমিতা  বিশ্বাস পূজার ভাষায় ফাগুনকে নিয়ে বলতে গেলে  বিরাট তালিকা দেয়া লাগবে ।

হবিগঞ্জে প্রথম শর্ট ফিল্মের যাত্রা এই  ফাগুনের হাত ধরেই । তিনি জানান হবিগঞ্জের  সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক , জনসচেতনতামূলক এমন কোন প্রোগ্রাম নাই যেখানে ফাগুনের অংশগ্রহণ নেই। ফাগুন হবিগঞ্জের গর্ব ।   

ফাগুন নতুন প্রজন্মের যারা সংগঠন করতে ভালবাসে, সংগঠক হতে  ভালবাসে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,তারা যেন জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের মত বিষয়গুলোর দিকে না ঝুঁকে । নেতৃত্ব দিয়ে মেধার বিকাশ ও নিজের ব্যক্তিত্ব গঠনেও সংগঠন করার গুরুত্ব অপরিসীম মনে করেন তিনি।

আলাপে ফাগুন জানান, তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চান।  সার্থক ও স্বকীয় চলচ্চিত্র শিল্প নির্মাণ করে দেশকে তোলে ধরার স্বপ্ন তার।  ফাগুন মনে করে এমন একটা সময় অবশ্যই আসবে যখন যখন এদেশের চলচ্চিত্র গুলো হবে জীবন-ভিত্তিক।  শুরুটা হয়েছে আরও সামনে যেতে হবে । সর্বোপরি দেশের স্বকীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করতে চান এই তরুণ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত