রাবি প্রতিনিধি

২৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০২:৫২

শিক্ষক হত্যায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে বাধা রাবি প্রশাসনের

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী প্যারিস রোডে একত্রিত হন শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদ জানাতে। বাবার হত্যার প্রতিবাদ জানাতে। বিস্তৃত প্যারিস রোডের বুকে ফাঁসির দড়ির আলপনা আঁকাতে, মোমবাতি প্রজ্বলন করে পিতার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। হঠাৎ বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রশাসন। পিতা হত্যার আর প্রতিবাদ করতে পারেন নি তারা।

২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যার দুই বছর পূর্তি হয়। তার স্মরণে বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মোমবাতি প্রজ্বলন ও আলপনা আঁকতে চেয়েছিল। কিন্তু এভাবেই তাদের সবকিছু নস্যাৎ হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অনুরোধ করার পরও তিনি তাদের বাধা দেন। রাত ৯টার পর শিক্ষার্থীদের প্রোগ্রাম করার নির্দেশ দেন তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, আজ নির্বাচন অথচ তারা গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করতে পারছেন না। শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতেই তিনি বাধা দিতে বাধ্য হয়েছেন।

ইংরেজি বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ছিল সন্ধ্যায় বিভাগের সামনে প্যারিস রোডে মোমবাতি প্রজ্বলন করার এবং রোডের উপরে ফাঁসির দড়ির আলপনা করার। আজ শিক্ষকদের নির্বাচন ছিল। নির্বাচনে তো তিনটা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। তাই আমরা সন্ধ্যায় আলপনা করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমরা রোডের দুই পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে দিয়েছি। কোন বড় গাড়ি আসলে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য আমরা রাস্তার দুই পাশে চারজনকে রেখেছিলাম। গাড়িওয়ালাকে অনুরোধ করে একটু ঘুরে চলাচলকে করতে বলার জন্য। আমরা বিনীত অনুরোধ করেই কাজ করছিলাম।

আমাদের কাজ শুরুর ১৫ মিনিটের মত হয়েছে, মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়ই নি, এর মধ্যেই প্রক্টর স্যার এসে আমাদের সবকিছু বন্ধ করে দেন। আমরা অনুরোধ করে বলেছিলাম, আমাদের এই কারণে এই প্রোগ্রাম। উনি বলেছেন, যা করার রাতে করতে। আগে বলেছেন রাত ১০ টা পরে ৯টার কথা। কিন্তু রাতে তো আর এই প্রোগ্রাম করা সম্ভব নয়। তাছাড়া স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী তো আজ। আমরা চাইছিলাম, ওইখানে শুধু একটা ফাঁসির দড়ির আলপনা থাক। কিন্তু তা হলো না।

শিক্ষার্থীরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অনুরোধ করার পরও প্রক্টর স্যার আমাদের বাধা দিলেন, আমাদের কাঁচা রঙের ওপর দিয়েই গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। ওনার পরে দেখাদেখি আরও অনেকেই যায়। আমরা আমাদের স্যারের মৃত্যুবার্ষিকীতে সামান্য আলপনা করতে পারলাম না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন চলছে। অসংখ্য শিক্ষকের গাড়ি যাতায়াত করছে। তারা এর মধ্যেই রাস্তা বন্ধ করে আলপনা করছিল। সব শিক্ষক অভিযোগ করা শুরু করেছে। একের পর এক তারা ফোন করে অভিযোগ করছেন, রাস্তা বন্ধ কেন? সেই জন্যই তাদের বলা হয়েছে রাত ৮টার পর করতে। বন্ধ করা হয়নি।

নির্বাচনের দিনে ওরা সিনেট ভবন থেকে মমতাজ উদ্দিন কলা ভবন যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত যাতায়াত বন্ধ করেছে। আজকে তো অহরহ গাড়ি চলছে। শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে গেছে। ওরা বলছিল, কেন এটা করছে। কিন্তু আজকের দিনে রাস্তা বন্ধ করে এটা করা তো ঠিক হবে না। তাই বলা হয়েছে রাত ৮টার পর করতে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় অধ্যাপক রেজাউলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার ৮ মে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত