রাবি প্রতিনিধি

০৩ জুলাই, ২০১৮ ১৯:৫২

রাবিতে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী যারা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে দ্বিতীয় দিনেও হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সোমবার (২ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কিছু দূরে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহত হন কোটা আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।

তারেক বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তাঁর চিকিৎসক বলছেন, ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করায় তারেকের ডান পা ভেঙে গেছে। আপাতত প্লাস্টার করে রাখা হয়েছে। অস্ত্রোপচার না করলে তার পা স্বাভাবিক হবে না। আর তার পুরো শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে তারেকের মস্তিষ্কে বড় ধরনের কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

এর আগে রোববার (১ জুলাই) কোটা আন্দোলনকারীরা মানববন্ধন করতে গেলে তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ।

দুই দিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী, হামলার ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাবি ছাত্রলীগের ১০-১৫ জন নেতাকর্মী এ হামলায় মূল ভূমিকা পালন করে।

ছাত্রলীগের রাবি শাখার সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু এ দুই হামলার নেতৃত্বে থাকলেও আক্রমণ ও মারধরের ক্ষেত্রে তাদের দেখা যায়নি। কয়েকজন সহসভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন আক্রমণের নেতৃত্বে।

রোববার কোটা আন্দোলনকারীদের আক্রমণে নেতৃত্বে দেখা গেছে লতিফুল কবির মানিক নামের একজনকে। রামদা হাতে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া মানিক নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। তিনি ইতিহাস বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্র এবং ছাত্রলীগকর্মী।

এরপরই হাতুড়ি হাতে আক্রমণে দেখা গেছে আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তিনি রাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

এরপর আক্রমণে দেখা যায় রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশুকে। যিনি বাঁশের লাঠি হাতে কোটা আন্দোলনকারীদের আক্রমণ করেন। তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

এদের পর আক্রমণে মূল ভূমিকায় আরও দেখা গেছে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি গোফরান গাজী, মিজানুর রহমান সিনহা, রমিজুল ইসলাম রিমু, সাদ্দাম হোসেন, আহমেদ সজীব, ছানোয়ার হোসেন সারোয়ার, আরিফ বিন জহির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবরুল জামিল সুস্ময়, হাসান লাবন, ইমতিয়াজ আহমেদ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব, কর্মী জন স্মিথ ও রাশেদ খান।

এরা সবাই রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া ও মারধর করেন। তবে আক্রমণের একপর্যায়ে এদের মধ্যে কয়েকজনকে আবার মারধরকারীদের ঠেকাতেও দেখা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (২ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে পতাকা মিছিল বের করলে সেখানে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের পতাকা কেড়ে নিয়ে ১০-১৫ জন নেতাকর্মী রামদা, লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা করে। এসময় পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে ছিল বলে অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এর আগে রোববার (৩ জুলাই) সকাল পৌনে ১০টা এবং পরে বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মানববন্ধনের প্রস্তুতিকালে তাদের ওপর দুই দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেওয়া হয় এবং কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে পেটানো হয়।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘আমাদের দুই দিনের কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় আহত আমাদের পরিষদের রাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল ইসলাম তারেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’

এদিকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করলেও ধাওয়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে জামায়াত-শিবির ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছিল। ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে আমরা তাদের প্রতিহত করেছি। তাদের ওপর কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, কোটা আন্দোলনকারীরা এখন আর কোটা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তারা এখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মধ্যে পড়ে গিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এজন্য ক্যাম্পাসে কোন ধরনের কর্মসূচি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত