অনলাইন ডেস্ক

১৫ জুলাই, ২০১৮ ১৩:১৪

‘আমি ঢাবিয়ান বলতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগে সেই শিক্ষার্থী বলেন, ‘নিজ মুখে নিজ ক্যাম্পাসের ভয়াল বিভীষিকাময় ঘটনার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আজ আমি ঢাবিয়ান বলতেই এক অসামান্য লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি।’

শনিবার (১৪ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এই ঢাবি ছাত্রী ছাত্রলীগের কনিষ্ঠ কর্মী দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও মারধরের ঘটনার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তার সঙ্গে থাকা সহপাঠী আসাদুজ্জামান প্রান্তকেও বেধড়ক মারধর করা হয়েছে বলে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান তিনি।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন-

আমি আর আমার বন্ধু আসাদ রিকশার জন্য সূর্য সেন হল মূখী রোড থেকে রেজিস্টার বিল্ডিং গেট এর দিকে যাচ্ছি। ঠিক তখন সামনে থেকে আগত ১০/১২ জন ছেলে আমাদের পথ আটকায়। হকচকিয়ে গেলেও আমরা দাড়ালাম। প্রথমে একটা ছেলে ক্ষিপ্র ভংগিতে এসে জানতে চাইলো আমরা এই ক্যাম্পাসের কিনা। বললাম হ্যা আমরা দুজনেই ক্যাম্পাসের।
আসাদ কে তখন বলল কোন ইয়ার তুই, কোন হল এ থাকিস? আমি বললাম আমরা অর্থনীতি ৩য় বর্ষের। ইভেন আমি আমার হল আইডি কার্ড দেখিয়ে বললাম ভদ্র ভাবে কথা বলো। কোনো তোয়াক্কা না করেই আবারো আসাদ কে বলল তুই কোন হল এর। আইডি কার্ড দেখা।

আসাদ পোলাইটলি জানতে চাইল তোমরা কোন ইয়ার, কোন হল, কেন চার্জ করছো এভাবে? তারা নিরুত্তর এবং মারমুখী ছিল তখন।

আসাদ আইডি কার্ড টা দেখানোর পর আইডি কার্ড টা দিয়েই ছেলেটা বলল ‘প্রথম বর্ষের ছেলে কি তোরে চার্জ করতে পারেনা? ১ম বর্ষের পোলাপানের হাতে মাইর খাইতে খুব মজা লাগব’ বলেই ঠাস করে আসাদ কে থাপ্পড় মারে। আমি যখন জানতে চাই কি করলে এটা তখন বাকিরাও চড়াও হয় এবং আমাকে সহ হ্যারেস করে ফেরাতে গেলে।

যখন আসাদ কে এলোপাথাড়ি ভাবে মারতে থাকে আমি আমার এক পরিচিত বন্ধু কে বলি আসতে। আমাদের অপরিচিত কয়েকটা ছেলে বাজে ভাবে আক্রমণ করছে।

প্রশ্ন থাকতে পারে প্রক্ট্রিয়াল টিম কে কেনো কল দিলাম না। প্রথমত আমার কাছে নাম্বার ছিল না। আর তারা তখন ই খুব জোরে হেটে সূর্য সেন হল এর গেট এর ভিতরে চলে যায়।

আর আমরা ঘটনার আকস্মিকতায় মেন্টালি শকড ছিলাম। আসাদ তাদের পেছন পেছন হল গেট এর ভিতর এ গিয়ে যখন জানতে চাইলো ‘আমি এই ক্যাম্পাসের পরিচয় দেয়ার পর, আইডি কার্ড দেখানোর পর ও আমাদের গায়ে কেনো হাত তুললে তোমরা?’

তখন তারা মোটেই অনুতপ্ত না হয়ে বলছে ‘তুই হল এর ভিতরে আসলি কেন আবার?’

আসাদ কে আবার মারতে আসে। তখন ওরা ১৫-২০জন। অনেক মানুষ ই ছিল। মজা নিচ্ছিল না ঘটনার আকস্মিকতায় তারাও চুপ জানিনা!

আমি তখন আসাদ কে ফিরিয়ে নিয়ে আসার সময় ওরা গেস্ট রুম থেকে স্ট্যাম্প,কাঠ নিয়ে আসে মারতে। আসাদ এর মাথায়, মুখে, কাধে, পায়ে সমস্ত শরীরে বাজে ভাবে আঘাত করা হয়েছে।

আমি বাধা দিতে যাওয়ায় আমার গায়েও লাঠির আঘাত,তাদের জোরাজুরি আসাদ কে আলাদা ভাবে নিয়ে মারার জন্য। আমার পায়ে জোতা দিয়ে পিষে দেয়ায় আমার নখ উঠে গেসে। ব্লিডিং হচ্ছিল।

তখন ও তারা থামে নাই। এফবিএস, সূর্য সেন ক্যাফেটেরিয়া এই তিন রাস্তার মোরে এসে আসাদ এর হল এর কিছু পরিচিত মানুষ জন আসতে দেখায় তারা চলে যায় কিন্তু ফিরে আবার মারমুখী হয়ে হুমকি দেয়।

আমরা দুজনেই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। নিজের ক্যাম্পাসে এরকম শারীরিক, মানসিক হ্যারেস্মেন্ট হামলার শিকার হব সেটা মেনে নেয়া অসম্ভব।

আজকে পরিচয়পত্র দেখানোর পর তাদের সিনিয়র জানার পরও হ্যারেস করল।

আমার যে জুনিয়র বোন বা ভাই মাত্রই ক্যাম্পাসে আসল তাদের নিরাপত্তা কি তাহলে? আমার ক্যাম্পাসে আমি অতর্কিত হামলার শিকার হব কেনো?

আমরা সূর্য সেন হল এর প্রভোস্ট স্যার এর সাথে কথা বলেছি। স্যার আমাদের কে আগামীকাল লিখিত দিতে বলেছেন। এবং প্রক্টোরিয়াল টিম ও আমাদের ন্যায্য বিচার এর আশ্বাস দিয়েছেন এই পর্যন্ত। আমরা লিখিত দিব।

আসাদ এর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না। আমার পায়ে ড্রেসিং করতে হয়েছে। মাথা আর ঘাড় এ প্রচন্ড ব্যাথা।

অনেকের অনেক প্রশ্ন মনে জাগছে বা বিষয়টার সাথে অন্য কোনো কিছু যুক্ত কিনা জানতে চাইছে।

I am clearing on this point...

আমাদের যারা চিনেন তারা নির্দ্বিধায় বলতে পারবেন আমাদের এই ঘটনার পেছনে অন্য কোনো কিছুর সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা সম্পূর্ন টাই আমাদের অসম্মান করা হয়েছে। we have enough honorable and clean image in our university to senior,junior,classmates.so,it was just unexpected hit from some morally destroyed boys.

নিজ মুখে নিজ ক্যাম্পাসের ভয়াল বিভীষিকাময় ঘটনার কথা বর্ণনা করতে যেয়ে আজ আমি ঢাবিয়ান বলতেই এক অসামান্য লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছি।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল ইমরান পলাশ, ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস (ইসোল) বিভাগের অর্পন, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের সিফাতুল্লাহ নেতৃত্ব দেয় বলে জানা গেছে। তাদের নেতৃত্বে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের বেশ কয়েকজন হামলায় অংশ নেয়।

এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, এ ঘটনায় আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করব।


আপনার মন্তব্য

আলোচিত