সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ১৯:৫০

‘গৃহস্থালি কাজ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হলে দেশের জিডিপি ২৬ শতাংশ বাড়বে’

শাবিপ্রবিতে গৃহস্থালি কাজ নিয়ে জাতীয় বিতর্ক উৎসবে ড. মোমেন

গৃহস্থালি সেবামূলক কাজকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে দেশের জিডিপি ২৬ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে, বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আব্দুল মোমেন।  

সোমবার (১৫ অক্টোবর) সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) বাংলাদেশের নারীদের গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও পুনর্বন্টন নিশ্চিতকরণে একশনএইড-ডিইউডিএস জাতীয় বিতর্ক উৎসব ২০১৮ এর সিলেট বিভাগীয় পর্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে এই মন্তব্য করেন তিনি।

সমাজ ও দেশের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পুরুষদের এগিয়ে এসে নারীদের গৃহস্থালি সেবামূলক কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সমাজে সমৃদ্ধি রক্ষা করতে প্রয়োজন পুরুষদের গৃহস্থালি সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি। আর এই জন্য প্রয়োজন সচেতনতা তৈরি এবং গৃহস্থালি সেবামূলক কাজকে অর্থকরী কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দান। ঘরের সেবামূলক কাজকে অর্থনৈতিক মানদণ্ডে স্বীকৃতি দিলে মানুষের কাছে এই কাজের মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশে একজন নারীকে তার জীবনের প্রায় ১২ বছর কাটাতে হয় রান্নাঘরে। একজন নারী গৃহস্থালি সেবামূলক কাজে দৈনিক সময় দেন ৭.৭৭ ঘণ্টা এবং পুরুষরা সময় দেন ১.৩২ ঘণ্টা। একশনএইড বাংলাদেশের এই গবেষণা ফলাফলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ব্যবধান কমিয়ে আনা প্রয়োজন এবং সে জন্য নারী ও পুরুষ উভয়ের সমন্বয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

সমাপনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন শাহজালাল ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির মডারেটর অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। এসময় তিনি পুরুষদের প্রতি গৃহস্থালি সেবামূলক কাজে নারীদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে আহবান জানিয়ে বলেন, প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসে, নারী পুরুষ মিলে সকল কাজ মিলেমিশে করে তবে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

একশনএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার নূরে জান্নাত প্রমা বলেন, গৃহস্থালি কাজগুলোর মধ্যে পড়ে রান্না করা, সন্তান লালন-পালন করা, থালা-বাসন ধোঁয়া, কাপড় ধোঁয়া, ঘর-উঠান পরিষ্কার করা, জ্বালানি/লাকড়ি সংগ্রহ করা, পানি আনা, পরিবারের সদস্য-বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তিদের সেবা করা। একশনএইড বাংলাদেশ ২০১১ সাল থেকে গৃহস্থালি সেবামূলক কাজ নিয়ে নানারকম কার্যক্রম ও গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন নারী একাজের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন পান না। আর বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের কোন আইন বা নীতিতে গৃহস্থালি সেবামূলক কাজকে শ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়নি। অর্থনৈতিক কোন পরিসংখ্যানে এ কাজের কোন উল্লেখ নেই। রাষ্ট্রের প্রধান অর্থনৈতিক দলিল, বাজেট কিংবা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাপকাঠি জিডিপিতে এর কোন উল্লেখ বা স্বীকৃতি নেই।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি এস. এম. রাকিব সিরাজী। এসময় তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে সিলেটের ভূমিকা অনস্বীকার্য উল্লেখ করে বলেন, “গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি, মূল্যায়ন এবং পুনর্বন্টন নিশ্চিতের দাবি নিয়ে এই জাতীয় বিতর্ক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আমরা বিশ্বাস করি যে সিলেটের এই বিতার্কিকদের মধ্য দিয়ে এই বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি সম্ভব”।

এ সময়ে আরো বক্তব্য রাখেন সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ের কো-অরডিনেটর আবু তাহের এবং এসইউডিএস এর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ।

একশনএইড বাংলাদেশ এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি-ডিউডিএস আয়োজিত এই দেশব্যাপী বিতর্ক উৎসবের মূল বিষয় ‘গৃহস্থালি সেবামূলক কাজ: চাই স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও পুনর্বন্টন’, আর এই আয়োজনে আঞ্চলিক সহায়তা করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেডিটিং সোসাইটি এসইউডিএস।

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘গৃহস্থালি সেবামূলক কাজ’ বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার পাশাপাশি ছিল, বারোয়ারি বিতর্ক, বিষয়ভিত্তিক সেমিনার, বিতর্ক কর্মশালা এবং পুরষ্কার বিতরণী পর্ব। সংসদীয় বিতর্কে জয়ী হয় পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজ এবং রানার আপ হয় এসইউডিএস।

সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ের এই উৎসব উদ্বোধন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস উদ্দিন। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, “আমাদের সমাজে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। নারীরা ভোর থেকে রাত অবধি গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত থাকেন কিন্তু তারা তাদের কাজের স্বীকৃতি পান না”। বিতার্কিকগণ যুক্তি-তর্কের মধ্য দিয়ে সমগ্র দেশ ও সমাজের সামনে এই স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাবিপ্রবি আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হিমাদ্রি শেখর রায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন।  

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিউডিএস সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আসাদ, শাহজালাল ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মোঃ তোফায়েল আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক রাইতাহ বিনতে আহসান।

সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসজুড়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের আটটি বিভাগকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক পর্যায়ে ৬টি অনুষ্ঠান হচ্ছে। এরই মধ্যে খুলনা, ঢাকা-ময়মনসিংহ, রাজশাহী-রংপুর এবং চট্টগ্রাম-কুমিল্লা পর্যায়ের বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকল অনুষ্ঠান আয়োজন শেষে সর্বশেষ এবং সপ্তম আয়োজনে আঞ্চলিক পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলোর সমন্বয়ে আয়োজিত হবে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা।

আয়োজকরা জানান, নারীর ক্ষমতায়ন, সর্বোপরি দেশের উন্নয়নের এই আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে তরুণ সমাজ রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা। তাই তাদের কাছে গৃহস্থালি সেবামূলক কাজ বিষয়টি সম্পর্কে তুলে ধরা এবং তাদের মাধ্যমে পুরো দেশকে একটি প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ভেঙ্গে দিয়ে প্রগতির পথে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই আয়োজন। একশনএইড বাংলাদেশ ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজনে দেশ ব্যাপী আয়োজিত বিতর্ক উৎসবে দেশের প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত