সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ অক্টোবর, ২০১৮ ১৭:১৭

সিকৃবির গবেষণায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ব্যাপক সাফল্য

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় মাঠ পর্যায়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ব্যাপক সফলতা পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায় ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২  (এনএটিপি-২) এর সহায়তায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

শনিবার (২০ অক্টোবর) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর খসরু মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সিলেট অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের পুষ্টি ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে।  

সারা বছর এ দেশে টমেটোর ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জনপ্রিয় এই সবজিটি আবহাওয়াগত কারণে সাধারণত বাংলাদেশে শুধু শীতকালে চাষ হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে ভোক্তাদের কাছে এর প্রাপ্তিকাল শুধু শীতকালের কয়েকটি মাস। ফলে গ্রীষ্মকালে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হয়। এ সময় টমেটোর বাজার মূল্য বেশী থাকায় সবার পক্ষে টমেটো ক্রয় করা সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশে অন্যতম প্রধান সবজি টমেটো। স্বাদ, আকর্ষণীয়তা, উচ্চ পুষ্টিমান, হরেক রকমের ব্যবহার ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদনযোগ্যতার জন্য সর্বত্রই এই ফসলটি সমাধিক জনপ্রিয়। টমেটো সবজি ফসল হলেও এটি রান্না না করেও সালাদ হিসেবে প্রচুর পরিমাণে খাওয়া হয়।

সিলেট অঞ্চল বৃষ্টিবহুল হওয়ায় এ অঞ্চলে গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে টমেটো চাষ বেশ কষ্টকর। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মাটিই অম্ল এবং মাটির উর্বরতা নিম্ন থেকে মধ্যম। ভূ-উপরিস্থ সেচের পানির অভাব, গ্যাস ও পাথরের কারণে অনেক স্থানে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের প্রতিবন্ধকতা, পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা, মাটি এঁটেল প্রকৃতির হওয়ায় মাটিতে রস কম থাকায় সম্পূরক সেচের অভাবে সময়মত ফসল রোপণ করতে না পারাসহ সর্বোপরি কৃষি শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকদের পক্ষে অধিক ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না।

বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়রোধ, জনগণের পুষ্টিমান, কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করে  সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ সিলেট অঞ্চলের জন্য চাষোপযোগী টমেটোর জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সফলতা অর্জন করেছে। উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ সম্প্রসারণে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ফলন ও উচ্চ মূল্য প্রাপ্তির কারণে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ সিলেট অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং কৃষকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আব্দুল মুকিত তাদের মধ্যে একজন সফল গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষি। তিনি এ বছর প্রায় ১৫ শতক জমিতে বারি হাইব্রিড টমেটো-৮ জাতের টমেটোর চারা জুলাই মাসের শেষে রোপণ করে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ইতিমধ্যে তিনি ২৭০০ কেজি টমেটো ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন এবং আরও ৩০০০ কেজি টমেটো বিক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাপক মুনাফা অর্জনের আশা ব্যক্ত করেছেন।

এছাড়া একই উপজেলার সফলচাষি মেহরাজ ১০ শতক জমিতে, মো. মুকিত ৪০ শতক জমিতে, শ্রীমঙ্গল উপজেলার নিজাম উদ্দিন ২০ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে লাভবান হয়েছেন।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত এনএটিপি-২ প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সঠিক জাত নির্বাচন ও গ্রাফটেড চারা ব্যবহার ও উপযুক্ত চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করলে সিলেট অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ভাল ফলন পেতে হলে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার প্রয়োগ, মাটির অম্লতা নিয়ন্ত্রণে ডলোমাইট প্রয়োগ, জমির স্যাঁতস্যাঁতে ভাব থেকে রক্ষার জন্য চারা রোপণে উঁচু বেড তৈরি, ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ থেকে গাছকে রক্ষার জন্য টমেটোর গ্রাফটেড চারা রোপণ ও ভাইরাস রোগ দমনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত