রাবি প্রতিনিধি

০৯ নভেম্বর, ২০১৮ ১৬:২৯

রাবিতে শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা আদায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে হল কক্ষে জিম্মি ও মারধর করে ২০ হাজার টাকা আদায় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতাসহ স্থানীয় এক শিক্ষার্থী। তবে সেই ঘটনার খবর জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা না নিলেও শুক্রবারের মধ্যে টাকা উদ্ধার করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯১ নম্বর কক্ষের এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আল ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডীর এক মেচে থাকেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁ।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাফিউর রহমান শাফি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও ফার্সি সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং নাইম ইসলাম ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

শাফি ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত হলেও নাইম ছাত্রলীগের কেউ না বলে জানান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

ভুক্তভোগীর শিক্ষার্থী আল ফারুক বলেন, “গত দুইদিন আগে থেকে আমার বিভাগের বড়ো ভাই নাইম আমাকে বলে আসছে, আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের বড়ো ভাইদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন তিনি। আমি বললাম, আমার পরীক্ষা চলছে, আমি যেতে পারবো না। পরে আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় জোর করলে আমি তার সঙ্গে এই হলে আসি। হলে আসা মাত্রই আমাকে ১৯১ নম্বর কক্ষে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাফিন বলে, তোর ফোনটা দে। পরে ফোন নিয়ে ফেইসবুক লগইন করে বলে, তুই শিবির করিস, তুই এই পেইজে লাইক দিছোস। আমি শিবির করি না, এটা তাদেরকে বলি। তারা আমাকে মারতে থাকে। চড়-থাপ্পড় মারে। একপর্যায়ে রড দিয়েও পিঠে আঘাত করে।”

“পরে একপর্যায়ে তারা আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বলে, যদি না দিস তবে হাড়গুড় ভেঙে পুলিশে দিয়ে দিবো। পরে আমি আমার বাবাকে ফোন দিই। বাবা ১০ হাজার টাকা পাঠায় এবং আমার বড়ো ভাই ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। তারা পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, এই কথা যদি বলিস, তবে তোর খবর আছে?”

পরে জেলা সমিতির সভাপতিকে বিষয়টি জানালে তারা আপনাদেরকে (সাংবাদিক) জানায়।

এ ঘটনা ঘটার পর পরই ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ওই হলের গেস্ট রুমে বসে আল ফারুকসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে। পরে টাকা পাঠানোর বিকাশ নম্বরে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাফিন ঘটনা বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি টাকার কোনো খবর জানি না। কিন্তু একটু পরেই সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে সব স্বীকার করে নেয় এই নেতা। তিনি বলেন, “সব টাকা নাইমের কাছে।”

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ২০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, “শাফিনকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নিবো। সে কেনো এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে তার কক্ষে স্থান দিলো সেই মর্মে তাকে শোকজ করা হলো। তবে আগে টাকা উদ্ধার করতে হবে। টাকা তো নাইমের কাছে। নাইম ছাত্রলীগের কেউ না। কাল (শুক্রবার) রাত ৮টায় এ হলের এখানেই ফারুকের ২০ হাজার টাকা আপনাদের (সাংবাদিকদের) উপস্থিতিতে দেওয়া হবে। আর নাইমের বিরুদ্ধে অপহরণ বা অন্য কোনো মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি জানান।”

তবে এ ঘটনায় প্রক্টরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, “আমরা জানার আগে আমাদের প্রক্টরকে ঠাকুরগাঁও জেলা সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে প্রক্টর জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে আমরা ১১টার দিকে ফোন দিলেও তিনি আসেননি। এটা তার দায়িত্বে অবহেলা নিঃসন্দেহে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, “ওই ছেলে (ফারুক) জিম্মিকারীদের চাপে পড়ে তার বাবার কাছে টাকা চাইলে তার বাবা ঠাকুরগাঁয়ের অন্যদের জানান। পরে সোহান নামে ঠাকুরগাঁওয়ের এক শিক্ষার্থী আমাকে ঘটনাটি বললে, আমি পুলিশ প্রশাসনকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি অবহিত করি। পরে শুনলাম ছেলেটি তারা ছেড়ে দিয়েছে।”

ফারুককে ছেড়ে দেওয়ার পর আপনি বা আপনার প্রশাসন কেউ আসেনি কেনো- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, “তখন রাত অনেক ছিলো। আমার আসা হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে আমার যোগাযোগ ছিলো অন্যদের সঙ্গে। হয়তো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ তাদের চোখে পড়েনি, তাই তারা একটু ক্ষোভে আছে হয়তো। কিন্তু আমার সবধরনের ব্যবস্থাই ছিলো।”

তিনি বলেন, “আমি ওই ছেলেকে (ফারুক) ফোন দিয়েছি সকালে। তার পরিবারের বাবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আর যেহেতু অভিযুক্তদের পাওয়া গেছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে আইন অনুযায়ী।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত