রাবি প্রতিনিধি

০১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২৩:২৬

রাবিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে ছাত্রলীগের হামলায় সাংবাদিকসহ আহত ৭

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দহন’ সিনেমার ব্যবসায়িক প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র জোটের ওপর হামলা চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এসময় কর্তব্যরত সাংবাদিককেও লাথি মারে ছাত্রলীগের এক নেতা।

মারধরের শিকার আন্দোলনকারীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের মদদেই এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন প্রক্টর।

শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিক আলী ইউনুস হৃদয়, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক মহব্বত হোসেন মিলন, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এ.এম. শাকিল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিঠুন চন্দ্র মহন্ত, ছাত্র ফেডারেশনের প্রচার সম্পাদক ইসরাফিল আলম, কর্মী রাশেদ রিমন, আশরাফুল আলম আহত হন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুপুর দুইটা থেকে প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আন্দোলন করছিল প্রগতিশীল ছাত্রজোট নেতা-কর্মীরা। বিকেল তিনটার দিকে প্রক্টর এসে তাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলেন। এরপরও তারা আন্দোলন বন্ধ না করলে প্রক্টরের উপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর নেতৃত্বে হামলা চালায় ছাত্রলীগ।
এসময় প্রক্টরের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ তুলে আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করে সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান খান নাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবিরুল জামিল সুস্ময়, মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌস মাহমুদ শ্রাবণ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজাসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী ইসরাফিল আলম বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাচ্ছিলাম। প্রক্টর স্যার এসে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলেন। আমরা বন্ধ না করলে হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।

ইউনিয়নের সভাপতি এ.এম. শাকিল হোসেন, আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের নামে প্রোপাগান্ডা চালায় যে, আমরা প্রক্টরের গায়ে হাত তুলেছি। কিন্তু আমরা তা করিনি। বরং শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছি। তারপরও হঠাৎ তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।

শাকিল আরো বলেন, এসময় মিঠুন চন্দ্র মহন্তকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এলোপাথাড়ি মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মিঠুনকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে শাকিল জানান, মিঠুনের একটি হাত মচকে গেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের চিহ্ন রয়েছে।

‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজা শাকিলকে মারধর করেন’, দাবি করেন শাকিল।

মারধরের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টস ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক খোলা কাগজ-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আলী ইউনুস হৃদয় বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালালে মারধরের হাত থেকে বাঁচতে আন্দোলনকারী একজন আমার পিছনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করে। এসময় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাবিরুল জামিল সুস্ময় আমার কোমরে সজোরে লাথি মারে।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, “আমরা ওখানে গিয়ে দেখি একটা ঝামেলা হয়েছে। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগেরও বাকবিতণ্ডতা হয়। শুনছি একজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও নাকি ঘটেছে। যদি সত্যি এ ঘটনা ঘটে থাকে, আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর লুৎফর রহমান বলেন, “আমি ওখানে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। সবাই জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংগঠন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করলে কোনো সমস্যা ছিল না। আমি বলেছি, যদি শিক্ষার্থী বান্ধব না হয় আমরা বন্ধ করে দিব। আন্দোলনকারীরাও বলেছে, তারা আজকের পর কোনো কর্মসূচি পালন করবে না। এসময় দুয়েকজন বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে অডিটোরিয়ামের গেট বন্ধ করে দিলে ঝামেলা বাঁধে।”

আন্দোলনকারীদের অভিযোগের বিষয়ে প্রক্টর বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। ওখানে পুলিশ প্রশাসন, প্রক্টর বডি উপস্থিত ছিল। তাছাড়া আমি কেনো নির্দেশ দিতে যাব?”

প্রদর্শনীর নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, “এখানে পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দারা আছেন। তারা আমাদের সাহায্য করছেন। আমরা চেষ্টা করব বহিরাগত দর্শকের যাতে কোনো সমস্যা না হয়।”

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে জাজ মাল্টিমিডিয়া’র ব্যানারে নির্মিত ‘দহন’ সিনেমার বাণিজ্যিক প্রদর্শনীর অনুমতি দেওয়ার ঘটনায় এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করে ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত