রাবি প্রতিনিধি

১৩ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৬:৪৫

রাকসু নিয়ে শিগগির সংলাপ : উপাচার্য

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে শীঘ্রই সংলাপে বসতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রোববার (১৩ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্টার্স ইউনিটির নব গঠিত কমিটির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান।

উপাচার্য বলেন, ‘আমি চাই ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই করুক। বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পাকিস্তান আমল থেকেই এটা চর্চিত হয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রদের সংগঠনগুলো বন্ধ থাকার ফলে প্রকৃত অর্থে ছাত্র রাজনীতির গুণগত মান হ্রাস পেয়েছে। সকল ছাত্রের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের একটা আলাদা শক্তি থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ তারা দেখবে; এটা তাদের প্রতিষ্ঠান। তা কিন্তু হয়ে আসছে না।’

উপাচার্য আরো বলেন, আমি বার বার বলেছি, ছাত্র সংগঠনগুলো চাইলে আমি নির্বাচন দিব। এর আগে যখন আমি দায়িত্ব পালন করেছি, তখনও তারা চায়নি বলেই আমি নির্বাচন দিতে পারিনি। এখন দেখা গেল, আমি নির্বাচনের তারিখ দিলাম, কিন্তু তারা আসলো না; একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো। এজন্য সকল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে, তারা সত্যিকার ভাবে মন থেকে নির্বাচন চায় কি না সেটা নিশ্চিত হয়েই রাকসু নির্বাচন দেওয়া হবে।’

রাকসু নির্বাচন না চাওয়ার কারণ হিসেবে অধ্যাপক সোবহান উল্লেখ করেন, ‘প্রত্যেক সংগঠন মনে করে, নির্বাচন হলে একটা সংগঠন হয়ে যাবে। সব ছাত্রের প্রতিনিধিত্ব করবে রাকসু প্রতিনিধিরা। তারা মূলত নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবেই মন থেকে রাকসু নির্বাচন চায় না।’

ছাত্র সংগঠনগুলো যা বলছে
দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে অচল থাকা রাকসু সচল করার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাকসু আন্দোলন মঞ্চ গড়ে ওঠে। ওইদিন রাকসুর দাবিতে শপথ গ্রহণ, শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বলন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে চার দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর, ১৯ ডিসেম্বর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি, ২৩ ডিসেম্বর বিতর্ক ও মুক্ত আলোচনা, ৩১ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সংহতি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (রাসু) নাম পরিবর্তন করে গড়ে ১৯৬২ সালে রাকসু নামে যাত্রা শুরু করে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদে। ১৪ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া রাকসুর ১৯৭০ থেকে ১৯৭২, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৯৮৯ সালের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে দেশে নানা অস্থিরতার অজুহাত তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাকসু নির্বাচন।

সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আসায় রাকসু নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়টি নড়েচড়ে বসেছে। তারাও ডাকসুর মত অতি শীঘ্রই রাকসু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সংগঠক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘২০১৭ থেকে আমরা রাকসুর দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। উপাচার্য সবসময় আশ্বাস দিয়েছেন, কোনো উদ্যোগ নেননি। এখন সংলাপ বলতে হতে পারে উনি সব ছাত্র সংগঠনকে ডেকে তাদের মতামত জানতে পারেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো ছাত্র সংগঠনের কাছে জানতে পারেন না যে, নির্বাচন দেব কি দেব না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে জানানো দরকার, আমরা রাকসু নির্বাচন দেব, আপনারা প্রস্তুতি নেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘রাকসু সংসদ নির্বাচন এটা দীর্ঘ দিনের দাবি। এ দাবি বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দ্রুতই নির্বাচনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসবো।’

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রস্তুত থাকলে আমরাও অংশ নিতে প্রস্তুত আছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে। তাছাড়াও নির্বাচন সম্ভব না। এ বিষয়ে প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ দেখছি না। রাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতির আগে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান জরুরি বলে মনে করি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত