হোসাইন ইমরান, শাবি

১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ১৫:২৬

ফেসবুকে শাবি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরব সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা

প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনার পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসদাচরণের অভিযোগ এনেছেন তাদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।

অধ্যয়কালীন সময়ে বিভাগের সংলিষ্ট কোর্স শিক্ষকের কাছে তাদের হয়রানির ঘটনা তুলে ধরছেন ফেসবুকে নিজের ওয়ালসহ বিভিন্ন গ্রুপে।

গত রোববার রাতে সিলেট শহরের কাজলশাহ এলাকার একটি মেস থেকে স্নাতক ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আত্মহত্যার ঘটনায় প্রথম থেকেই জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাস্টার্সে নম্বর কম দেওয়া এবং থিসিসের জন্য সুপারভাইজর না দেওয়াসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা অসদাচরণের অভিযোগ তুলছে প্রতীকের পরিবার।

এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও নানা সময়ে করা অসদাচরণ ও হয়রানির অভিযোগ তুলছেন বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। বিশেষ করে খাতায় নম্বর প্রদান ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রের অনৈতিকতাকে তুলে ধরছেন তারা।

এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে স্নাতকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করা পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হোসাইন শিক্ষকদের রোষাণলে পড়ে স্ট্রোক করে মারা যান বলে অভিযোগ উঠে। মোজাম্মেলের বন্ধু তানভির আহসান সৌরভ বলেন, সে অনার্সে প্রথম হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষকরা তাকে পেছনে ফেলতে মাস্টার্সে নম্বর কম দেন। এতে সে হতাশ ভেঙে পড়ে। এক পর্যায়ে স্ট্রোক করে মারা গেল।”

তানিয়া আহমেদ নামের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এক ফেসবুক পোস্টে তার সময়ে শিক্ষক নিয়োগে অনৈতিকতার ঘটনা তুলে ধরেন।

তিনি লেখেন, “আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া ছাত্রী। বাট আমি শিক্ষক হইনি এবং প্রতীকের মতো কষ্ট পেয়ে আত্মহত্যা করিনি।”

তিনি লেখেন, “ আমি শিক্ষক হইনি কারণ আমি ছাত্রলীগ করতাম না। তখন জনৈক এক ছাত্রলীগ নেতার শখ হলো তিনি টিচার হবেন। উনি দেখলেন যে উনার শিক্ষার ঝুলিতে শিক্ষক হওয়ার মতো তেমন কিছু নেই, কিন্তু উনার ক্ষমতা আছে।”

নিয়োগের দিন ভিসিসহ ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীদের ৩ ঘন্টা অবরোধ করে বোর্ড বাতিল করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরে তিনি সুইডেন চলে গেলে দুইবছর পর ওই ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় বলে তার অভিযোগ।

ইমরান আহমেদ নামের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, “ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হতো প্রতিপক্ষের হাতে বা ক্যাম্পাসে বেশি শক্তিশালি কোন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। আজকাল তা আর দেখা যায় না। এখন শিক্ষার্থী ভাই ও বোনরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয় বিভাগের শিক্ষকদের মাধ্যমে বা সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের মাধ্যমে। যে নির্যাতন অপরাপর সকল নির্যাতন থেকে শক্তিশালী। যা নিরবে সয়ে যেতে হয়, প্রতিবাদের উপায় থাকে না।”

অনুপম মাহমুদ নামের সমাজকর্ম বিভাগের এক শিক্ষার্থী লেখেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষক নিজেদের ইশ্বর ভাবেন। নম্বর প্রদানে তাদের ভালোবাসা ও বিরাগ কমবেশি আমরা সবাই জানি। শিক্ষক নিয়োগের বেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটা কদর্য হতে পারে সেটা আমরা জানি। সহস্র তরুণের স্বপ্ন ভঙ্গের কান্না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আকাশে বাতাসে মিশে আছে...”

হাসান আদিল নামে বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফেসকুকে লেখেন, “২০১০ সালে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। ভর্তির পর নম্বর প্রদানে আমার সুবিধা-অসুবিধা দুটিই ছিল। কোনমতে স্নাতকটা শেষ করেছি। মাস্টার্স করার সাহস পাইনি। চলে এসেছি।”

কতিপয় শিক্ষকের এমন অসদাচরণের ঘটনার বাস্তবাতা আছে বলে স্বীকার করছেন কোন কোন শিক্ষকও। ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টি টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনির হোসাইন এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “ছাত্র ও একজন ক্ষুদ্র শিক্ষক হিসেবে ১৩ বছর ধরে শাবির সাথে জড়িয়ে আছি। ফলে বিভিন্ন বিভাগের ঘটি-বাটির আওয়াজ মাঝে মাঝে শুনতে পাই। প্রতীকের আত্মহননে যে বিষয়গুলো আজ উঠে আসছে তার বাস্তব ভিত্তি নিশ্চয়ই আছে। বিনয়ের সাথে একজন অভিযুক্ত শিক্ষক হিসেবে বলছি-স্যার সরি, নিজেকে আজ শিক্ষক ভাবতে কেন যেন বড় ঘেন্না হয়।”

শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালযের ছাত্র-উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, “শিক্ষার্থীরা বিভাগে শিক্ষকদের দ্বারা কোন হয়রানির শিকার হলে ছাত্র উপদেষ্টার কাছে আসবে। এখানে আমরা চাইব তাদেন সমস্যার সমাধান করতে। এখানে না হলে প্রক্টর আছেন, ভিসি আছেন তাদের কাছে যাবে।”

তিনি বলেন, “একটা সুযোগ পেয়ে সবার এভাবে বলাটা ঠিক না। আমি মনে করি, যেখানে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে বলা উচিত, সেখানে বলা। তাতেই সমাধান আসবে। ”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত