শাবি প্রতিনিধি

১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ২২:০৪

শাবিতে 'দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায়' সরানো হলো ডাইনিং পরিচালককে

শিক্ষার্থীদের মিল থেকে দুই টাকা করে হাতিয়ে নেওয়ার গোপন তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শাহপরান হলের ডাইনিং পরিচালককে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রভোস্টের বিরুদ্ধে।

অভিযোগকারী শাহপরান হলের ডাইনিং পরিচালক অনিল চন্দ্র দাস বলেন, "হল প্রভোস্ট শাহেদুল হোসাইন হলের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মিল থেকে দুই টাকা করে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমি ফাঁস করে দেয়ার কারণে তিনি আমাকে জোর করে ডাইনিংয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। আমার ও আমার ভাতিজার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে পাতিল চুরির সাজানো মামলা। এদিকে আমার ভাতিজাকে সেই অভিযোগে থানায় তুলে নেওয়া হয়েছে।"

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রভোস্ট শাহেদুল হোসাইন বলেন, "সে (অনিল) দায়িত্বে থাকাকালীন ডাইনিং এর পাতিল চুরি হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখেছি এখানে অবশ্যই তার গাফলতি আছে।"

এদিকে ডাইনিং পরিচালক ও হল প্রশাসনের পরস্পরের দিকে এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও অনিলের ডাইনিং পরিচালনায় নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শাহপরান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন "অনিল ভালোই চালিয়েছিলেন হলের ডাইনিং। খাবার অন্য সময়ের তুলনায় ছিল মানসম্মত। কিন্তু প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে তার জায়গায় আগেরবার শিক্ষার্থীদের মিল চালাতে ব্যর্থ হওয়া বাসিত মিয়াকে আবারো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।"

এ বিষয়ে অনিল বলছেন, "আমাকে ফাঁসি দেওয়া হলেও আমার কোন দুঃখ থাকতো না। কিন্তু তারা আমাকে যে অপমান করেছেন তা ভাষায় বলে বুঝানোর মতো না। বাসিত বিভিন্ন সময়ে আমাকে ও আমার বাবুর্চিকে হুমকি দিতো। আমরা তাদের ভয়ে কিছু বলতাম না, মুখ বন্ধ করে থাকতাম। আমি ডাইনিং এর দায়িত্ব পাওয়ায় অন্যসব ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি অতল সাগরে তলিয়ে গেলাম!।"

তিনি আরো বলেন, "আমার নিজের জিনিস চুরি হয়েছে; অথচ আমাকেই সন্দেহভাজন হিসেবে মামলায় নাম দেওয়া হলো। কিন্তু কেনো তা আমি বুঝতে পারছি না। তাছাড়া আমি ডাইনিং চালাতে ইচ্ছুক। তারপরও বাদ দেওয়া হলো।"

এদিকে কয়েক মাস আগে ডাইনিং পরিচালক হিসেবে বাসিত মিয়া ডাইনিং চালাতে অক্ষম হওয়ায় তাকে ছাঁটাই করেছিল হল প্রশাসন।

কিন্তু আবার কেন তাকেই এ দায়িত্ব দেয়া হল এমন প্রশ্নে প্রভোস্ট বলেন, "আসলে এটা কারো জন্য পারমানেন্ট কিছু না। বাসিতকে আমরা তিনমাসের সময় দিয়েছি। এর মধ্যে যদি সে ভালো চালাতে পারে, ভালো খাবার পরিবেশন করতে পারে তবে তাকেই রাখা হবে।'

আবাসিক শিক্ষার্থীদের মিল প্রতি দুই টাকা করে সরিয়ে নেওয়ার তথ্য ফাঁস করায় ক্ষোভ থেকেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনিলের এমন অভিযোগ সম্পর্কে প্রভোস্ট বলেন, "এটা ঠিক না। ক্ষোভ থাকলে তো তাকে অনেক আগেই সরিয়ে দিতাম। কথা হলো অনেকে প্রশাসনিক পোস্টে আসতে চায়; কিন্তু পারে না। তাই এমন ঝামেলা করে।"

এদিকে হলের ডাইনিং থেকে অনিল সরিয়ে দেওয়ায় ভিন্নমত পোষণ করছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আবাসিক ছাত্র মো. সালসাবিল বলেন, "কাউকে হুট করেই এভাবে ডাইনিং থেকে বিতাড়িত করাটা সুযোগ নাই বলে মনে করি। সে ভালোই ডাইনিং চালাচ্ছিল তাকে বাদ দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নাই। আমি মনে করি এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ছাত্রদের মতামত নেয়া প্রয়োজন।"

পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া বলেন, "উনি ডাইনিং ভালোই চালাচ্ছিলেন এবং আগের যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো ছিল। যতদূর শুনেছি তাকে প্রতি হিংসাপরায়ণ হয়ে হুট করেই বাদ দেয়াটা আশ্চর্যজনক! আমরা চাইবো উনি চালাতে চাইলে তাঁকে আবার সুযোগ দেয়া উচিত।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত