নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:৫৬

সিকৃবিতে পরিচিতি পর্বের নামে নির্যাতনের শিকার নবীন শিক্ষার্থীরা

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার তলার গ্যালারি রুম থেকে কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসেন নীলা (ছদ্মনাম)। খালি পায়ে পাগলের মত সিঁড়ি বেয়ে নেমে ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা চানাচুর বিক্রেতার সামনে এসে দাঁড়ান তিনি। তার আচরন অস্বাভাবিক লাগায় চানাচুর বিক্রেতা তাকে পানি দেন। এইসময়ে নীলার কাছে আসেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষার্থী। তারা নীলাকে বুঝাতে থাকেন- এসব কিছু না। সিনিয়ররা এভাবেই পরিচয় নেন। তখনও কেঁদে যাচ্ছিল নীলা।

এই ঘটনাটি সোমবার বিকেলের। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকেই জানা যায় এ ঘটনার বিবরণ। নীলা নামের ওই শিক্ষার্থী বিভাগের বিভাগের সিনিয়রদের দ্বারা র‌্যাগিংয়ের নামে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পরিচিতি পর্বের নামে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্দীঘদিন ধরে চলছে শিক্ষার্থী নির্যাতন। বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের নামে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের উপর।

জানা যায়, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১০ম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হতে আসেন একই বিভাগের ৯ম ব্যাচের সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থী। ওই সময় রোবটিক স্টাইলে পরিচয় দেওয়া, প্রত্যেককে আলাদা করে সালাম-আদাব দেওয়া, নাগিন ডান্স করানোসহ ব্যক্তিগত বিভিন্ন প্রশ্ন করে নাজেহাল করা হয় নবীন শিক্ষার্থীদের। এসময় তাদের করা প্রশ্নের উত্তর মন মত না হলে নতুন শিক্ষার্থীদের শাস্তিও দেন। কাউকে এক পায়ে করজোড় করে দাঁড় করিয়ে রাখা, কাউকে ৪০ বার সালাম দেওয়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের অপমানজনক শাস্তি দেন তারা।

সোমবার পরিচয় পর্বের নামে ৯ম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থীদের হাতে নাজেহাল হন ১০ম ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।

শুধু অর্থনীতি বিভাগ নয়, সিকৃবির অন্য বিভাগগুলোতেও নতুন শিক্ষার্থীরা সিনিয়র শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে র‌্যাগিংয়ের শিকার হন বলে অভিযোগ আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিচিতি পর্বের নামে র‌্যাগিং করেই শেষ হয় না সিনিয়রদের অত্যাচার। ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় বিভিন্ন বিধি নিষেধ। এসবের মধ্যে রয়েছে- ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা একবছর শহীদ মিনারে উঠতে পারবে না। কোনো ক্যান্টিনে ঢুকে খেতে পারবে না। মেয়েরা হলের ভিতর জিন্স প্যান্ট পরতে পারবে না।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল ও সুহাসিনী দাস হলের অবস্থানরত কয়েকজন ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, সিনিয়র আপুরা যখন তখন আমাদের রুমে ঢুকে পড়েন। যাচ্ছেতাই ব্যবহার করেন। হলের ভিতরে জিন্স প্যান্ট পড়তে দেন না। বাথরুম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে তাদেরকে সব সময় আগে দিতে হয়। এক্ষেত্রে জুনিয়রদের জরুরী দরকার হলেও তারা ছাড় দেন না।

প্রতিবছরই পরিচিতি পর্বের নামে নতুন শিক্ষার্থীদের র‌্যাগিং করেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এমনটাই অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ণরত বিভিন্ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিক ভাবে অভিযোগ না করায় কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

যদিও শিক্ষার্থীরা বলছেন, নির্যাতনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকরা অবগত আছেন। নবীনরা ভয়ে অভিযোগ করতে পারে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন জায়গায় আসি। এখানে আসার পরই আমাদের ভয় ভীতি দেখানো হয়। সবার সামনে অপমান করা হয়। পরিবারের স্বপ্ন নিয়ে এত কষ্ট করে ভর্তি হওয়ার পরও এই যন্ত্রনার কথাগুলো পরিবাকে জানাতে সাহস পাই না।

এ ব্যাপারে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুন্ড বলেন, শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছেন এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। র‌্যাগিং যেন কোনো ভাবেই কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সবসময় সর্তক থাকতে বলি। তবে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে আমরা নিশ্চই সেটা তদন্ত করে দেখব। যদি কেউ অভিযুক্ত হয় তার বিরুদ্ধে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব। এক্ষেত্রে অভিযোগকারী নাম পরিচয় প্রকাশ না করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

সিনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক ক্লাসরুমে পরিচিতি পর্বের ব্যাপরে তিনি বলেন, অফিসিয়ালি এ ধরনের পরিচিতি পর্বের কোনো নিয়ম নেই। পরিচয় পর্বসহ যা কিছু করা হয় সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অফিসিয়ালি করা হয়। তবে অনেক সময় বিভিন্ রাজনৈতিক দলের শিক্ষার্থীরা পরিচিতি পর্ব করে দলের স্বার্থে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত