সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ এপ্রিল, ২০১৯ ১৫:১২

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি

উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় এক ঘণ্টা দক্ষিণাঞ্চলের সব পথের বাস ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিক্ষোভ শেষে তাঁরা বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন।

দুপুর ১২টার কিছু আগে বরিশাল নগর পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অবরোধ প্রত্যাহারের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে নগর পুলিশ কমিশনার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

সোমবার (১ এপ্রিল) উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা দুইটার দিকে সেই সময়সীমা শেষ হয়।

বুধবার বেলা তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের রক্ত দিয়ে সাদা ব্যানারে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান লেখেন। প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন কক্ষের সামনে সেগুলো ঝুলিয়ে দিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

উপাচার্য এস এম ইমামুল হক আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।

আন্দোলনত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি লোকমান হাকিম দুপুরে জানান, পুলিশ কমিশনারের অনুরোধে তারা দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচি আজ বিকেলে তারা ঘোষণা করবেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

লোকমান হাকিম বলেন, বুধবার বেশ কয়েকজন শিক্ষক আমাদের কাছে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এখন তো আর সমঝোতার কোনো পথ নেই। কারণ, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য অকারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনটি হলের ডাইনিং বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক আচরণ করেছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বুধবার সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে তারা রাজি হয়নি। এখন আমাদের পক্ষ থেকে তো কিছু করার নেই।’

উপাচার্য অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তারপরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো যুক্তি দেখছি না। তাদের দিয়ে একটি গোষ্ঠী বা একটি চক্র আন্দোলন করাচ্ছে। তাদের আন্দোলনে অর্থের জোগান দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে ওই গোষ্ঠী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই দিন দুপুরে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য এস এম ইমামুল হক আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন।

শিক্ষার্থীদের অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশের কথা জানানো হয়। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত