শাবি প্রতিনিধি

০২ জুন, ২০১৯ ০০:৫৭

মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে শাবির নিরাপত্তাকর্মীদের বেতনের টাকা

দৈনিক অাট ঘন্টা ডিউটিতে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতনে চুক্তিদ্ধ হয়েছেন তারা। কিন্তু প্রতিদিন ডিউটি করতে হয় ১৪/১৫ ঘন্টা। অতিরিক্ত শ্রমের বেতন পাওয়া তো দূরের কথা; মূল মাসিক বেতনের টাকাই পান না। কোন মাসে ৭ হাজার, কোন মাসে ৮হাজার টাকা বেতন হিসেবে পান তারা। শ্রমিক প্রতি বাকি ৬/৭ হাজার টাকাই ঢুকছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। কিন্তু ১৪ হাজার ৪৫০টাকা পাচ্ছেন বলে প্রতি মাসে কোম্পানির ম্যানেজারের কাছে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে এসব শ্রমিকদের।

এমন করুণ অবস্থা সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত ‘যমুনা স্টার সেভ গার্ড সার্ভিস লিমিটেড’র কর্মীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী কোম্পানির ম্যানেজার জাহাঙ্গীর অালম ও সুপারভাইজার রাজা মিয়ার বিরুদ্ধে হয়রানি, বেতন কম দেওয়া এবং ব্যাংক চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে গার্ডদেরকে জিম্মি করার অভিযোগ তুলছেন।

এমন লিখিত অভিযোগ এনে সম্প্রতি ৬৫ জন গার্ড তাদের স্বাক্ষরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগপত্রও জমা দিয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুই বছরের জন্য ‘যমুনা স্টার সেভ গার্ড সার্ভিস লিমিটেড’র সাথে চুক্তি করে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন। চুক্তিতে ৮ঘন্টা ডিউটিতে শ্র্রমিকের বেতন ধরা হয়েছিল ১৪,৪৫০টাকা।

অভিযোগ পত্রে ভুক্তভোগী শ্রমিকরা উল্লেখ করেন, "দৈনিক ৮ ঘন্টা ডিউটিতে ১৪,৪৫০ টাকা বেতন দেওয়ার কথা চুক্তিতে ছিল। এছাড়া দুই ঈদ ও বৈশাখী উৎসবে বোনাস দেওয়ারও কথা। অফেরত যোগ্য ২০০০ টাকা জামানত দিয়ে অামরা চাকরির আবেদন করি। প্রত্যেক মাসের ১০ তারিখের মধ্যে একাউন্টের মাধ্যমে বেতন প্রদান করার কথা। কিন্তু ১৪,৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৮০০০ টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ডিউটি তো অাছেই। সেই বেতনের ইয়াত্তা নেই।"

এসব গার্ডরা বলছেন, "এখানে যারা নিয়োগ পেয়েছে সবাই গরীব ঘরের সন্তান, অনেকের উপর সম্পূর্ণ পরিবার নির্ভরশীল। কিন্তু কোম্পানি অামাদের সাথে এমন অমানবিক অাচরণ করছে, অামাদের বেতনের টাকা অাত্মসাৎ করছে, কিন্তু অামাদের সন্তানরা না খেয়ে থাকছে ঘরে।"

"জানুয়ারি মাসে ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আমাদেরকে যমুনা ব্যাংকে একাউন্ট করার জন্য বলেন। এটা নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ। তাই আমরা যথারীতি ওই ব্যাংকে একাউন্ট করি। এছাড়া ব্যাংক চেক এবং  সাদা স্ট্যাম্প কাগজে আমাদের সবাইকে স্বাক্ষর দিতে বলেন ম্যানেজার। এটাও নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশ। ১৪,৪৫০ টাকার পরিবর্তে আমাদেরকে ৮০০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। অামরা প্রতিবাদ করলে ব্যাংক চেক ও সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের মাধ্যমে ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকার মামলায় জড়ানোর পাশাপাশি প্রাণ নাশের হুমকী দেওয়া হচ্ছে। গত ২৬ মে রাতে মার্চ মাসের বেতন হিসেবে খামের ভেতর ৭৪৫০ টাকা দেওয়া হলো। এমনকি প্রতিটি গার্ডের ৪-৫টি হাজিরা কাটা হয়েছে। আমরা বেতন না নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাদের মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে।"

গার্ডদের অভিযোগ, এমন আচরণের পেছনে রয়েছেন ‘যমুনা স্টার সেভ গার্ড সার্ভিস লিমিটেড’র ম্যানেজার জাহাঙ্গীর অালস ও সুপারভাইজার রাজা মিয়া।

আবেদনপত্রে গার্ডরা আরও বলেন," জাহাঙ্গীরের জিম্মি থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। স্বাক্ষরযুক্ত যমুনা ব্যাংকের চেক এবং সাদা স্ট্যাম্প ফেরত চাই। এছাড়া জাহাঙ্গীর সাহেব মোবাইলে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে এবং বহিরাগত ব্যক্তি দিয়ে ক্রমাগত ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। এছাড়া মিটিং ডেকে অামাদের দিনের পর দিন শাসাচ্ছে এবং এ নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ করলে আমাদের এক এক করে চাকুরিচ্যুত করা হবে বলে তারা বলছে।"

সুপারভাইজর রাজা মিয়া একই সাথে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে কর্মরত। যারা তাকে ওভার টাইমের কমিশন দেন তাদেরকেই কেবলমাত্র ওভার টাইম করার সুযোগ করে দেন বলে কর্মীদের অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গার্ড বলেন, "আমরা ৯৬ জন গার্ড চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছি। পাঁচ মাসের মধ্যে আমাদেরকে তিন মাসে ৮০০০ হাজার করে বেতন দেওয়া হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের হওয়ায় তারা আমাদের পুরোপুরি মাসের বেতন দেননি। ২৮ দিন হিসেব করে বেতন দিয়েছে। বৈশাখী বোনাস দেয়নি এবং ঈদ বোনাস দিলেও ১৪০০ টাকা আমাদের কাছ থেকে কেটে রেখে দিয়েছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোম্পানির হাতে টাকা না দিয়ে আমাদের ব্যাংক একাউন্টে টাকা প্রদান করুক। আমরা এ ধরনের জিম্মি দশা থেকে পরিত্রাণ চাই।"

কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানির সুপারভাইজার রাজা মিয়া বলেন, "আমিও একজন কর্মচারী। এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। আপনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন।"

অার যোগাযোগ করার জন্য যমুনা স্টার সেভ গার্ড সার্ভিস লিমিটেড'র ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।

পরে দুইদিনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জহীর উদ্দিন অাহমেদ বলেন, " গার্ডরা অামার কাছে এসেছিল। বিষয়টি অামি জানি। এটা গার্ডদের প্রতি অমানবিক ও অনৈতিক অাচরণ। বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে বন্ধ। খোলার সাথে সাথে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিব।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত