সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৬:৩৫

বশেমুরবিপ্রবি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার দিকে ক্যাম্পাসের বাইরে বেশ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে দুর্বৃত্তরা।

শিক্ষার্থীরা এবং স্থানীয় লোকজন বলছেন, হামলাকারীরা স্থানীয় ভাড়াটে সন্ত্রাসী। তবে তাদের সুনির্দিষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ভিসি ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের নির্দেশেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ভিসি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বশেমুরবিপ্রবির ভিসি ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন চলছে। শিক্ষার্থীরা শুক্রবার সারারাত ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন।

শনিবার বেলা ১২টার দিকে বাইরে থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা হয়। উপজেলার মোড়, গোবড়া, হাসপাতাল মোড়, নীলার মাঠ, নবীনবাগ, সোবহান সড়ক, সোনাকুড় এলাকায় এসব হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ১০-১২ জনকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। গুরুতর আহত কয়েকজনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

ভিসি জানান, ছাত্ররা আমার সন্তানের মতো। তাদের ওপর লোক ভাড়া করে হামলা কেন চালাবো? তারা কিছু দাবিতে আন্দোলন শুরু করে, সেসব দাবি মেনেও নেওয়া হয়েছে। এরপরও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এমনিতেই একসময় আন্দোলন থেকে সরে যাবে। আমি হামলার নির্দেশ দিয়েছি এই অভিযোগ সত্যি নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. মো. বশির উদ্দিন বলেন, ছাত্ররা তো আমাদের ছেলেমেয়ের মতো। আমাদের সঙ্গে তো তাদের ব্যক্তিগত কোনও বিরোধ নেই। তারা বহিরাগতদের হামলার শিকার হোক এটা আমরা চাই না। এ কারণে তাদের বুঝিয়ে আন্দোলন থেকে ফেরানোর চেষ্টা করছি। পুলিশ এবং র‍্যাবও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। বাইরের কারও হামলার শিকার যাতে না হয় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’ কারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত এবং কেন হামলা হয়েছে এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি।

গোপালগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছানোয়ার হোসেন মিয়া জানান, আমরা ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছি। বাইরের লোকজন যাতে হামলা চালাতে না পারে, সেজন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক জানান, ‘হামলার শিকার যেসব শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দুই জন এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন। যে কোনও জরুরি পরিস্থিতির জন্য অ্যাম্বুলেন্স রেডি আছে।’
বশেমুরবিপ্রবি’র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

উল্লেখ্য, ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে আজ শনিবার সকালে এক আদেশের মাধ্যমে বশেমুরবিপ্রবি বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মো. নুরউদ্দিন আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা এই আদেশ জারি করেন। রিজেন্ট বোর্ডের সদস্যদের মৌখিক অনুমতিতে আসন্ন পূজার নির্ধারিত ছুটির সঙ্গে ২২ সেপ্টম্বর থেকে ৩ অক্টোবর তারিখ পর্যন্ত ছুটি বাড়ানোর কথা জানানো হয় আদেশে।

ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করাসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে পদত্যাগের দাবিতে বুধবার রাত থেকে আন্দোলন চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, তবে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলবে। ভিসি পদত্যাগ করলেই কেবল আন্দোলন থেকে সরে যাবেন তারা।

প্রসঙ্গত, ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়াসহ আরও কয়েকটি দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিলেও ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত