সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ নভেম্বর, ২০১৫ ১৬:৪৭

যদি অপঘাতে মরে যাই, বিচার বকেয়া থাকুক

একই দিনে চার লেখক-প্রকাশক-ব্লগারের ওপর জোড়া হামলায় জাগৃতি প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনকে হত্যা এবং শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, রণদীপম বসু ও তারেক রহিমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় ক্ষোভ-নিন্দা ও প্রতিবাদে উত্তাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

সাংবাদিক, ব্লগার, লেখক আরিফ জেবতিক ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- যদি চাপাতির কোপ খেয়ে অপঘাতে মরে যাই-আমার মৃত্যুর পরে যেন ছারপোকা রাজনীতিবিদরা বিবৃতি না দেয়।

তিনি বিচার বিষয়ে লিখেন- আমি দীপন ভাইয়ের বাবার মতো বলব না 'বিচার চাই না', বরং বিচার বকেয়া থাকুক। মুক্তিযুদ্ধের হত্যার বিচার যদি হয়ে থাকে, কোনো একদিন আমার খুনেরও বিচার করবে আমাদের উত্তরসূরীরা।

আরিফ জেবতিকের সে লেখার বিস্তারিত:

"যদি চাপাতির কোপ খেয়ে অপঘাতে মরে যাই-আমার মৃত্যুর পরে যেন ছারপোকা রাজনীতিবিদরা বিবৃতি না দেয়, তাদের পাতিতস্য নেতারা আর দলদাস চামুচরা যেন আমার মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি না তুলে। মূর্খ সাংবাদিকরা যেন আমার ক্রন্দনরত মায়ের মু্খে ক্যামেরা জুম না করে, আমার দিশেহারা স্ত্রী আর বোনের কাছে যেন প্রতিক্রিয়া জানতে না চায়।

উচ্ছিষ্টভোগী বুদ্ধিজীবির দল যেন টিভিতে আমার নাম উচ্চারণ করে টকশো না করে। আমি চাই না শেষ যাত্রায় কোনো কীটসম নপুংসকরা আমার ধারেকাছে ভিড়ুক।

গতকাল ফেসবুকে জানানোর কয়েক মিনিটের মধ্যে আমরা সাধারণ মানুষের শত ব্যাগ রক্তের প্রতিশ্রুতি পেয়েছি, সুযোগ থাকলে এরকম সাধারণ সাহসী গৃহস্ত মানুষের আকূল ভিড়ে পাওয়া রক্ত যেন শেষ সময়ে আমার ধমণীতে যায়।

মাত্র চারজন সাহসী মানুষ আমার কফিনটি বয়ে নিয়ে যাক।

দেশের কোনো এক কোনে আমার চারটি বোন খুব নীরবে আচলে চোখ মুছুক একবার। কোনো এক পিতা, কোনো এক মা কোথাও একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলুন।

-এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই কখনোই।

আমি দীপন ভাইয়ের বাবার মতো বলব না 'বিচার চাই না', বরং বিচার বকেয়া থাকুক। মুক্তিযুদ্ধের হত্যার বিচার যদি হয়ে থাকে, কোনো একদিন আমার খুনেরও বিচার করবে আমাদের উত্তরসূরীরা।

আমাদের প্রজন্মের রক্তে যদি এই দেশ ধুয়ে দিয়ে যেতে হয়, আমরা ধুয়ে দিয়ে যাব।

সেই রক্তধোয়া মাটিতে পরের প্রজন্ম হাসিমুখে বাড়ি ফিরবে, আততায়ীর ভয়ে পিছু ফিরে তাকাবে না-শেষবেলা এই বোধ নিয়ে আমি আনন্দের সঙ্গে মরে যাব।

তবে যতদিন বেঁচে থাকব, সাহসী মানুষদের কাতারে দাঁড়িয়ে থাকব।

ছারপোকার জীবন অস্বীকার করে বেঁচে থাকব।

আমাদেরকে যে কেউ খুন করতে পারবে, কিন্তু কেউ আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।"

উল্লেখ্য, নৃশংস জোড়া হামলা চালিয়ে রাজধানীতে শনিবার (৩১ অক্টোবর) জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে এবং শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল, রণদীপম বসু ও তারেক রহিমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে জঙ্গি মৌলবাদীরা। হামলায় আহতরা এজন্যে জঙ্গি মৌলবাদীদের দায়ি করেছেন এবং আনসার আল ইসলাম নামের এক জঙ্গি সংগঠন এর দায় স্বীকার করেছে।

বেলা আড়াইটার দিকে লালমাটিয়ায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়। সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আহমেদুর রশীদ টুটুলসহ তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যখন চিকিৎসা চলছিল, তখন জানা যায় শাহবাগে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটে আরেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফয়সাল আরেফিন দীপন। প্রাণ হারান দীপন।

দুটি ক্ষেত্রেই হামলার পর কার্যালয়ের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে যায় জঙ্গি মৌলবাদীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত