রেজা ঘটক

০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১৫:৪০

বাবা’র মৃত্যুবার্ষিকী, স্বৈরাচার পতন দিবস ও একটি ব্যক্তিগত মূল্যায়ন

ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেও ঘুম হলো না। শরীরটাও ভালো নেই। আজ (৬ ডিসেম্বর) আমার বাবা'র ঊনিশতম মৃত্যুবার্ষিকী। বারবার বাবা'র কথা মনে পড়ছে। বাবা'র সঙ্গে আমার কত সহস্র স্মৃতি! সেসব পুরনো দিনগুলি'র কথা বারবার মনে পড়ছে। এখনো বিশ্বাস হয় না মাঝখানে ১৯টি বছর নেই। নেই মানে, একেবারে নেই। অথচ মনে হয়, এইতো সেদিনের একদম টাটকা ঘটনা। বাবার সঙ্গে গল্প করছি। চোখ খুললেই বাবাকে হয়তো দেখতে পাব!

আমার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। একেবারে বাংলার খাঁটি কৃষক। এই মাটির ভূমিপুত্র কৃষক। বাংলাদেশের একজন কৃষক পিতার সন্তান হিসেবে নিজে খুবই গর্ববোধ করি। বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কেবল একজন কৃষকই সারাজীবন সৎভাবে জীবনযাপন করতে জানেন। আমার বাবাও বাংলার লাখো কৃষকের মত সারাজীবন সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন। এটাই আমার গর্বের বিষয়।

আমাদের যতটুকু জমিজমা ছিল, তা দিয়ে আমাদের সংসার বেশ ভালোভাবেই চলত। আমরা নয়টা ভাইবোন। আমাদের পড়াশুনার পেছনেই বাবা জমি বিক্রি করে, জমির ফসল বিক্রি করে, আমাদের পড়াশুনার খরচ যুগিয়েছেন। যে কারণে আমাদের সবার যখন পড়াশুনা শেষ, বলতে গেলে তখন আমরা এক সর্বস্বান্ত ভূমিহীন কৃষক পরিবারে রূপান্তরিত হয়েছি। বাস্তবে যা দেখেছি, তাই লিখছি।

আমরা পাঁচ ভাই চার বোন। বাংলাদেশের বর্তমান সমাজ ও রাষ্ট্রীয় বাস্তবতায়, যদি আমরা পড়াশুনার পেছনে না ছুটতাম, অথবা যদি আমার বাবা আমাদের পড়াশুনার পেছনে না তাড়িয়ে রাজনীতির পেছনে ছোটাতেন। যেনতেন হাইস্কুল-কলেজ মাড়িয়ে আমরা পাঁচ ভাই রাজনীতির পেছনে ছুটতাম, তাহলে আমাদের পাঁচ ভাইয়ের দাপটে বাংলাদেশ কাঁপত। সেখানে হয়তো ঝুঁকি কিছুটা থাকত। হয়তো দুই-একটা ভাই রাজনীতির বলি হতাম, কিন্তু বাকিরা এখন বাংলাদেশের বাস্তবতায় কোটিপতি-লাখোপতি থাকত।

কলেজ জীবনেই যদি ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের হয়ে হাতে পিস্তল তুলে নিতাম, আর যদি ভাগ্যগুণে বেঁচে যেতাম, তাহলে এতদিনে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে হাসিনা-খালেদাদের হয়তো আমাদের কোনো ভাইকেও মন্ত্রী বা এমপি বানাতে হতো। বানাতে হতো না বলে বলতে চাই, বানাতে তাঁরা বাধ্য থাকতেন। কারণ, বাংলাদেশে আমার পঁয়তাল্লিশ বছরের জীবনে যা কিছু দেখলাম, সেই ইতিহাস, সেই সাক্ষ্যই দেয়। আমরা ছোটবেলা থেকেই যদি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বড় হতাম, আমাদেরও মূল্যায়ন করতে হাসিনা-খালেদারা বাধ্য হতেন। নিজের দেখা চোখকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারি না। ক্ষমতার দাপট দেখাতে গেলে একটা দুইটা ভাই হয়তো রাজনৈতিক বলি হতাম! কিন্তু বাকিরা? বাকিরা ঠিকই দলের আনুগত্যে হোক, কিংবা চক্ষুলজ্বায় হোক, ঠিকই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখন টিকে যেতাম। এটুকু তো সত্য অন্তত পাঁচটা ভাইয়ের সবাইকে মারাটা অতোটা সহজ কাজ হতো না!! সেই সুযোগে ক্ষমতার দাপটেই আমরাও এখন কোটিপতি থাকতাম।

আমার বাবা আমাদের রাজনীতিতে জড়াতে দেয়নি। আমরাও নিজেদের ইচ্ছায় এই নোংরা রাজনীতিতে জড়াইনি। ফলাফল কী হলো? বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর নষ্ট ভ্রষ্টদের ক্ষমতার দাপটের কাছে আমরা একেএকে সবকিছুই হারালাম। আমরা কেবল লেখাপড়া শিখলাম। লেখাপড়া শিখে বাংলাদেশ কী হয়? এককথায় জবাব হলো- কিচ্ছুই হয় না। বাংলাদেশে সাধারণ বিষয়ে লেখাপড়া শেখাটাই এখন পাপ। বরং কোনো একটা টেকনিক্যাল বিষয়ে হাইস্কুল থেকেই প্রশিক্ষণ নিলে এখন অন্তত সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে জীবন বাঁচানো যেত। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, লোকবল, মামার টেলিফোনের ক্ষমতা, রাজনৈতিক বংশ, বংশে একজন মন্ত্রী, চাচা সচিব, বা রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিতে জড়ানো ছাত্ররাজনীতির দাপটের মত কোনো একটা লিংক না থাকলে বাংলাদেশে তাদের মত দুঃখি আর কেউ নেই। লেখাপড়া ধুয়ে বাকি জীবন জল খেলেও পেটের ক্ষুধা তাতে মিটবে না।

এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আমার নিজের শিক্ষা জীবনের মূল্যবান চারটি বছর এই রাষ্ট্র খেয়ে ফেলেছে। আরো সহজ করে বললে বলতে হয়, হাসিনা-খালেদারা খেয়ে ফেলেছে। চার বছরের সেশনটজট কাটিয়ে অর্থনীতি শাস্ত্রে মাস্টার্স করার পর, তিনবার বিসিএস ভাইবা থেকে আমাকে হটিয়ে দিল কারা? হাসিনা-খালেদারা। ১৭শ বিসিএস খালেদা জিয়া গিলে ফেললেন। ১৮শ বিসিএস খালেদা-হাসিনা ভাগাভাগি করে খেলেন। ২০তম বিসিএস হাসিনা একাই গিললেন। আমার তখন ছাত্রদল বা ছাত্রলীগ করার পরিচয় ছিল না। তাই আমার বিসিএস হয়নি। ২০তম বিসিএস শেষেই সরকারি চাকরির বয়স ফুরিয়ে গেল। ২০তম বিসিএস নিয়ে আমরা রাস্তায় আন্দোলনও করেছি। 'মোস্তফা চৌধুরীর চামড়া তুলে নিব আমরা'। এই ছিল আমাদের শ্লোগান। কিচ্ছু হয়নি। আমরা প্রেসক্লাবে একদিন সমাবেশ করি। হাসিনার পুলিশ আমাদের তাড়িয়ে দেয়। পরদিন আমরা শহীদ মিনারে সমাবেশ করি। সেখান থেকেও পুলিশে তাড়িয়ে দেয়।

এভাবে বেশকিছু দিন পুলিশের তাড়া খেয়ে আমরা যখন ক্লান্ত, তখন খালেদা জিয়া আমানউল্লাহ আমানকে পাঠালেন আমাদের ডেকে নিতে। আমাদের ২৯ মিন্টু রোডে ডেকে কথা বললেন। বললেন, তোমরা কয়েকজন মিলে আদালতে মামলা ঠুকে দাও। আমরা আইনি সহায়তা দেব। আমরা যারা নিরীহ ছাত্র, তাদেরকেই টার্গেট করেছিলেন খালেদা জিয়া। আমাদের মামলায় বাদী হতে বললেন। বললেন, এখন মামলা চলুক। আমরা ক্ষমতায় গেলে ২০তম বিসিএস বাতিল করে তোমাদের রিক্রুট করব। নইলে নতুন করে আবার পরীক্ষা হবে। সেকথা আমাদের পছন্দ হয়নি। আমরা সেদিন থেকেই প্রেসক্লাব বা শহীদ মিনারে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। কারণ আমরা ছাত্রদল করি না, ছাত্রলীগও করি না। খামাখা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাব কোন সাহসে!

১৭, ১৮ ও ২০তম বিসিএস এর রেজাল্ট জালিয়াতি বাংলাদেশে স্বৈরাচার এরশাদ পতনের পর গণতান্ত্রিক দুই সরকারের দিনদুপুরের ডাকাতির মত ঘটনা। আমার অনেক বন্ধু ১৭, ১৮ ও ২০তম বিসিএস-এ চাকরি পেয়েছে। কারণ তারা হয় ছাত্রদল, না হয় ছাত্রলীগ না হয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ইচ্ছে করলে আমিও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক পিতার নামে একটা সার্টিফিকেট যোগাড় করে বিসিএস ভাগিয়ে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি সেই পথে হাঁটিনি। কারণ আমার বাবা আমাকে সেই পথে হাঁটার জন্য এত কষ্ট করে মাস্টার্স পাস করাননি। নিজের যোগ্যতা থাকলে পাব, নইলে পাব না, এমন নীতিতে বাবা'র মত আমিও অটল ছিলাম। কিন্তু চোখের সামনে কী দেখলাম, যারা বিসিএস প্রিলিমিনারি পাস করেনি, তারাই বিসিএস ক্যাডার হয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে। কারণ দেশটার নাম বাংলাদেশ।

আমি তখন ঢাকায় চলতাম বিসিএস গাইড বই লিখে। বাজারে তখন আমার ১৩টা বিসিএস গাইড বই ছিল। প্রিলিমিনারি গাইড, বিভিন্ন বিষয়ের লিখিত গাইড। ভাইভা গাইড। আমার বন্ধুরা আমার লেখা বিসিএস গাইড পড়ে ক্যাডার হয়েছে। আর আমি রমাকান্তকামার। উল্টালেও যা, পাল্টালেও তা। তুমি যদি সচিবের মেয়ে হও, তোমার জন্য বিসিএস ভাইভা বোর্ডে প্রশ্ন হবে- কয়েকটা শাড়ির নাম বল? তুমি যদি ছাত্রদলের নেতা হও, তোমার জন্য প্রশ্ন হলো- বলতো বাংলাদেশে খাল কেটে কে প্রথম সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন? বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম কে দিয়েছিলেন? আর তুমি যদি ছাত্রলীগের নেতা হও, তোমার জন্য প্রশ্ন হলো- বলতো স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি কে? বা আমাদের জাতির জনক কে? আর যদি তোমার ছাত্রজীবন ছাত্রদল বা ছাত্রলীগের বাইরে কাটে, বা তোমার বাপচাচা কেউ সচিব না হয়, তাহলে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে তোমার ভেড়েণ্ডা ভেজে ছেড়ে দেবে আমাদের সরকারি পাবলিক সার্ভিস কমিশন।

১৭শ বিসিএস-এর ভাইভায় আমি পড়েছিলাম আমাদের প্রাক্তন ভিসি এএসএম ফায়েজ স্যারের বোর্ডে। আমি কেন বিসিএস প্রশাসন প্রথম পছন্দ দিয়েছি, সেজন্য ফায়েজ স্যার প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি তো অর্থনীতির ছাত্র, প্রশাসন কীভাবে চালাবে? আমার দ্বিতীয় পছন্দ ছিল বিসিএস পুলিশ। স্যার প্রশ্ন করলেন- তুমি কী ঘুষ খাবার জন্য পুলিশ দ্বিতীয় পছন্দ দিয়েছ? আমার তৃতীয় পছন্দ ছিল বিসিএস কর। স্যার প্রশ্ন করলেন- তোমার পছন্দের সিরিয়ালের ভেতর একটা কিন্তু আছে! আজ পর্যন্ত ফায়েজ স্যার সেই কিন্তু'র কোনো ব্যাখ্যা দেননি। কিন্তু চোখের সামনে অনেক কিন্তু'র জবাব মিলতে দেখেছি।

১৮শ বিসিএস-এ আবারো আমার ভাইভা বোর্ডে পিএসসির চেয়ারম্যান। এবার মোস্তফা চৌধুরী স্যার। এবার প্রথম প্রশ্ন- তুমি কেন পুলিশ প্রথম পছন্দ দিছ? বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর দুনিয়ার যুক্তি দিয়েও চৌধুরী স্যারের মন যে গলেনি, সেটা ভাইভা শেষেই টের পেয়েছিলাম। ২০তম বিসিএস-এর আমার ভাইভা বোর্ডে পড়লেন জনাব গোলাম রসুল স্যার। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারক। গোটা কমিশনে কেবল গোলাম রসুল স্যারের জন্য একজন গানম্যান। আমার সিরিয়াল একেবারে শেষে, আমি লাস্টম্যান। আমার সরকারি চাকরির মেয়াদ ২০তম তে শেষ হবে। যে কারণে একটা ক্যাডার ভাগানোর জন্য সেবার লাস্ট চাঞ্চ হিসেবে আমি প্রথম পছন্দ দিয়েছিলাম বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা।

দুপুরে কমিশনের ক্যান্টিনে গোলাম রসুল স্যারের গানম্যানকে পেলাম। দু-এক কথায় তার লগে খাতির পাতালাম। দুজনে মিলে গরম গরম সিঙ্গারা খেলাম। আর গল্পোচ্ছলে স্যারের মেজাজ মর্জি কেমন তা একটু খুটিয়ে খুটিয়ে জেনে নিলাম গানম্যান থেকে। এত সুন্দর সুন্দর ক্যাডার থাকতে আমি কেন বিসিএস পরিবার পরিকল্পনা প্রথম পছন্দ দিলাম, গোলাম রসুল স্যার প্রশ্ন শুরু করলেন সেখান থেকেই। আমিও জবাব শুরু করলাম আমার মত। আমি বলতে চাইলাম, বাংলাদেশে জনসংখ্যার লাগামহীন বৃদ্ধিই এক নম্বর সমস্যা। যার আমি নিজেও একজন ভুক্তভোগী। মহামতি ম্যালথাসরা অনেকগুলো ভাইবোন ছিলেন। যে কারণে তিনি জনসংখ্যা থিউরি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। কারণ খুব গরিব পরিবারে ম্যালথাসের জন্ম। জনসংখ্যার চাপ কিভাবে পরিবারকেও দরিদ্র করতে বাধ্য করে, তা মনে হয় ম্যালথাসের চেয়ে আর কেউ ভালো জানতেন না। এক পর্যায়ে গোলাম রসুল স্যার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজে কিভাবে ভুক্তভোগী? জবাবে বললাম, স্যার, আমরা নয়টা ভাইবোন। সারা বছর নতুন জামাকাপড় পাই না। স্কুল জীবনে কখনো পায়ে স্যান্ডেল পড়িনি। খালি পায়ে স্কুল করেছি। বড় ভাইয়ের শার্ট পড়ে পরীক্ষা দিয়েছি। আমরা ভাইবোন কম হলে, আমাদের যতটুকু সম্পদ, তা দিয়ে আরো ভালো ভাবে চলা সম্ভব হতো। আমার জবাবে গোলাম রসুল স্যারকে বুঝলাম খুব খুশি হয়েছেন। এবার পাশে বসা সাইকোলজি'র স্যার জিজ্ঞেস করলেন- আচ্ছা, তুমি যে এতক্ষণ জনসংখ্যা কমানোর যত যুক্তি দিলা, তোমার মা-বাবা যদি ফ্যামিলি প্লানিং পালন করতেন, তাহলে তোমার জন্ম হতো কীভাবে?

আমি স্যারের দিকে তাকিয়ে বললাম, স্যার, আমি ডারউইনের বিবর্তনবাদেও বিশ্বাস করি। যোগ্যতমরাই পৃথিবীতে টিকে থাকবে। অযোগ্যরা ঝড়ে যাবে। আমার জন্ম যেখানেই হোক না কেন, আমি এই নিয়ে তিনবার বিসিএস ভাইভা ফেস করছি। তার মানে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার যোগ্যতা আমার আছে। বোর্ডের তৃতীয় স্যার আমার বলার ধরন দেখে কিছু একটা আন্দাজ করেছিলেন। কারণ আমার ডানহাত তখন প‌্যান্টের পকেটে। যেহেতু ওটা ছিল আমার শেষ বিসিএস ভাইভা। আগের দুইবার আমাকে রাজনৈতিক কারণে বলি হতে হয়েছে। এবার আমাকে বোর্ড থেকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করা হলেই আমি শক্তি প্রয়োগ করার প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি পকেটে করে কাঁচের পেপারওয়েট নিয়েগিয়েছিলাম। যদি মোস্তফা চৌধুরীর বোর্ডে আমি পড়ি, আর আমাকে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করা হয়, পকেট থেকে আমি কাঁচের পেপারওয়েট একেবারে তার মাথায় ছুড়ে মারার প্রস্তুতি নিয়েগিয়েলাম। মোস্তফা চৌধুরীর ভাগ্য ভালো, আমার বোর্ড পড়েছিল গোলাম রসুল স্যারের বোর্ডে। আর সেখানে আবার দরজায় স্যারের লগে একজন সাক্ষাৎ গানম্যান। কী করব বুঝতাছি না। কিন্তু আমার পকেটে ঠিকই হাত চলে গিয়েছিল। কারণ, সারাদিন আমি অন্য চৌদ্দজনের ভাইভা'র সময় কাউন্ট করেছিলাম। অন্যদের বিশ-পঁচিশ মিনিটে ছেড়ে দিয়েছে। আমার চল্লিশ মিনিট গড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ বিকেল। কিছু একটা করার মত মনের অবস্থা তখন আমার। অনেক কষ্টে নিজের রাগ পুষে রেখেছি। তখন বোর্ডের তৃতীয় স্যার আমাকে একটা প্রশ্ন করলেন- আচ্ছা, শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির দেশ কী পৃথিবীতে আছে? থাকলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বল? আমার ডানহাতে পেপারওয়েট মুঠি করে ধরা। ধীরে ধীরে পেপারওয়েট পকেটের ভেতরে ছেড়ে দিয়ে আমি হালকা মেজাজেই স্যারের প্রশ্নের সুন্দর করে গুছিয়ে জবাব দিলাম। আমাকে ৪৯ মিনিট রাখা হয়েছিল ২০তম বিসিএস-এর ভাইভা বোর্ডে। আমার বিসিএস হয়নি।

ঠিক তিন দিন পরে ছিল আমার বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাইভা। আমার যে বোর্ডে ভাইভা সেই বোর্ডের সভাপতি তখনকার ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহীম খালেদ। আমি ছালাম দিয়ে বসার পরেই ইব্রাহীম খালেদ সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে পাশের সোফায় তার কাছে আসা তিনজন গেস্টের সঙ্গে আলাপ করতে বসলেন। বোর্ডের বাকি তিনজন আমাকে ব্যাংকিং থেকে যত ধরনের প্রশ্ন করা যায় করলেন। চব্বিশতম মিনিটে ইব্রাহীম খালেদ মেহমানদের বিদায় করে নিজের আসনে এসে বসলেন। বসেই জিজ্ঞেস করলেন, ও কেমন করেছে? প্রশ্নটা বোর্ডের অন্য মেম্বারদের উদ্দেশ্য। তারা ইব্রাহীম খালেদকে বললেন, ও তো ২০তম বিসিএস-এ ভাইভা দিয়েছে। বিসিএস হলে নাকি ব্যাংকের চাকরি করবে না, স্যার। মাস্টার্সে ব্যাংকিং ছিল। নম্বর তেমন ভালো না। কিন্তু প্রশ্নের জবাব ভালোই করেছে। জনাব ইব্রাহীম খালেদ আমাকে বোর্ডে বসেই আমার রেজাল্ট হাতেনাতে দিয়ে দিলেন। বললেন, তোমার বিসিএস ভাইভা কেমন হয়েছে? জবাবে বললাম, ভালো হয়েছে, স্যার। তাহলে তো তোমার বিসিএস হয়ে যাবে। তোমার জায়গায় আরেকটা নতুন ছেলে বা মেয়েকে নেয়াই ভালো। কারণ তুমি তো বিসিএস হলে ব্যাংকের চাকরি করবে না। আমি তখন বারবার আমার প‌্যান্টের খালি পকেটে হাত দিচ্ছিলাম। আর পেপারওয়েটাকে খুব মিস করছিলাম তখন। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে জনাব ইব্রাহীম খালেদের যতই অবদান থাকুক, আমার ভাইভা'র সময় তিনি মেহমানদের সঙ্গে যে খাজুরে আলাপ করে শেষ সময়ে আমার রেজাল্টও মৌখিকভাবে শুনিয়ে দিলেন, এটা কোন স্পর্ধায় করতে পারেন একজন মানুষ? বাংলাদেশের কোন আইনে আছে যে, একটা ভাইভা বোর্ড চলার সময়ে সেখানে গেস্ট এলাউ করা যাবে? আর গেস্টের সামনে ভাইবা চলতে থাকবে? বাংলাদেশের ষোলকোটি মানুষ ইব্রাহীম খালেদকে যেভাবেই চিনুক না কেন, আমি চিনি একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। আমার বিসিএসও হয়নি, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিও হয়নি। তারপর আমি আমার সকল সার্টিফিকেটগুলো পুড়িয়ে সেই আগুন দিয়ে সিখারেট খেয়েছি। আর চাকরি করার ইচ্ছা মন থেকে চিরতরে তাড়িয়ে দিয়েছি।

এরশাদ-হাসিনা-খালেদারা আমার শিক্ষা জীবনের মূল্যবান চারটি বছর কী কোন দিন ফিরিয়ে দেবে? বাংলাদেশে আমার মত আরো হাজার-হাজার ছেলেমেয়ের জীবন থেকে এভাবে স্বৈরাচার পতনের নামে চার-পাঁচ বছর সেশনজটের খড়ায় গেছে শিক্ষাজীবন। আর চাকরি জীবনের প্রতিযোগিতায় নেমে দেখি সেখানে রাজনৈতিক পরিচয় অথবা মামা-খালু'র শক্তি বা টাকার গরমের দাপট অনেক বেশি। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ক্যান্টিনে সেই গানম্যানকে গরম সিঙ্গারা খাওনোর পয়সাই আমার আজ পর্যন্ত উসুল হলো না। রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল কাঠামো থেকে প্রতিযোগিতার জায়গা দখল করেছে টাকার দাপট নতুবা নষ্ট-ভ্রষ্ট রাজনৈতিক শক্তি। যে টাকা দিতে পারে তার এখন চাকরি হয়। যার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট আছে, তাদের সন্তানদের যোগ্যতা না থাকলেও চাকরি হয়। এ কোন আজব দেশরে ভাই? আমাদের মত গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরা পাঁচ-দশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে যে চাকরি নেবে, বাড়িতে ঘটিবাটি বিক্রি করলেও সেই টাকা তো আগে হতে হবে, তারপর না ঘুষ দেবার প্রস্তুতির প্রশ্ন আসে? শেষ পর্যন্ত চাকরি জীবন আমার আর হয়নি। আমি নিজেও আর সেই চেষ্টা করিনি। যা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আমার এখন পর্যন্ত আর সম্পর্কে গাঁট বাধলো না।

আমার ইচ্ছে ছিল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে, তারপর সার্টিফিকেট পোড়ানোর। বন্ধুরা পরামর্শ দিল, সার্টিফিকেট পোড়াও সমস্যা নাই, কিন্তু পুলিশের পিটুনিগুলো ফাওফাও খাইবা মনু। পিট বাঁচাইতে চাইলে প্রেসক্লাব মাড়াইও না। পরে প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে সার্টিফিকেট পোড়ানোর চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দিয়ে এক প‌্যাকেট সিখারেট নিয়ে বসে গেলাম এক রাতে। শীতকালের রাত ছিল, আগুন পোহাতে বেশ মজাই লাগছিল। মাত্র ছয়টা সিখারেট খেতে পেরেছিলাম সার্টিফিকেটের আগুনে। ব্যাস। তারপর এখনো আমি সার্টিফিকেটহীন শুধু আমার কলম নিয়েই বেঁচে আছি। বয়স এপ্রিলের ২১ তারিখে ৪৬ পূর্ণ হবে। দুই মাসের ঘরভাড়া বাকি। দোকানে কিছু সিখারেটের পয়সাও বাকি আছে। বন্ধুরাও কেউ কেউ কিছু পায়। পকেটে আছে ত্রিশ টাকা। ব্যাস, জীবন চলে যাচ্ছে। অমলটা ভুগছে, দুরন্ত ক্যান্সারে, জীবন করেনি তাকে ক্ষমা হায়। আর আমি বসবাস করছি অ্যাজমার সঙ্গে। আমার লিডার আর্নেস্টো চে গুয়েভারারও অ্যাজমা ছিল। কোনো অসুবিধা নাইকা।

এবার আসি কিছু কড়া কথায়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদকে হটিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম, বাংলাদেশ থেকে স্বৈরতন্ত্র বিদায় নিয়েছে। এবার আমরা গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে সোনার বাংলা গড়ব। আমরা খালেদা জিয়ার ১০ বছরের শাসনকাল দেখেছি। আমরা শেখ হাসিনার বারো বছরের শাসনকাল পাড়ি দিচ্ছি। মাঝখানে দুই বছর ফকরুল-মঈনুলদের শাসনকালও দেখলাম। স্বৈরাচার পতন দিবসে আজ যারা বড় বড় বুলি আওড়াবে, তাদের মুখে আমি ঝাটা মারি। কে কার চেয়ে কতটা বড় স্বৈরাচার, বরং এখন সেই বিচার-বিবেচনার বিশ্লেষনের সময় এসেছে। এরশাদের চেয়ে খালেদা জিয়া বড় স্বৈরাচার না হলে কেন তিনি ইয়াজউদ্দিন নাটক সাজাতে গিয়েছিলেন? কেন তাঁকে ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে হয়েছিল? এরশাদ-খালেদার চেয়ে আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধু'র কন্যা শেখ হাসিনা কেনবা পিছিয়ে থাকবেন? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে যিনি তরুণ প্রজন্মের হৃদয় জয় করে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এককভাবে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করলেন, তিনি ও তার দলের লোকজন মাত্র পাঁচ বছরে কী এমন করল যে, ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির মত একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করার মত পরিস্থিতি তৈরি হলো?

তাহলে প্রশ্নের পিঠে আরো অনেক প্রশ্ন আসে। ক্ষমতায় যাবার সময় জনগণের ভোটকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে নিজেদের পক্ষে টেনে ব্যালটে সিল মারাতে হয়। কিন্তু ক্ষমতায় যাবার পর আর সেই জনগণের কথা কেউ মনে রাখে না। পত্রিকায় খবর আসে অমুকের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী! কী চমৎকার কথা। প্রধানমন্ত্রী'র তো বাংলাদেশের ষোলকোটি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। এককভাবে দু'একজনের পাশে দাঁড়ালে সেটা কীভাবে পত্রিকার হেডলঅইন হয়, আমার ছোট্ট মাথায় সেই প্রশ্নের জবাব আসে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মত একটা বিশাল প্রতিষ্ঠান এককভাবে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ক্ষমতায় গিয়ে কেন তখন একটি মধ্যম সারির নেতাদের দিয়ে মন্ত্রিসভা করেছিল? আজ সেই সব মন্ত্রীরা কোথায়? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় তাদের চেহারা কী আয়নায় একবারও দেখা গেছে? দলের শীর্ষনেতাদের উপর প্রথম পাঁচ বছর খুব গ্যোসা করলেন নেত্রী। কাদের কারণে? নিজের দলের লোকদের ও সমর্থকদের প্রতি যদি এতোটা আস্থা থাকে, আর যদি সত্যি সত্যি দেশ সেবা হয়ে থাকে, তাহলে কেন ৫ জানুয়ারির মত লোক দেখানো নির্বাচন করতে হলো? তাহলে ২০০৯ থেকে ২০১৪ এই পাঁচ বছর সবাই তাহলে কী করেছিল? যে জনভোটের উপর আর কোনো আস্থা রইল না? কতোটা জনবিচ্ছিন্ন হলে একটা চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারকে মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ১৫৪ জন এমপিকে বিনা ভোটে পাস করানো লাগে? স্বৈরাচার তাহলে কী কেবল জেনারেল এরশাদ একা? নাকি খালেদা-হাসিনা দু'জনের ২৩ বছরের শাসনকালে আমরা যা যা দেখলাম, এসব মিথ্যা? আমাদেরও চুল দাঁড়িতে পাক ধরেছে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ৯০কে যদি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উত্তরণের যাত্রা হিসাবে দায়ে পরেও ধরে নেই, তাহলে এই ২৫ বছরে বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াল? ৯০ পর্যন্ত তবু বাড়িতে ঘরের বাইরে নিরাপত্তা ছিল। এখন সেই নিরাপত্তা কোথায়? এখন তো ঘরে ঢুকে, অফিসে ঢুকে কুপিয়ে গেলেও কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে না। গণতন্ত্রের নামে এই ২৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি হারিয়েছে জননিরাপত্তা। এখন বাংলাদেশের কোথাও সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বাইরে গেলে সে আর জীবিত ফেরত আসবে কিনা এই আতঙ্কে মানুষ এখন প্রতিটা মুহূর্ত কাটায়।

বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের কল্যান ও সেবা করাই যদি আপনাদের রাজনৈতিক ধর্ম হয়, দোহাই আপনাদের, আগে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেবার ব্যবস্থা করুন। বাংলাদেশে ঘরে বাইরে একটি সিঙ্গেল মানুষও জীবনের নিরাপত্তা দেখে না। এটাই এই সময়ের সবচেয়ে চূড়ান্ত সত্য কথা। আপনারা ক্ষমতার জোরে সবকিছু অস্বীকার করতে পারেন। আপনাদের যথেষ্ঠ নিরাপত্তাও রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষ আজ চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে। এটাই ২৫ বছরের স্বৈরাচারোত্তর গণতন্ত্রের আসল চিত্র। এই সত্য আপনারা গ্রেফতার করেও চাপা দিতে পারবেন না। ইতিহাসে সত্য সত্যের মত এমনিতেই প্রস্ফূটিত হয়। ছাই দিয়ে সেই সত্যের আগুনকে চাপিয়ে রাখা যায় না।

যে সোনার বাংলার এখনো আমরা স্বপ্ন দেখি, আপনারা শাসকরা সেই সত্য থেকে কয়েকশো বছর পিছিয়ে আছেন। আপনারা আপনাদের নিজেদের আখের গোছানোতে ব্যস্ত। যে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিদের বিদেশে চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে হয়, তাদের মুখে গণতন্ত্রের খোড়া যুক্তির কোকিলবুলি আর কতকাল শুনবো আমরা? ৪৪ বছর হয়ে গেছে বাংলাদেশ স্বাধীন। যে দেশের স্বাস্থ্যখাতের এখনো এই দশা। দেশের ষোলকোটি মানুষ যদি দেশের চিকিৎসা নিয়েই মরতে পারে, আপনাদের কেন বিদেশে চিকিৎসা লাগবে? কেন নিজেদের চিকিৎসা খাতের যত্ন করেন না? আম-পাবলিকের জন্য এই চিকিৎসা, আর আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় আপনাদের জন্য বিদেশের ভালো চিকিৎসা, তাই না? আবার মুখে আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, লজ্বাও করে না আপনাদের। কিউবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সেবা রপ্তানি করে। আর আমরা ৪৪ বছরে কেবল নিজেরা চুরি চামারি করে বিদেশে নিজেদের চিকিৎসার পয়সা যোগাড়ের ধান্ধায় কাটিয়েছি, এই সত্য কোন একটা জনসভায় সৎ সাহস নিয়ে উচ্চারণ করুন আগে। তারপর মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন। স্বৈরাচার পতন দিবসে তো সবার চেহারাই আয়নায় একইরকম দেখতে পাচ্ছি। কে কোনজন ঠাওর করতে ভারি কষ্ট হচ্ছে। টাকার অভাবে চোখের ডাক্তার দেখাব, সেই মুরদ নেই যে!

৯০-এর সেই স্বৈরাচার এখন কোথায়? আমার-আমাদের ট্যাক্সের পয়সায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়ে তিনি বসে আছেন। আহা মরি মরি। তাহলে আমার শিক্ষা জীবনের চারটি বছর এখন কে ফিরিয়ে দেবে? কৈফিয়ত চাই। আমি আমার মৃত্যু পর্যন্ত এই চারটি বছরের কৈফিয়ত চেয়ে যাব আমার এই সোনার বাংলায়। আমাকে মেরে ফেলা সম্ভব। গ্রেফতার করাও সম্ভব। কিন্তু আমার কলম বন্ধ করা যাবে না। যাবে না। যাবে না।

জয় বাংলা।

রেজা ঘটক: সাহিত্যিক, নির্মাতা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত