আজহার উদ্দিন শিমুল

২০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২১:১০

অঞ্জন রায়কে বারবার হত্যার হুমকি কেন?

জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক অঞ্জন রায়কে মুঠোফোনে তিনবার কল করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর পূর্বেও তাঁকে বারবার হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বারবার হুমকি দেওয়ার কারণ কী?

কারণ একটাই বলে আমি মনে করি- তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত। অঞ্জন রায়কে আমি সামাজিক যোগাযোগ ও টিভির বদৌলতে চিনি।

অঞ্জন রায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কথা বলেন আর এ জন্য তাঁকে প্রতি মাসে মাসে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। অঞ্জন রায়ের বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অঞ্জন রায়কে সর্বশেষ হত্যার হুমকি দেওয়ার কারণ হচ্ছে - পাকিস্তানি ১৯৫জন সেনা কর্মকর্তার বিচারের আয়োজন করায়! শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) হুমকি দেওয়া হয়েছে রাত ৯.০১ থেকে ৯.০৬ মিনিটের মধ্যে তিনবার কল দিয়ে। কল ডুরেশন এর সময় সীমা হচ্ছে যথাক্রমে ২৪ সেকেন্ড, ৩ মিনিট ও ১ মিনিট। মুঠোফোনের নম্বর +৯৯৮৪৭৮২৬(উজবেকিস্তান)।

উল্লেখ্য হত্যার হুমকি পাওয়ার পর অঞ্জন রায় শাহবাগ থানায় জিডি করেছেন। এখন আমার প্রশ্ন অঞ্জন রায়কে নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র এত তোষামোদি করছে কেন? অঞ্জন রায় কী এদেশের নাগরিক নন? বারবার থানায় গেলেও পুলিশ কোন কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। যদি অঞ্জন রায় হুমকিদাতাদের হাতে প্রাণ হারান তাহলে হত্যার দায় কে নেবে? রাষ্ট্র নেবে তো?

শুধু অঞ্জন রায় নন, এর পূর্বে শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামানকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এদেশে কেউ নিরাপদ নয়। একের পর এক ব্লগার হত্যা, বিদেশি নাগরিক হত্যা, প্রকাশক হত্যা, গির্জার ধর্মযাজক হত্যার চেষ্টা, ইসলামী চিন্তাবিদ হত্যার মত হৃদয়বিদারক কাজ এই দেশে হয়েছে। এসব হত্যা কার বা কাদের ইন্ধনে হচ্ছে? পর্দার আড়ালেই রয়ে যায় বড় ভাইয়েরা।

সবকটি হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একই ধরণের বক্তব্য শুনে বিরক্ত এদেশের ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা। ধর্মের দোহাই দিয়ে মারা হচ্ছে মানুষ। হুমায়ুন আজাদ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চলছে ননস্টপ বুদ্ধিজীবী হত্যা। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা সংগঠিত হয়েছিল। একবিংশ শতাব্দীতেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। সরকার ক'জনের বিচার করতে পেরেছে??

মৌলবাদ ও জঙ্গিদের হুমকির মুখে পড়ে অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ভারত বা জার্মানি। কিন্তু কেন? আমার এই স্বদেশ কেন নিরাপদ নয়? ৩০লক্ষ শহীদের রক্ত কি তাহলে বৃথা! এই স্বদেশ কি কখনো নিরাপদ হয়ে উঠবে না? আজ অঞ্জন রায়কে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, আগামীকাল যে আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হবে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

আমি নিজেও একজন সাংস্কৃতিক কর্মী। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আমাকেও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল গেল বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। আমি না হয় মরে গেলাম। কারণ আমি ক্ষুদ্র ও নগণ্য, আমাকে এই দেশের প্রয়োজনে হয়ত লাগবে না। কিন্তু যাদের ইতিমধ্যে হত্যা করা হয়েছে তাদের শূণ্যতা কে পূরণ করবে। যাদের কে হত্যার জন্য লম্বা লিস্ট তৈরি করা হচ্ছে প্রতিমাসে তাদের জাতি হারালে অন্ধকার থেকে কি আদৌ মুক্তি মিলবে।

প্রিয় ব্যক্তিত্ব অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী দৈনিক জনকণ্ঠের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি ও বাংলা ট্রিবিউনের নিয়মিত লেখক ফজলুল বারী ভাইয়ের সাথে গত ক'দিন আগে মুঠোফোনে আলাপ করছিলাম। একপর্যায়ে বারী ভাইকে দেশে আসার কথা বললে তিনি বলেন, 'দেশে আসতে মন বারবার চায়, কিন্তু আমার প্রিয় মাতৃভূমি তো নিরাপদ নয়। কোন আশা নিয়ে আমি স্বদেশে যাব? আমার উপর যদি চাপাতির কোপ পড়ে তাহলে আমার পরিবার কার কাছে বিচার চাইবে?'

সত্যিই আজ এই দেশ নিরাপদে নয়, চারদিকেই ভয়। দেশের লোক বা বিদেশি কেউ পূর্ণ নিরাপদে নন। এই মুহূর্তে সরকারের কী ভূমিকা রাখা উচিত? সরকার কী শুধু বলবে এই দেশে জঙ্গি নাই, জঙ্গি নাই। জঙ্গি, মৌলবাদ ও ধর্মান্ধে ভরপুর হয়ে গেছে এই দেশ। ব্লগার, লেখক-প্রকাশক, ধর্মযাজক হত্যার মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে এই দেশ নিরাপদ নয়। অঞ্জন রায়সহ সকলের নিরাপত্তা সরকারের দেওয়া উচিত। তা না হলে জাতি পুনরায় মেধাশূণ্য হয়ে পড়বে।
সবশেষে একটি কথাই বলব,
দেশে জঙ্গি নাই,
তার প্রমাণ মসজিদে বোমা হামলা।
দেশে জঙ্গি নাই,
তার প্রমাণ ধর্মের নামে মানুষ হত্যা।

আজহার উদ্দিন শিমুল : ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত