আজহার উদ্দিন শিমুল

২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ ২১:৪৯

কাব্য ক্ষমা করো আমাদের!

কিছু দিন আগে আমার এক নিবন্ধে শিক্ষকদের জাতির মেরুদণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সংস্কৃতিকর্মী প্রিয় রুমা মোদক দিদির ফেসবুক টাইমলাইনে একটি পোস্ট দেখে শিক্ষকদের সম্পর্কে আমার নতুন করে এক ধারণা জন্ম নিলো।

আমরা জাতি হিসেবে সভ্য হয়েছি, কিন্তু আমাদের চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা, মূল্যবোধ পশুর ন্যায় সমতুল্য। কিছু সংখ্যক অনুর্বর শিক্ষকদের জন্য পুরো শিক্ষক সমাজই কলঙ্কিত। একজন কোমলমতি বাচ্চাকে সজোরে চড় মারা কতটুকু নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে তা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ধরছে না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর যে কাউকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের আচার-আচরণ একবারও নিরীক্ষা করে দেখছেন না নিয়োগদাতারা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, এখানে একজন শিশু নীতি-নৈতিকতা, আচার ব্যবহার, ভদ্রতা শিখে। আর এসব শিক্ষাদান করানোর দায়িত্ব অর্পিত থাকে শিক্ষকদের উপর। কিন্তু আমাদের শিক্ষক সমাজ কী ঐসব গুণাবলী একজন ছাত্রের মধ্যে যোগ করতে পারছেন। মনে হয় না পারছেন। কারণ তারা তো সারাদিন ব্যস্ত প্রাইভেট আর কোচিং নিয়ে। একজন আদর্শবান শিক্ষক কিভাবে ছাত্রের উপর হাত তুলেন? সভ্য সমাজে ছাত্রের গায়ে হাত তোলা কতটুকু গ্রহণযোগ্য!

রুমা মোদকের ছেলে কাব্য তৃতীয় শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্র। ছোট বেলা থেকেই বা-হাতি (লেফট হ্যান্ডেড)। এটা তার নিজস্বতা। যে বা যারা বা-হাতি তারা নিত্য দিনের কাজ বা হাত দিয়েই সম্পাদন করেন। কাব্য পরীক্ষার সময় বা হাত দিয়ে খাতা নিয়েছে বলে তাকে শরীরের সব শক্তি দিয়ে চড় মেরে বসলেন ঐ পরীক্ষার হলে দায়িত্ব প্রাপ্ত শিক্ষক!

একজন শিক্ষক কি করে ঐ ধরণের নীতি বহির্ভূত কাজটি করতে পারলেন? এটা কী কোন অভিধানে লেখা আছে যে যারা বা-হাতি তাদের চড় মারতে হবে! ওইধরনের শিক্ষা কী ঐ শিক্ষক পিটিআই থেকে পেয়ে আসছেন! মনে হয় পেয়ে আসছেন! ছিঃ লজ্জা লাগছে ঐ শিক্ষকের অমানবিক আচরণ দেখে।

আমাদের দেশের একটা সাধারণ সংস্কৃতি হচ্ছে শিক্ষকদের স্যার/ম্যাডাম বলে সম্বোধন করা। কিন্তু উন্নত বিশ্বে শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকা হয়। উন্নত দেশের এই সংস্কৃতি যদি আমাদের দেশে চালু হতো তাহলে পুরো পৃথিবীই উল্টে যেত। কারণ তেলা মাথায় তৈল দেওয়া আমাদের জন্মগত অভ্যাস। সুইজারল্যান্ডে আঠার বছর বয়স পর্যন্ত কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষাই নেওয়া হয় না। তারা কি জাতি হিসেবে সভ্য হয় নি? হয়েছে। তবে আমাদের দেশের থেকে উন্নত মানসিকতায় তারা বড় হচ্ছে।

কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের কোমলমতি বাচ্চাদের ১ম শ্রেণিতে এডমিশন দেওয়ার জন্য আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একি হাল!

ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই, 'আমার ভাতিজা এহতেশাম জসিম আনন্দ। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। পরীক্ষা চলাকালীন সময় পেছনে থাকানোর অপরাধে কর্তব্যরত শিক্ষক তার খাতা ৪০ মিনিট আটকে রাখেন, শত অনুরোধ করেও তার পেপার ৪০ মিনিটের আগে দেওয়া হয় নি।'

এবার চিন্তা করুন, একজন শিক্ষক যদি কোমলমতি বাচ্চাকে ৪০ মিনিট না লিখিয়ে বসিয়ে রাখেন তাহলে ঐ নামধারী শিক্ষক কি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বি-এড ট্রেনিং থেকে। এরা নামেই শিক্ষক। ওদের মধ্যে ন্যুনতম মানবিক মূল্যবোধ নেই, এসব শিক্ষক নীতি নৈতিকতাহীন।

রুমা মোদকের ছেলে কাব্যর মত হাজারো কাব্য প্রতিদিন নামধারী শিক্ষকদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কেই মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে আবার কেউ শারীরিকভাবে। অনেক স্কুলে এখনো বেত্রাঘাত করা হয় শিক্ষার্থীদের। গ্রামের বাচ্চাদের বেশি নির্যাতন করা হয়, কারণ সেসব বাচ্চাদের মা-বাবারা অধিকাংশই অক্ষরজ্ঞানহীন। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শিক্ষকরা এখনো নির্যাতন করে যাচ্ছেন। এসব কার্যকলাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া সময়ের দাবি। মোট কথা কোমলমতি বাচ্চাদের প্রতি ভালো ও মানবিক এবং বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। কারণ ছাত্র-শিক্ষকের বন্ধনেই ক্যাম্পাস হয়ে উঠে মধুময়।

প্রিয় রুমা মোদক, আপনি থেমে থাকবেন না। আইনি ব্যবস্থা নিন। ঐসব নামধারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন, প্রতিবাদ করুন। সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থার জয় হোক। প্রতিটি শিশুর অধিকার নিশ্চিত হোক।

আজহার উদ্দিন শিমুল : ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত