লাকী আক্তার

০৫ মার্চ, ২০১৬ ১৬:০১

বশির চাচা প্রসঙ্গ : আমার কৈফিয়ত ও কিছু প্রশ্ন

ঢাকায় পাকিস্তানি নাগরিক ও তাদের সমর্থনে দেশ-বিদেশে খেলার মাঠে উপস্থিত থাকা বশির আহমেদকে (যিনি বশির চাচা নামে সমধিক পরিচিত) হেনস্তা করার অভিযোগ এনে ফেসবুকে দেওয়া নিজের পোস্টটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দুঃখপ্রকাশ করে নিজের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লাকী আক্তার।

তীব্র সমালোচনার মুখে গত শুক্রবার (৪ মার্চ) ফেসবুক থেকে নিজের পোস্ট সরিয়ে নেন লাকী। এরপর শনিবার (৫ মার্চ) "বশির চাচা প্রসঙ্গ: আমার কৈফিয়ত ও কিছু প্রশ্ন" শিরোনামে এক 'নোট' প্রকাশ করেন লাকী আক্তার।

লাকী আক্তার লিখেন, দু:খ প্রকাশ করছি তাঁদের কাছে—যাঁরা গতকাল আমার মারফত একটি সংবাদ পেয়ে তা নির্দ্বিধায় ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের কাছে দু:খ প্রকাশ করছি, যাঁরা মনে করেন—বশির চাচার সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।

তিনি আরও লিখেন, তাঁদের কাছে দু:খ প্রকাশ করছি না—যাঁরা মনে করেন, একজন পাকিস্তানি সমর্থকের সাথে অশোভন আচরণ করলেও কিছু যায় আসে না। দু:খ প্রকাশ করছি না তাঁদের কাছে—যাঁরা মনে করেন, সংবাদ মাধ্যমে বশির চাচার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়—ঐদিন তাঁর সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

লাকী আক্তারের লেখার বিস্তারিত-

"প্রথমত দু:খ প্রকাশ করছি।
দু:খ প্রকাশ করছি তাঁদের কাছে—যাঁরা গতকাল আমার মারফত একটি সংবাদ পেয়ে তা নির্দ্বিধায় ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের কাছে দু:খ প্রকাশ করছি, যাঁরা মনে করেন—বশির চাচার সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত। (পরিশিষ্টে আরও দুটি ‘দু:খ প্রকাশ’ বর্ণিত)

তাঁদের কাছে দু:খ প্রকাশ করছি না—যাঁরা মনে করেন, একজন পাকিস্তানি সমর্থকের সাথে অশোভন আচরণ করলেও কিছু যায় আসে না। দু:খ প্রকাশ করছি না তাঁদের কাছে—যাঁরা মনে করেন, সংবাদ মাধ্যমে বশির চাচার বক্তব্যের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়—ঐদিন তাঁর সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
পোস্ট মুছে ফেলার কারণ: মিডিয়াতে বশির চাচার বক্তব্যে উঠে এসেছে—তিনি সাংসদ ইলিয়াস মোল্লাহ’র বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে চান না। আর আমার দাবি ছিল ঠিক উল্টো। আপাত দৃষ্টিতে আমি ভুল করেছি। এবং পোস্টটি বহাল থাকলে ভুলের পরিণাম আরও ডাল-পালা গজাতো।

কৈফিয়ত:
অনলাইনে কোনো তথ্য নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ছবি কিংবা ভিডিও’র আশ্রয় নেয়া খুবই প্রচলিত কায়দা। কিন্তু ভিডিওতে মানুষ যতোটা আস্থা রাখে ছবিতে ততোটা নয়। তবে ছবির উৎস যদি বিশ্বাসযোগ্য হয় তবে তাতে আস্থা রাখা যায়। এছাড়াও যে সংক্রান্ত তথ্য আপনার কাছে এলো তা সম্পর্কে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতাও তথ্যের সত্যতা নিরূপনে ভূমিকা রাখে। বশির চাচা সংক্রান্ত ইস্যুতে একজন সাংসদের বিরুদ্ধে আমার উত্থাপিত অভিযোগের আগে আমি এ ধাপগুলো অনুসরণ করেছিলাম।  

১. ছবি: প্রথমে আমি ঘটনার ২টি ছবি (একটি এডিটেড—যার নিচে বশির চাচার একটি ফাইল ছবি যুক্ত) শেয়ার করি এবং পরবর্তীতে একই পোস্টে ঐ ঘটনার আরও বেশকিছু ছবি। যাঁর পোস্ট থেকে পাকিস্তানি সমর্থকের ছবিগুলো নিয়েছি (তিনিই প্রথম পোস্ট করেন) তিনি তাঁর পোস্টের বিবরণে বলেছেন, “পৃথিবীর যেখানেই পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা হয়, পাকিস্তানের প্রতিটি খেলায় যিনি উপস্হিত থাকেন সেই বসিরকে ঢাকা ১৬ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বাংলাদেশের পতাকা পরিহিত অবস্হায় বাংলাদেশ বলতে বলেন।” ভদ্রলোকের কথা যদি সত্য হয় তাহলে আমার দৃষ্টিতে অভিযোগটা দাঁড়ায়—সাংসদ বশির চাচাকে পতাকা গায়ে জড়াতে বলেছেন এবং ‘বাংলাদেশ’ উচ্চারণ করতে বলেছেন। ছবিগুলো একের পর এক চোখ বুলিয়ে আমার কাছে মনে হল, পাকিস্তানি ভদ্রলোক সাংসদের সামনে মোটেও স্বস্তিবোধ করছিলেন না। এবং একজনকে দেখা যাচ্ছে, বশির চাচার গলায় বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে দিতে। এই লেখা পোস্ট করা অবদি (12:20 pm) ঐ ছবিগুলো উক্ত ব্যক্তির ফেসবুক ওয়ালে ছিল। তাঁর পোস্টের লিংক:  

২. ছবির প্রাথমিক উৎসের বিশ্বাসযোগ্যতা: এখন প্রশ্ন হল পোস্টাদাতার বক্তব্য সত্য কিনা! যাঁর পোস্ট থেকে এই ছবিগুলো নেয়া তিনি আমার পূর্বপরিচিত নন। তাহলে কেন আমি এই উৎসের উপর আস্থা রাখলাম? কারণ, উক্ত ব্যক্তির প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তিনি সাংসদের শত্রুপক্ষের কেউ নন এবং পরিচিত কিংবা ঘনিষ্ঠ কেউ-ই হবেন। কিন্তু একজন নিকটস্থ ব্যক্তি হয়ে কেন তিনি সাংসদের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ করতে গেলেন? আদতে, কোনো পাকিস্তানি সমর্থকের গায়ে বাংলাদেশি পতাকা জড়িয়ে দেয়া এবং তাঁকে ‘বাংলাদেশ’ বলতে বলার (কিংবা বাধ্য করার) মধ্যে পোস্টদাতা কোনো অন্যায় দেখেননি বলেই সার্বিকভাবে আমার মনে হয়েছে। আর এজন্যই তিনি ছবিগুলো অবলীলায় পোস্ট করেছিলেন। সেই সাথে বলা যায়, যদি এমপি সাহেব এ ধরনের কাজ করেই থাকেন এবং ইনি এমপি সাহেবের নিকটস্থ কেউ হন তবে এতে অন্যায় দেখতে না পারারই কথা। কারণ এমপি সাহেবও বর্ণবাদী আচরণকে অপরাধ গণ্য করেন না—যা আমরা তার পূর্বের কর্মকান্ডে দেখেছি।

৩. পূর্ব-অভিজ্ঞতা: যাঁর বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ করেছি তাঁর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে প্রায় একই ক্যাটাগরির (আরও গুরুতর) একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আফ্রিকার মানুষদের নিয়ে চরম বর্ণবাদী বক্তব্য এবং মিরপুরের কালশীতে বিহারি পল্লীতে হামলা ও হতাহতের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে আমরা অবগত।

ইতোপূর্বে এই সাংসদের বর্ণবাদী মন্তব্যের প্রমাণ: [সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে আফ্রিকার কঙ্গো সফর করে এসে সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ বললেন, ‘সেখানকার কালো মানুষগুলো এখনো সভ্যতা পায়নি। আমাদের আর্মি তাদের সভ্য করার জন্য সেখানে গিয়েছে।’

গতকাল মঙ্গলবার সংসদের মিডিয়া সেন্টারে তিনি এ কথা বলেন। জাতিসংঘ কি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আফ্রিকানদের সভ্য করার জন্য কঙ্গোতে পাঠিয়েছে—এ সময় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ইলিয়াস মোল্লাহ বলেন, ‘কঙ্গোর মানুষ ১৫ দিন পর একবার গোসল করে। গোসল করার সময় সাবান মেখে গায়ে পানি দেয় না। কারণ সাবান থেকে সুগন্ধ বের হয়। আমাদের আর্মি তাদের সভ্য হতে সহযোগিতা করছে। আমি মনে করি, তারা সেই কাজটি করেই আসবে।’ ..... ইলিয়াস মোল্লাহ'র বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ফারুক খান (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির প্রতিনিধি দলের নেতা ও সাংসদ) বলেন, ‘তাঁর বক্তব্য যে বর্ণবাদী হয়ে গেছে, সেটা তিনি নিজেই বুঝতে পারেননি। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়।’] (প্রথম আলো: ৫ আগস্ট, ২০১৫

বিহারী পল্লীর ঘটানায় অভিযোগ: বিহারী পল্লীর ইস্যুতে তিনি নিজে দোষ স্বীকার করেননি এবং কোনো আদালত তা এখনো প্রমাণ হয়নি। কিন্তু ভিকটিমরা কিন্তু জোরালোভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে ঐ ঘটনার ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ হাজির করেছিলেন। যেমন যুগান্তর পত্রিকার একটি সংবাদ থেকে পাই: [রোববার ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা দিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইলিয়াস মোল্লা যাওয়ার পর তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। একই পরিবারে নিহত ৯ জনের অভিভাবক শোকার্ত ইয়াসিন আলীকে দুই লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে এক লাখ টাকা নগদ দেন ইলিয়াস মোল্লা। তখন শোকার্ত ও ক্ষুব্ধ ইয়াসিন ওই টাকার বান্ডিল ইলিয়াস মোল্লার মুখে ছুড়ে মারেন। ইয়াসিন বলতে থাকেন ‘টাকার আমার দরকার নাই। আমার সব শেষ। আমার স্ত্রী সন্তানদের ফেরত দেন।’]

অর্থাৎ, ছবিগুলো বিশ্লেষণ, ছবির সাথে পোস্টকারী ব্যক্তির লেখা বিবরণে বিশ্বাসযোগ্যতা থাকায় এবং সাংসদের পূর্বেকার কর্মকান্ডগুলো (উপরে উল্লেখিত) বিবেচনায় নিয়ে আমি ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ’র বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সমর্থক মোহাম্বমদ বশিরকে হেনস্থা করার অভিযোগ আনতে সচেষ্ট হই।  

মিডিয়ার বরাতে বশির চাচার বক্তব্য ও কিছু প্রশ্ন:
ইতোমধ্যে আমাদের একাধিক মিডিয়া মারফত জানতে পারি বশির চাচা এমপি’র বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। যদিও মিডিয়ায় বশির চাচার বরাত দিয়ে অন্য কয়েকজন বাংলাদেশী দর্শকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ উঠে এসেছে। আমি একটি মিডিয়ার (পরিবর্তন ডটকম) সংবাদ থেকে উদ্ধৃতি করছি-

আজ পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ উড়ানো যাবে না। এরপর জোর করে আমার পতাকা কেড়ে নিল।

['দেখুন, ওইদিন যা হয়েছে তা কেবলই অতীত। আমি বরং সেই ঘটনা ভুলতে চাই।'

কেন ভুলতে চাইছেন? প্রশ্নের উত্তরে বশির চাচা বলতে থাকলেন, 'দেখুন এ নিয়ে তিনবার এসেছি বাংলাদেশে। এমন ঘটনার মুখোমুখি কখনো হতে হয়নি। এশিয়া কাপের ম্যাচে সেদিন পাকিস্তানের পতাকা দিয়ে তৈরি পোশাক পড়ে মাঠে এসেছিলাম। হাতেও ছিল আমার দেশের পতাকা। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই আমার হাত থেকে সেটা দু'জন এসে জোর করে কেড়ে নিলেন। অন্যরা অবশ্য প্রতিবাদ করল। কিন্তু কাজ হয়নি।'

....... 'দেখুন আমার মনে হয় না ওই এমপি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি বরং আমার সঙ্গে ভাল আচরণ করলেন। কিন্তু দুজন যুবক আমাকে বললেন পাকিস্তানের পতাকা সরাও। আর তুমি এখান থেকে সরে যাও। আমি বললাম, কেন সরাব? বলল- যে মাঠে ভিভিআইপি কেউ আছেন, আজ পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ উড়ানো যাবে না। এরপর জোর করে আমার পতাকা কেড়ে নিল। আমি এরপর এক কোনায় চলে গেলাম। তারপরই একজন এসে বাংলাদেশের পতাকা ধরিয়ে দিল আমার হাতে। বুকে আরেকটি পতাকা জড়িয়ে দিল।']

পরিবর্তন ডট কম-এর এই সংবাদ যদি শতভাগ সত্য হয় তবে আমার ঐ স্ট্যটাসে (যা আমি ইতোমধ্যে ডিলিট করেছি) করা অভিযোগের কোনো সত্যতা থাকে না। কিন্তু সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলেও বশির চাচা নিজেও কতিপয় বাংলাদেশির বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ তুলছেন—তাঁর কাছ থেকে পাকিস্তানের পতাকা কেড়ে নেয়া।
 
দেন বলাথা- প্রাইম মিনিস্টার ইজ ইনসাইড, নো পাকিস্তানি ফ্ল্যাগ।

পরিবর্তন ডট কম-এর এই সংবাদ আমি উড়িয়ে দিতে পারছিনা কারণ বাংলাট্রিবিউন নামে আরেকটি অনলাইন পোর্টাল বশির চাচার বরাতে প্রায় একই ধরনের সংবাদ হাজির করে- [বশির আহমেদ টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “..... খেলা চলাকালে আমি সেদিন পাকিস্তানি পতাকা নিয়ে ভেতরে যেতে চেয়েছিলাম। তখন আমাকে চার/পাঁচজন এসে বললেন, ‘ইউ ডোন্ট ক্যারিড পাকিস্তানি ফ্ল্যাগ, আই সেইড হোয়াই। দেন বলাথা- প্রাইম মিনিস্টার ইজ ইনসাইড, নো পাকিস্তানি ফ্ল্যাগ।’ আফটার ম্যাচ ফিনিশ, আফটার বাংলাদেশ উইন আই ক্যারিড বাংলাদেশস ফ্ল্যাগ, অ্যান্ড হাম বোলা- বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’’]

পরিশিষ্ট:
১. ক্রিকেটের আইন মোতাবেক মাঠের মধ্যে বর্ণবাদের ঠাঁই নাই। ইলিয়াস মোল্লা একজন বর্ণবাদী এবং তিনি জানেনই না বর্ণবাদ একটি অপরাধ। কিন্তু একজন অপরাধীর বিরুদ্ধেও কোন অবান্তর অভিযোগ আনা ন্যায়সঙ্গত নয়। আর ভিকটিম নিজেই সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উড়িয়ে দেয়ায় (কিংবা অভিযোগ অস্বীকার করায়) অভিযুক্ত সাংসদের নিকট ব্যক্তিগতভাবে দু:খ প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছি। যদিও অভিযোগ উত্থাপনের জন্য যথেষ্ট রসদ সরবরাহ করতে পেরেছি বলেই এখনো মনে করি।

২. একজন দর্শককে তাঁর দেশের পতাকা নিয়ে ঢুকতে না দেয়া (বাংলাট্রিবিউন দ্রষ্টব্য) কিংবা তাঁর কাছ থেকে জাতীয় পতাকা কেড়ে নেয়ার (পরিবর্তন ডট কম দ্রষ্টব্য) মধ্য দিয়ে কি কোনো অন্যায় সংগঠিত হয়নি? আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, যাঁরা বশির চাচার স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে সাংসদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা বাতিল করে দিচ্ছেন তাঁরাই কিন্তু একই সংবাদমারফত প্রকাশিত বশির চাচারই একটি অভিযোগকে আমলে নিচ্ছেন না! সেক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যায়, আপনারা দেশের ভাবমূর্তি নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন, নাকি সাংসদের দায়মুক্তি নিয়ে? বশির চাচার কথায় সাংসদের দায়মুক্তি আদায় হয়েছে বটে, কিন্তু মিরপুর মাঠের কোনো না কোনো দর্শক কিংবা অফিসিয়ালের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ রয়েই যায়—পাকিস্তানের সমর্থকের কাছ থেকে তাঁর পতাকা কেড়ে নেয়া কিংবা তাঁকে পতাকা নিয়ে গ্যালারিতে ঢুকতে না দেয়া। এমনকি সেক্ষেত্রে গ্যালিরিতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিকে কারণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে বলেই বাংলাট্রিবিউনের কাছে বশির চাচা উল্লেখ করেছেন।

৩. কিছুদিন আগে ভারতীয় গণমাধ্যমে সুধির গৌতমকে ঘিরে যে সংবাদ প্রকাশিত হয় তাও অবশেষে বাংলাদেশি মিডিয়া কর্তৃক ভ্রান্ত ‘প্রমাণ’ হয়েছিল। সুধির বাংলাদেশের এক টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাঁকে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। তারপর রিপোর্টার উপর্যপুরি তাঁর কাছে জানতে চান, “আপনাকে ধাক্কা দেয়া হয়, কিন্তু মারা তো হয়নি?” তখন সুধিরও স্বীকার করেন যে, তাঁকে ধাক্কা দেয়া হয় কিন্তু মারা হয়নি। আবার অন্য একটি নিউজ পোর্টালে প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বলা হয়, সুধিরকে টিকা-টিপ্পনি কাটা হয় কিন্তু হামলা হয়নি। বশির চাচার সাক্ষাৎকার থেকে আমরা যে সারমর্ম উপলব্ধি করছি তার সাথে সুধিরের ঐ সাক্ষাৎকার থেকে প্রাপ্ত সারমর্মের কিছুটা সাদৃশ্য দেখতে পাই। আর সেটি হচ্ছে—বশির চাচার কাছ থেকে পাকিস্তানের পতাকা কেড়ে নেয়া হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশি পতাকা তো আর জোর করে তার গলায় জড়িয়ে দেয়া হয়নি!

৪. যারা কৃপা করে এতক্ষণ ধরে আমার লেখা পড়তে গিয়ে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করলেন তাদের কাছেও আমি দু:খ প্রকাশ করছি।

লাকী আক্তার : সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত